প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৪১ পিএম
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:০৬ পিএম
স্টেম সেল থেকে বানানো ছোট মস্তিষ্ক তৈরি করেছে অপটিক কাপ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে চোখের বিকাশের মিথস্ক্রিয়া বুঝতে সহায়তা করবে। ছবি : সেল স্টেম সেল
গবেষণাগারে স্টেম সেল থেকে জন্মানো একটি ছোট মস্তিষ্ক স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রাথমিক চোখের কাঠামো (অপটিক কাপ) তৈরি করেছে। ২০২১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা এমনটাই বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে এখন বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে।
সাধারণত ৩০ দিন বয়সি মানবভ্রূণের চোখের কাঠামো হিসেবে তৈরি হয় অপটিক কাপ এবং ৫০ দিনে তা দৃশ্যমান হয়। এর মধ্যে লেন্স ও কর্নিয়াল টিস্যুও থাকে।
আগেই বিজ্ঞানীরা স্টেম সেল থেকে আলাদাভাবে চোখের কাঠামো তৈরি করেছেন। তবে এবার ছোটো মস্তিষ্কের সঙ্গে অপটিক কাপ বিকাশের ঘটনা নতুন। এটি মস্তিষ্কের সঙ্গে চোখের মিথস্ক্রিয়া বুঝতে সহায়তা করবে। এ-সংক্রান্ত গবেষণা প্রবন্ধ ‘সেল স্টেম সেল’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণাগারে বানানো এই মস্তিষ্ক যেভাবে চোখের কাঠামো তৈরি করেছে, তা মাতৃগর্ভে মানবভ্রূণের চোখের কাঠামো তৈরি হওয়ার মতোই ঘটনা। ফলে তারা বলছেন, গবেষণার এই অবিশ্বাস্য ফলাফল একজনের চেয়ে আরেকজনের চোখের পার্থক্য ও বিকাশের প্রক্রিয়া এবং সেই সঙ্গে চোখের রোগ আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
জার্মানির ইউনিভার্সিটি হসপিটাল ডুসেলডর্ফের নিউরোসায়েন্টিস্ট জে গোপালকৃষ্ণান এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই গবেষণা ভ্রূণের বিকাশের সময় মস্তিষ্ক ও চোখের মিথস্ক্রিয়া বুঝতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে গবেষকরা রেটিনা-সংক্রান্ত জন্মগত রোগের মডেল তৈরি করতে পারবেন। ব্যক্তিবিশেষকে কেন্দ্র করে ওষুধ পরীক্ষায় সুফল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া প্রতিস্থাপন থেরাপির জন্য রোগীর নির্দিষ্ট রেটিনাল কোষের ধরন তৈরির গবেষণায় এটি কাজে লাগবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ মস্তিষ্কের অর্গানয়েডের অসামান্য ক্ষমতাকে প্রকাশ্যে আনা, যা আদিম সংবেদনশীল এবং দেহে পাওয়া কোষের মতো কাঠামো তৈরি করতে পারে।’
ছোট মস্তিষ্ক আসলে কী?
পরীক্ষাগারে বানানো মস্তিষ্কের অর্গানয়েডগুলো সত্যিকারের মস্তিষ্ক নয়। এগুলো মস্তিস্কের মতো কাজ করা ত্রিমাত্রিক কাঠামো, যা প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল থেকে বৃদ্ধি পেয়ে তৈরি হয়। এর কোনো চিন্তা, আবেগ বা চেতনা শক্তি নেই। কেবল টিস্যু সহজাতভাবে বৃদ্ধি পায়। আর এ ধরনের ছোট মস্তিষ্ক ওষুধের প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করতে এবং নির্দিষ্ট পরিবেশে কোষের বিকাশ পর্যবেক্ষণ করতে গবেষণার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় । কারণ, গবেষণা কাজে প্রকৃত জীবন্ত মস্তিষ্ক ব্যবহার করা অসম্ভব। অন্তত পক্ষে নৈতিকভাবে কঠিন।
স্টেম সেলের কোষগুলো প্রাপ্তবয়স্ক মানব শরীর থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং পরে তা রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে অন্য কোনো টিস্যুতে বৃদ্ধি করা যায়। এর আগের গবেষণায় ভ্রূণীয় স্টেম সেল অপটিক কাপ বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু এবার ছোটো মস্তিষ্ক নিজেই তৈরি করল চোখের মতো কাঠামো।
গোপালকৃষ্ণান ও তার দলের প্রত্যাশা
এবার গোপালকৃষ্ণান ও তার সহকর্মীরা চোখের বিকাশ পর্যবেক্ষণ করতে চাইছিলেন। এই কাঠামোগুলোকে সরাসরি বাড়ানোর পরিবর্তে, গোপালকৃষ্ণানের দল দেখতে চেয়েছিলÑ সেগুলো মস্তিষ্কের অর্গানয়েডের একটি সমন্বিত অংশ হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে কিনা। এটি শুধু বিচ্ছিন্নভাবে অপটিক কাঠামো বাড়ানোর পরিবর্তে কীভাবে দুই ধরনের টিস্যু একসঙ্গে বৃদ্ধি পেতে পারে, তা দেখার সুবিধা যুক্ত করবে।