প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:৩৯ পিএম
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:৫৪ পিএম
ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত
ইলন মাস্কের ব্রেইন মেশিন ইন্টারফেস (বিএমআই) কোম্পানি আগামী ছয় মাসের মধ্যে মানব মস্তিষ্কে তাদের ডিভাইস স্থাপন করতে যাচ্ছে।
প্যাসিফিক সময়ে বুধবার হয়ে যাওয়া নিউরালিংকের ‘শো অ্যান্ড টেল’ ইভেন্টে এমনটা বলেছেন মাস্ক।
তিনি জানিয়েছেন, কোম্পানিটি প্রথম মানবদেহে নিউরালিংক ডিভাইস বসাতে নিজেদের প্রস্তুত করতে কঠোর পরিশ্রম করছে। এরই মধ্যে মানুষের দেহে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) কাছে বেশিরভাগ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছে।
নিউরালিংক আপাতত দুইটি অ্যাপ্লিকেশনের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। একটি অ্যাপের মাধ্যমে যারা দেখতে পায় না, এমনকি জীবনে কোনোদিনই যারা দেখতে পাননি অর্থ্যাৎ জন্মান্ধ। তাদেরও দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার করবে অ্যাপ্লিকেশনটি।
আরেকটি অ্যাপ্লিকেশন, যারা প্যারালাইসিসের কারণে নিজের পেশীও নড়াতে পারে না। তারাও অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কম্পিউটার, মোবাইলের মতো স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবে।
ইলন মাস্ক বলেছেন, আপাতত এটি মস্তিষ্কের কিছু অংশ দিয়ে কাজ শুরু করলেও নিউরালিংকের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হলো এমন সিস্টেম তৈরি করা যা পুরো মস্তিষ্ক থেকে তথ্য নিয়ে তা কাজে রুপান্তরিত করতে পারবে।
মাস্ক বলেন, 'এটি হয়তো অলৌকিক শোনাতে পারে, আমরা নিশ্চিত যে মেরুদণ্ডের কর্ড বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এমন ব্যক্তির সম্পূর্ণ শরীরের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।'
শো অ্যান্ড টেল' ইভেন্টে একটি ডেমো মানবদেহের ওপর নিউরালিংকের রোবট ডিভাইস স্থাপন করে দেখায়।
এ ছাড়া আগেই ইমপ্ল্যান্ট হওয়া বানর পেইজা এখন নিউরালিংক ডিভাইসের মাধ্যমে লিখতেও পারে। এমন ভিডিও ফুটেজও দেখানো হয়েছে।
এই ইভেন্টটি হওয়ার কথা ছিল ৩১ অক্টোবরে, হ্যালোউইনের দিনে। পরে ইলন মাস্ক তা পিছিয়ে দিয়ে নতুন তারিখ ঘোষণা করেন ৩০ নভেম্বর।
কিন্তু গত ২৪ নভেম্বর তারিখ নিউরালিংক তার অফিসিয়াল টুইটার পেজে ১৪ সেকেন্ডের ছোট্ট একটি ভিডিও শেয়ার করে। যেই ভিডিওর ক্যাপশনে ইভেন্টের সময় দেওয়া হয় এবং ভিডিওর মধ্যে দেখা যায়, কালো একটি স্ক্রিনে একটি বার্তা ফুটে উঠছে, যেখানে দেওয়া হচ্ছে, নিউরালিংকের ইভেন্টে যোগদানের আহ্বান।
এরপরেই মূলত নিউরালিংকপ্রেমী নেটিজেনদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। অনেকেই ভেবেছিলেন, মানব মস্তিষ্কে হয়তো প্রথম ডিভাইস বসানোর কাজ এরই মধ্যে হয়ে গেছে।
এর আগে ২০২২-এর শুরুতেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য পরিচালক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক। যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত নতুন ডিভাইস ট্রায়ালের আগে ট্রায়াল ডিরেক্টর নিয়োগ করে থাকে।
ডিরেক্টরের দায়িত্ব সম্পর্কে সে সময় বলা হয়েছিল, নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিকে খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে সৃজনশীল একদল ডাক্তার ও উচ্চমানের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে ইলন মাস্ক জানিয়েছিলেন, ২০২২ সালের কোনো এক সময়ে নিউরালিংক মানবদেহে চিপ স্থাপন করবে।
২০২০-এর ইভেন্টে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এর মালিক ইলন মাস্ক জানান, ভবিষ্যতে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলা, ব্রেন ড্যামেজ, হতাশা, উদ্বেগ ও আসক্তি, এমনকি নিউরো সংক্রান্ত বহু সমস্যার সমাধান করবে নিউরালিংক।
একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ভবিষ্যতে নতুন কোনো ভাষা শেখার ক্ষেত্রে কিংবা কোনো দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে নিউরালিংক ডিভাইস মুহূর্তে তা মস্তিষ্কে আপলোড করে দেবে। এমনকি ব্রেনকে কপি করা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদী মাস্ক।
নিউরালিংক মূলত ব্রেন মেশিন ইন্টারফেস (বিএমআই) বা ব্রেন কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে। এ ধরনের প্রযুক্তিতে মানব মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি কম্পিউটারের সংযোগ করে দেওয়া হয়। ফলে শুধু মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার ব্যবহার করা সম্ভব।