প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২২ ১৭:২১ পিএম
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২২ ১৭:৩০ পিএম
অনেকেই আবার জেগে ওঠার আশায় নিজের মরদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন। ছবি: অ্যালকোর
অনেকেই মৃত্যুর পর ভবিষ্যতে আবারও পুনরুজ্জীবিত হবেন এমন আশায় তাদের দেহকে ক্রায়োপ্রিজার্ভড (বিশেষ উপায়ে সংরক্ষণ) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতো শোনালেও এটি একেবারেই বাস্তব। যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থা উচ্চ ফি'র বিনিময়ে এই সেবা সরবরাহ করছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যারিজোনার অ্যালকোর লাইফ এক্সটেনশন ফাউন্ডেশন এখন পর্যন্ত ১৯৯ জন মানুষ ও ১০০টি পোষা প্রাণীকে ক্রায়োপ্রিজার্ভড সেবা দিয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, ক্রায়োপ্রেশার (সংরক্ষণ পদ্ধতি) করা অনেকেই ক্যান্সার সহ অন্যান্য জটিল রোগে মারা গেছেন, যেসব রোগের চিকিৎসা বর্তমানে নেই। তাই বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে তারা পুনরুজ্জীবিত হওয়ার আশা নিয়েই দেহ ক্রায়োপ্রেশারে রেখেছেন।
অ্যালকোর যা করে তা হলো, তরল নাইট্রোজেনে ভরা স্টেইনলেস স্টিলের ভেতর ক্লায়েন্টের মরদেহ ও মাথা ঢুকিয়ে রাখে। যাদের পুরো দেহ ক্রায়োপ্রেশারে রাখার সামর্থ্য নেই তারা কেবল মাথাও রাখতে পারে। এতে খরচও কমে।
স্টেইনলেস স্টিলের ভেতর দেহগুলো মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কয়েক দশক পর্যন্ত অনায়াসে থাকতে পারবে। বিজ্ঞানের যেই শাখাটি এই বিষয় নিয়ে কাজ করে তাকে ক্রায়োনিক্স বলা হয়।
ক্রায়োপ্রিজার্ভডের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী থাই শিশু ম্যাথেরিন। ২০১৫ সালে মাত্র ২ বছর বয়সে ব্রেইন ক্যান্সারে মারা যায় সে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে অ্যালকোরের প্রধান নির্বাহী ম্যাক্স মোর বলেন, 'শিশুটির বাবা-মা দুইজনই ডাক্তার ছিলেন। তার (ম্যাথারিন) একাধিক অস্ত্রোপচার হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশ্যত কিছুই কাজ করেনি। পরে তারা ৯ম্যাথারিনের বাবা-মা) আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।'
বিটকয়েনের একজন অগ্রগামী ব্যক্তি হ্যাল ফিনি, যিনি স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৪ সালে মারা যান। তার দেহও ক্রায়োপ্রিজার্ভড করা হয়েছে।
একজন ব্যক্তিকে আইনত মৃত ঘোষণা করার পর ক্রায়োপ্রিজারভেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়। অ্যালকোর মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য যে প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করে তা হলো ভিট্রিফিকেশন। এতে শুরুতে শরীর থেকে রক্ত ও অন্যান্য তরল অপসারণ করা হয় এবং তার বদলে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দেয়া হয়। পরে নাইট্রোজেন গ্যাস যুক্ত স্টেইনলেস স্টিলের টিউবের ভেতর রাখা হয়।
লিন্ডা ও ফ্রেড চেম্বারলেইন ১৯৭২ সালে অ্যালকর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারা দুইজন এমন একটি সংস্থা তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যা মানুষকে জীবনে দ্বিতীয় সুযোগ দিতে পারে।
পুরো একটি দেহের জন্য সর্বনিম্ন খরচ হয় ২ লাখ ডলার এবং শুধু মাথার জন্য খরচ হয় ৮০ হাজার ডলার। নিজেদের দেহকে ক্রায়োপ্রিজারভেশনের জন্য বেছে নিয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা এরই মধ্যে ৫০০ হয়ে গেছে।
যদিও ক্রায়োনিক্স অনুশীলন কতটা নৈতিক তা নিয়ে এরই মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
অনেকেই বলছেন, একজন ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট বয়সে ক্রায়োপ্রিজারভড হন এবং তিনি একই বয়সে পুনরায় জেগে উঠবেন। কিন্তু তার চারপাশের অবস্থা কয়েক দশক পরে সম্পূর্ণ বদলে যাবে। ফলে ক্রাইয়োপ্রিজার্ভড ব্যক্তিটি সেই বিশ্বের জন্য এলিয়েনে পরিণত হবে।