ভোলা সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২২ ১০:২১ এএম
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২২ ১১:৫২ এএম
জাহিদের তৈরি টেলিস্কোপ। ছবি : প্রবা
মহাবিশ্বের গ্রহ, নক্ষত্র ও রহস্য নিয়ে জানার আগ্রহ কমবেশি সবার। মহাকাশ সম্পর্কে জানার প্রবল আগ্রহ থেকে টেলিস্কোপ বানিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় এসেছিলেন ভোলার শিক্ষিত যুবক নাজমুল আহসান জাহিদ।
কোনো ল্যাব ছাড়াই নিজের বাড়িতে বসে তিনি পাঁচটি টেলিস্কোপ বানিয়েছিলেন। এবার নতুন করে আরও ১১টি নিউটোনিয়ান টেলিস্কোপ বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জাহিদ। এ টেলিস্কোপ বানিয়েও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। বরাবর মতোই এ টেলিস্কোপ বানাতেও কারও সহযোগিতা নেননি।
তবে প্রিয় মানুষদের আগ্রহ আর উৎসাহ থেকে ভবিষ্যতে আরও আধুনিক টেলিস্কোপ তৈরি করতে চান তিনি। এজন্য সরকারি পর্যায় থেকে সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন জাহিদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোলা শহরের মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা নাজমুল আহসান জাহিদের গল্পের শুরুটা ২০১৭ সালের দিকে। মহাবিশ্বের গ্রহ-নক্ষত্র ও মহাকাশের রহস্য জানার প্রবল আগ্রহ রয়েছে তার।
ফার্মাসিস্টের চাকরির ফাঁকে প্রথমে তিনি চিন্তা করেন, কীভাবে টেলিস্কোপ তৈরি করা যায়। এজন্য ইউটিউব, অনলাইন ও বিজ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন বই সংগ্রহ করে গবেষণা শুরু করেন। একপর্যায়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে নিজের বাড়ির একটি কক্ষে শুরু করেন টেলিস্কোপ তৈরির কাজ। নির্মাণ করেন চারটি টেলিস্কোপ।
অপটিক্স, আইপিস, ফাউন্ডারস্কোপ, মাউন্ড, ডফসোনিয়ান বডি মাউন্ড, অপটিক্যাল টিউব, মিরর, প্রাইমারি-সেকেন্ডারি মিরর সেলসহ নানা যন্ত্রপাতি ও উপকরণ সংগ্রহ করে মাত্র তিন মাসে টেলিস্কোপ তৈরি করে সফলতা পান।
জাহিদের এ টেলিস্কোপ তৈরির সফলতা দেখতে ভিড় জমায় মানুষ। একাধিক গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর জাহিদের টেলিস্কোপ তৈরির আগ্রহ বেড়ে যায় বহুগুণ। এবার তিন মাসে তৈরি করেন ১১টি টেলিস্কোপ; যা দেখতে ভিড় জমাচ্ছে লোকজন।
নাজমুল আহসান জাহিদ বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ টেলিস্কোপ কিনতে অর্ডার করেন। সেসব টেলিস্কোপ মুহূর্তের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়।
এ থেকে আরও উৎসাহ পেয়ে আরও উন্নতমানের ও আধুনিক প্রযুক্তির টেলিস্কোপ তৈরিরর কথা ভাবছেন জাহিদ।
নাজমুল আহসান জাহিদ আরও জানান, টেলিস্কোপ তৈরিতে খরচ হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা। তবে বিক্রি করা হচ্ছে ৩৫-৩৮ হাজার টাকায়। প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। এজন্য আগ্রহ অনেক বেড়ে গেছে। আপাতত এটা নিয়েই কাজ করছি, ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে টেলিস্কোপ নির্মাণ করব। এ টেলিস্কোপের মাধ্যমে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ গবেষণা করতে পারবেন। দেখতে পাবেন চাঁদ, রবি, বৃহস্পতি, শনিসহ বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্র।
এদিকে ছেলের এমন সফলতায় খুশি নাজমুলের বাবা মো. নুরন্নবী। তিনি বলেন, ছেলের অনেক আগ্রহ দেখছি, তার এমন সফলতায় আমি গর্বিত। সরকার যদি তাকে সহযোগিতা করে তাহলে সে আরও এগিয়ে যাবে।
জাহিদ ও তার তৈরি টেলিস্কোপ। ছবি : প্রবা
মহাকাশ সম্পর্কে আরও বেশি বেশি গবেষণা, এর রহস্য জানতে টেলিস্কোপ বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সচেতন মহল।
জন, রাসেল উদ্দিন, সাব্বির মুন্না ও শিরিন বলেন, গ্রহ-নক্ষত্র দেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। জাহিদের টেলিস্কোপের মাধ্যমে গ্রহ-নক্ষত্র দেখছি।
এদিকে নতুন এ টেলিস্কোপের মাধ্যমে গ্রহ-নক্ষত্র দেখতে নাজমুলের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে।
সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পেলে দেশে নাজমুলের মতো এমন উদ্যোক্তা তৈরি হবে বলে মনে করছে সচেতন মহল।