গাজীপুর ও টঙ্গী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:০১ পিএম
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৩৬ পিএম
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন লাখো মুসল্লি। ছবি : আরিফুল আমিন
লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির আখেরি মোনাজাতের মধ্যেদিয়ে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মার হেদায়েত, ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। ইহকাল ও পরকালের নাজাত এবং ইসলামের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য দোয়া করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভির বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ। রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা সোয়া ১১টায় মোনাজাত শুরু হয়ে পৌনে ১২টার দিকে শেষ হয়। এটি ছিল ইজমেতার ৫৭তম আয়োজন।
আখেরি মোনাজাতে নিজের আত্মশুদ্ধি ও গুনাহ মাফ পাশাপাশি দুই হাত তুলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে সবার জন্য শান্তি প্রার্থনা করেন লাখ লাখ মুসল্লি। ২৬ মিনিটের এই মোনাজাতে সময় ‘আল্লাহুম্মা আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীর ও আশপাশের এলাকা।
আয়োজক কমিটি জানায়, ৬২টি দেশের ৭ হাজার ৮৯৮ জন প্রতিনিধিসহ আনুমানিক ৩৫ লাখ মুসল্লি ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের এই মোনাজাতে অংশ নেন।
এর আগে বাদ ফজর ঈমান, আমল, আখলাক ও আল্লাহর পথে মেহনতের মাধ্যমে মহান সৃষ্টি কর্তা পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে ইজতেমা ময়দানে হেদায়েতি বয়ান ও জিকির-আজকার অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বেই অভিন্ন কর্মসূচি ছিল। তাবলীগ জামাতের রেওয়াজ অনুসারে ইজতেমার ছয় দিন ছয় উছুলের হাকিকত, দরসে কুরআন, দরসে হাদিস, তালিম, তাশকিল, কারগুজারি, নফল নামাজ আদায় ও বিভিন্ন মাসলা-মাসায়েল শেখাসহ বিভিন্ন আমলে ও ইবাদত বন্দেগিতে মুসল্লিরা ব্যস্ত সময় কাটান।
মোনাজাতে মানুষের ঢল
আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে ফজরের নামাজের পর থেকে ইজতেমা ময়দানে মানুষের ঢল নামে। ময়দানের চারপাশের রাস্তাগুলো সকাল ৯টার পর লোকারণ্য হয়ে ওঠে। টঙ্গী-গাজীপুর, টঙ্গী-আশুলিয়া, টঙ্গী- কালীগঞ্জ সড়কজুড়ে মোনাজাতে অংশ নিতে আসা মানুষের ভিড় দেখা যায়। সবাই চেষ্টা করে প্যান্ডেলের ভেতরে বা কাছাকাছি যেতে। একটু স্থান করে নিতে। কিন্তু প্যান্ডেল পূর্ণ হয়ে যায় আগেই। ঠাঁই না পেয়ে মানুষ অবস্থান নেয় সড়কে। ইজতেমা ময়দানের চারপাশে বেশ কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাইক লাগানোর কারণে বহু মানুষ ফ্লাইওভারের নিচে মহাসড়কে পলিথিন, পুরোনো খবরের কাগজ, সিমেন্টের ব্যাগ, পাটি, হোগলা ও জায়নামাজ বিছিয়ে মোনাজাতে অংশ নেয়। এ ছাড়া মহাসড়কের দুপাশে অপেক্ষমাণ বাস, ট্রাক ও ট্রেনের ছাদে, নদীতে নৌকা ও লঞ্চে, আশপাশের বাড়ির ছাদ ও খোলা জায়গায় অবস্থান নিয়ে মোনাজাতে শামিল হয় বহু মানুষ। ইজতেমায় নারীদের অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা না থাকলেও বিপুল সংখ্যক নারী আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। রাস্তার ধারে পাটি বিছিয়ে ও কাপড় টানিয়ে অবস্থান নেন তারা। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের এই আখেরি মোনাজাতে শরিক হন অন্য ধর্মের মানুষ; তারা মোনাজাতের সময় নীরবে মহান স্রষ্টার কৃপা কামনা করে।
বাড়ি ফেরায় বিড়ম্বনা
মোনাজাতের পর শুরু হয় বাড়ি ফেরার পালা। বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেওয়া মানুষ বাড়ি ফিরতে গিয়ে যানবাহনের অভাবে বিড়ম্বনায় পড়েন। অনেকেই হেঁটে কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে যানবাহনের দেখা পান। তবে বাস, ট্রাক, পিকআপ, ভ্যান, অটোরিকশাসহ তিন চাকার হালকা যানবাহনে ভাড়া আদায় করা হয় কয়েকগুণ বেশি।
আবার স্বেচ্ছাশ্রমে মাঠের কাজ
দীর্ঘ তিন মাসে তুরাগ পাড়ে যে বিশাল প্যান্ডেল তৈরি হয়েছিল, তা ভেঙে নির্মাণসামগ্রী সংরক্ষণের কাজ শুরু করা হবে আগামী দু’এক দিনের মধ্যেই। এ জন্য ইজতেমা মাঠে অবস্থান করবেন পাঁচ শতাধিক মুসল্লির কয়েকটি জামাত। দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের সেবায় যে আয়োজন করা হয়, তাতে ব্যবহৃত হয়েছে পাঁচ শতাধিক ডেকচি, দশ হাজার তৈজষপত্র ও বিছানা। আগামীবারের জন্য এসব সংরক্ষণ করা হবে গোডাউনে। পাটের সংকটের কারণে এবারের ইজতেমায় বহু দেশি মুসল্লি নিজ উদ্যোগে সামিয়ানা তৈরি করেছেন নিজেদের টাকায় কেনা কাপড় দিয়ে। জানা যায়, অনেকেই সামিয়ানার কাপড় দান করে যাবেন এখানেই। এ ছাড়া অনেকে কাঠ, টিন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, লোহার পাইপসহ প্রয়োজনীয় নির্মণসামগ্রী দান করেছেন, যা ইজতেমার গোডাউনে সংরক্ষণ করা হবে।