শাহীন হাসনাত
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৫ ১৯:১৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
চলতি রমজান মাসের তিন ভাগের দুই ভাগ শেষ হয়ে কাল শুরু হবে শেষ ভাগ। রমজানের শেষ ১০ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে রয়েছে শবেকদর।
শবে কদর লাভের উদ্দেশ্যে রোজাদাররা মসজিদে মসজিদে ইতিকাফ শুরু করবে। রমজানের শেষ দশকের সুন্নত ইতিকাফ অত্যন্ত ফজিলতের আমল। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, নবী কারিম (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। সহিহ মুসলিম : ১১৭১
ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্যে হলো, শবেকদর অন্বেষণ। ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ করে সহস্র রজনী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও উত্তম রাত লাইলাতুল কদর তালাশ করা কর্তব্য। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে কদরের রাতে আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি। আর আপনি কি জানেন শবেকদর কী? শবেকদর হলো, এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এ রাতে ফেরেশতা ও রুহুল কুদস (হজরত জিবরাইল আ.) তাদের পালনকর্তার আদেশক্রমে প্রত্যেক মঙ্গলময় বস্তু নিয়ে (পৃথিবীতে) অবতরণ করে। (এ রাতের) আগাগোড়া শান্তি, যা ফজর হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ সুরা কদর
হাদিস শরিফে রমজানের শেষ ১০ দিনকে ‘ইতকুম মিনান নার’ বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির দশক বলা হয়েছে। তাই রমজানের প্রথম ২০ দিনের তুলনায় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) শেষের ১০ দিন বেশি ইবাদত করতেন। দিনে রোজা ও রাতে নামাজের (তারাবি, কিয়ামুল লাইল) পাশাপাশি নফল ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ করতেন।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, তখন নবী কারিম (সা.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন। সহিহ বোখারি : ১০৫৩
রমজানের শেষ দশকের সূচনা হয় ইতিকাফ দ্বারা। রমজানের পুরোপুরি রহমত ও বরকত লাভের জন্য ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণে ইতিকাফকারীরা আজ সন্ধ্যার আগেই মসজিদে চলে যাবেন। নবী কারিম (সা.) ইতিকাফ করেছেন, সাহাবায়ে কেরামও করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, এরপর তাঁর স্ত্রীরও ইতিকাফ করেছেন। Ñসহিহ বোখারি : ১৮৬৮
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান। সহিহ বোখারি : ১৯০৩
এ সময় তিনি আল্লাহর ইবাদতে মসজিদে নির্জন বাস করতেন। দুনিয়াবি সব ধরনের সম্পৃক্ততা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতেন, ইবাদতে মশগুল থাকতেন। এক কথায়, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে নবী কারিম (সা.) রমজানের শেষ দশকে বেশি ইবাদত করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্য সময়ের তুলনায় রমজানের শেষ দশকে বেশি পরিমাণে এমনভাবে সচেষ্ট থাকতেন, যা অন্য সময়ে থাকতেন না। সহিহ মুসলিম : ২৬৭৮
এ দিনগুলোতে অনেকটা নিদ্রাবিহীন রাত পার করতেন নবী কারিম (সা.)। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথম ২০ দিন নামাজ আদায় করতেন এবং ঘুমাতেন। কিন্তু শেষ ১০ দিন ঘুমাতেন না বরং পরিধেয় বস্ত্র মজবুত করে বেঁধে নামাজে মনোনিবেশ করতেন। Ñমুসনাদে আহমাদ : ৬/৬৮, ১৪৬
সারকথা হলো, রমজানের শেষ ১০ দিন নবী কারিম (সা.) অন্য সময়ের চেয়ে বেশি আমল করতেন। এ ১০ দিন সব ধরনের ইবাদত-বন্দেগি তথা নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার ও দানসদকা ইত্যাদি বেশি বেশি করতেন।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এটা করতেন রাতগুলোর সম্মানার্থে এবং লাইলাতুল কদরের সন্ধানে। কেননা লাইলাতুল কদর এমন এক রাত, যে রাতে ঈমান ও সওয়াবের আশায় কেউ নামাজ আদায় করলে, দয়াময় আল্লাহতায়ালা তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহতায়ালা সবাইকে রমজানের বরকত হাসিলের তওফিক দান করুন।