প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৫ ১৩:৩৬ পিএম
জাকাত ইসলামের মূল স্তম্ভের অন্যতম। এটি আর্থিক ইবাদত। ছবি : সংগৃহীত
ইসলামে জাকাত শুধু একটি আর্থিক দায়িত্বই নয়, এটি সমাজে সম্পদ বণ্টনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। জাকাত ইসলামের মূল স্তম্ভের অন্যতম। এটি আর্থিক ইবাদত। যারা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক, তাদের জন্য জাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক। কিন্তু কোন কোন সম্পদের উপর জাকাত ফরজ হয় সে বিষয়ে অনেকেই স্পষ্ট ধারণা রাখেন না। আজকের প্রতিবেদনে আমরা জানার চেষ্টা করব যেসব সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ এবং তা কিভাবে হিসাব করতে হয়।
যেসব সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ হয় তা তুলে ধরা হলো
১. সব ধরনের সম্পদ ও সামগ্রীর ওপর জাকাত ফরজ হয় না। শুধু সোনা-রূপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসার পণ্যে জাকাত ফরজ হয়।
২. সোনা-রুপার অলংকার সর্বদা বা কালেভদ্রে ব্যবহৃত হোক কিংবা একেবারেই ব্যবহার না করা হোক সর্বাবস্থাতেই তার জাকাত দিতে হবে। (আবু দাউদ ১/২৫৫; নাসায়ী হাদিস ২২৫৮)
৩. অলংকার ছাড়া সোনা-রুপার অন্যান্য সামগ্রীর ওপরও জাকাত ফরজ হয়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস ৭০৬১; ৭০৬৬; ৭১০২)
৪. জামা-কাপড় কিংবা অন্য কোনো সামগ্রীতে সোনা-রুপার কারুকাজ করা থাকলে তা-ও জাকাতের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং যে পরিমাণ সোনা-রূপা কারুকাজে লেগেছে অন্যান্য জাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে তারও জাকাত দিতে হবে। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক হাদিস ৭০৬৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদিস ১০৬৪৮, ১০৬৪৯, ১০৬৫১)
সোনা-রূপা ছাড়া অন্য কোনো ধাতুর অলংকার ইত্যাদির উপর জাকাত ফরজ নয়। তদ্রূপ হীরা, মণি-মুক্তা ইত্যাদি মূল্যবান পাথর ব্যবসা পণ্য না হলে সেগুলোতেও জাকাত ফরজ নয়। (কিতাবুল আছার মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৬১-৭০৬৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৪৪৭-৪৪৮)
৫. মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা নিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর স্থায়ী হলে বছর শেষে তার জাকাত আদায় করা ফরজ হয়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৯১, ৭০৯২)
তদ্রূপ ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, সার্টিফিকেট ইত্যাদিও নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপরও জাকাত ফরজ হয়।
৬. টাকা-পয়সা ব্যবসায় না খাটিয়ে এমনি রেখে দিলেও তাতে জাকাত ফরজ হয়। (আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৬২, ৩০০)
৭. হজের উদ্দেশ্যে কিংবা ঘর-বাড়ি নির্মাণ, ছেলে-মেয়ের বিয়ে-শাদি ইত্যাদি প্রয়োজনের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হচ্ছে তা-ও এর ব্যতিক্রম নয়। সঞ্চিত অর্থ পৃথকভাবে কিংবা অন্যান্য জাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ হলে এবং নিসাবের ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে জাকাত ফরজ হবে। বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তা যদি খরচ হয়ে যায় তাহলে জাকাত ফরজ হবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদিস ৭০৩২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদিস ১০৩২৫)
৮. দোকান-পাটে যা কিছু বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা থাকে তা বাণিজ্য-দ্রব্য। এর মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত আদায় করা ফরজ। (সুনানে আবু দাউদ ১/২১৮; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৪/১৫৭; মুয়াত্তা ইমাম মালেক পৃ: ১০৮)
৯. ব্যবসার নিয়তে কোনো কিছু ক্রয় করলে তা স্থাবর সম্পত্তি হোক যেমন জমিজমা, ফ্ল্যাট কিংবা অস্থাবর যেমন মুদী সামগ্রী, কাপড়চোপড়, অলংকার, নির্মাণ সামগ্রী, গাড়ি, ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, হার্ডওয়্যার সামগ্রী, বইপুস্তক ইত্যাদি, তা বাণিজ্য-দ্রব্য বলে গণ্য হবে এবং মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত দেয়া ফরজ হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদিস ৭১০৩,৭১০৪)