প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫ ১১:০২ এএম
রাসুল (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি সকাল বেলা সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তিলাওয়াত করবে। আল্লাহ ওই ব্যক্তির জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করেন; যারা উক্ত ব্যক্তির জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে।
ইসলামে কুরআনের প্রতিটি আয়াতেরই বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলত রয়েছে। তবে, সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত (আয়াত ২২-২৪) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী আয়াত হিসেবে বিবেচিত হয়। হাদিস শরিফে এসেছে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল-বিকাল এই আয়াতগুলো তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাআলা তার গুনাহ ক্ষমা করবেন এবং তাকে বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করবেন।
এ আয়াতগুলোতে আল্লাহর অসীম গুণাবলী ও মহিমা বর্ণিত হয়েছে, যা মুমিনদের হৃদয়ে তাকওয়া ও বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে। বিশেষ করে রাতের বেলা এগুলো পাঠ করা আল্লাহর নৈকট্য লাভের গুরুত্বপূর্ণ আমল হিসেবে গণ্য হয়।
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের অর্থ
অর্থ : তিনি আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। তিনি পরম করুণাময়, পরম দয়াময়। তিনিই আল্লাহ্, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনিই মালিক, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি, নিরাপত্তাবিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অহংকারের অধিকারী। ওরা যাকে শরিক করে আল্লাহ্ তার থেকে পবিত্র, মহান। তিনিই আল্লাহ্, সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, রূপদাতা, সব সুন্দর নাম তাঁরই । আকাশ ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে সমস্তই তাঁর পবিত্র মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, তত্ত্বজ্ঞানী। (সুরা হাশর, আয়াত: ২২থেকে ২৪)
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত
এই আয়াতগুলোর গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে কিছু উল্লেখযোগ্য ফজিলত তুলে ধরা হলো—
১. পাপ ক্ষমার বিশেষ সুযোগ
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এই আয়াতগুলো পাঠ করবে, সে যদি সেই রাতেই মারা যায়, তাহলে শহীদের মর্যাদা পাবে। আর যে ব্যক্তি সকালবেলায় পাঠ করবে, সে যদি ওই দিন মারা যায়, তবে শহীদের মর্যাদা লাভ করবে (হাদিস: মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি)।
২. শয়তান ও বিপদ থেকে রক্ষা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় এই আয়াতগুলো পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে সকল বিপদ-আপদ, শয়তানের কুমন্ত্রণা ও অনিষ্ট থেকে হেফাজত করবেন (হাদিস: তাফসিরে ইবনে কাসির)।
৩. ইমান মজবুত হয়। এই আয়াতগুলোতে আল্লাহর অসংখ্য গুণাবলির বর্ণনা রয়েছে, যা পাঠ করলে মানুষের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়, হৃদয়ে তাকওয়া সৃষ্টি হয় এবং অন্তরে প্রশান্তি আসে।
৪. মৃত্যুর সময় সহজতা আসে। বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি নিয়মিত এই আয়াতগুলো পাঠ করবে, তার মৃত্যুর সময় জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া সহজ হয়ে যাবে এবং তার রূহ আল্লাহর বিশেষ রহমতের মাধ্যমে তোলা হবে।
৫. আল্লাহর ৯৯টি নামের মধ্যে কিছু নাম উল্লেখ রয়েছে। এই আয়াতগুলোতে আল্লাহর ১৪টি গুণবাচক নাম রয়েছে, যা কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর ৯৯টি নামের অংশ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। এই নামগুলোর দ্বারা আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা দ্রুত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠের নিয়ম
যদিও যে কোনো সময় এই আয়াতগুলো পড়া যায়, তবে সকাল ও সন্ধ্যায় পাঠ করাই সর্বোত্তম।
কেন এই আয়াতগুলো পাঠ করা উচিত?
অতএব, সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কল্যাণকর ও বরকতময়। সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত ইসলামের এক অমূল্য রত্ন, যা মানুষের আখিরাতের মুক্তি, দুনিয়ার বিপদ-আপদ থেকে নিরাপত্তা ও ইমানকে শক্তিশালী করার এক অনন্য মাধ্যম। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত এই আয়াতগুলো পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং অন্যদেরও তা পাঠ করার প্রতি উৎসাহিত করা।