হাদিসের আলোকে রোজার ফজিলত ও শিক্ষা

ইসলাম ধর্মে রোজা কেবল উপবাস থাকার নিয়ম নয়, বরং এটি আত্মশুদ্ধি, সংযম, ধৈর্য এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অন্যতম প্রধান ইবাদত। পবিত্র কোরআনে রমজান সম্পর্কে বিশেষভাবে বলা হয়েছে। আর হাদিসে রোজার অসংখ্য ফজিলত, পুরস্কার ও রহস্য উন্মোচিত হয়েছে।  

রমজান শুধু একটি মাস নয়, এটি একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যেখানে মুসলমানরা আত্মনিয়ন্ত্রণ ও নৈতিক উন্নতির পাঠ গ্রহণ করে। হাদিসে বলা হয়েছে, যারা রোজা রাখে, তারা শুধু খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকে না, বরং তাদের রোজা তাদের জন্য জান্নাতের বিশেষ দরজা খুলে দেয় এবং গুনাহ মাফের সুযোগ করে দেয়।  

রাসুলুল্লাহ (সা.) জান্নাতের একটি বিশেষ দরজার কথা উল্লেখ করেছেন, যা শুধুমাত্র রোজাদারদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।  তিনি বলেছেন, "নিশ্চয়ই জান্নাতে ‘আর-রাইয়ান’ নামে একটি দরজা আছে, যেখানে কিয়ামতের দিন কেবল রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। যখন শেষ রোজাদার প্রবেশ করবে, তখন দরজাটি বন্ধ হয়ে যাবে এবং এরপর আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।" (সহিহ বুখারি: ১৮৯৬, সহিহ মুসলিম: ১১৫২)

রোজার অন্যতম প্রধান ফজিলত হলো, এটি পাপ মোচনের মাধ্যম। এমনকি বিগত জীবনের গুনাহও মাফ হয়ে যেতে পারে যদি কেউ ঈমান ও ইখলাসের সাথে রোজা রাখে।  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।" (সহিহ বুখারি: ৩৮, সহিহ মুসলিম: ৭৬০)

কিয়ামতের দিন প্রতিটি মানুষ তার আমলের জন্য বিচারের মুখোমুখি হবে। সে সময় রোজা এবং কুরআন একজন মুমিনের পক্ষে সুপারিশ করবে।  রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, "কিয়ামতের দিন রোজা ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘হে আল্লাহ! আমি তাকে দিনের বেলায় খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত রেখেছিলাম, তাই তার জন্য সুপারিশ করছি।’ কুরআন বলবে, ‘আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম, তাই তার জন্য সুপারিশ করছি।’ ফলে উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।" (সহিহ মুসলিম: ৮০৫)

রমজানের অন্যতম বড় নিয়ামত হলো, এই মাসে দোয়া কবুল হয়। বিশেষ করে ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া আল্লাহ সরাসরি কবুল করেন।  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, "তিন ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: রোজাদারের দোয়া, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া এবং মজলুমের দোয়া।" (তিরমিজি: ৩৫৯৮)  

রোজা শুধুমাত্র শারীরিক সংযমের শিক্ষা দেয় না, এটি আখিরাতের শাস্তি থেকে মুক্তির মাধ্যমও বটে।  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, "রোজা (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার) ঢালস্বরূপ।" (সহিহ বুখারি: ১৮৯৪, সহিহ মুসলিম: ১১৫১)

এ কারণে আমাদের উচিত, শুধু বাহ্যিকভাবে রোজা পালন না করে, বরং আত্মিকভাবে সংযম, ধৈর্য ও নৈতিক উন্নতির মাধ্যমে রমজানের প্রকৃত শিক্ষাকে নিজেদের জীবনে ধারণ করা।