নোমান সাবিত, নিউইয়র্ক
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৪ ১০:৩১ এএম
আপডেট : ০৩ মে ২০২৪ ১০:৪৬ এএম
যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলোয় বিক্ষুব্ধ প্রবাসী। ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাফেলোয় দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় চার দিন আগে বন্দুকধারী গ্রেপ্তার হলেও এখনও ভয় কাটছে না বাফেলোর প্রবাসী বাংলাদেশিদের। এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানোর জন্য প্রবাসীরা দাবি জানালেও তা বাস্তবায়ন করেনি পুলিশ বিভাগ। ফলে আতঙ্কিত অবস্থায় দিনাতিপাত করছে হাজার হাজার বাংলাদেশি।
বাফেলোর আবাসন ব্যবসায়ী আবুল বাশার জানান, গত ১০ বছরে নিউইয়র্ক সিটিসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে অর্ধলক্ষাধিক বাংলাদেশি বাফেলোয় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে। এখানে কম মূল্যে বাড়ি কিনে মেরামতের পর সেসব বাড়ি ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করছে অনেকদিন ধরে। বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যার ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি। ২৭ এপ্রিল এক বন্দুকধারীর গুলিতে আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফ ও বাবুল মিয়া নিহতের ঘটনায় কমিউনিটিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই রাতে ঘুমোতে পারছে না। সব সময় একটা ভয় কাজ করছে।
তিনি বলেন, এখানকার বাংলাদেশিদের বাড়িগুলোয় অধিকাংশ ভাড়াটে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষ। অনেক সময় তারা মাসের পর মাস ভাড়া না দিয়ে বাড়ির উল্টো বাড়ির মালিকদের নানা হুমকি প্রদর্শন করে থাকে। আমারা সব কিছু সহ্য করে দিন কাটাচ্ছি। ভাড়া আদায়ের জন্য পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায় না। এসব নিয়ে কঠিন সময় পার করছে বাফেলোর প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
আবুল বাশার জানান, বাফেলোয় প্রচুরসংখ্যক বাংলাদেশি বসবাস করলেও এখানে নেই কোনো ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি। সবাই নেতা হয়েই ব্যস্ত। কোনো অনুষ্ঠান হলে বক্তৃতা দেওয়া নিয়েই সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই একটি ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি গড়ে তুলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের আহ্বান জানান তিনি। ২৭ এপ্রিল এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফ ও কুমিল্লার বাবুল মিয়া। বাবুল মিয়া আগে সপরিবার থাকতেন ম্যারিল্যান্ডে। সম্প্রতি তিনি বাফেলোয় বাড়ি কেনেন। আর ইউসুফ গত ডিসেম্বরে স্ত্রী, দুই মেয়েসহ বাফেলোয় আসেন স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য।
২৮ এপ্রিল ডেল ও’কামিংস নামে ৩১ বছর বয়সি বন্দুকধারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাফেলো সিটি মেয়র বাইরেন ডব্লিউ ব্রাউন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাফেলোর আইনশৃঙ্খলা সুরক্ষায় তারা বদ্ধপরিকর। পুলিশ কমিশনার জোসেফ গ্রেমাগলিয়া জানান, আগের চেয়ে সেখানে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি জে কিন বলেন, ডেল ও’কামিংসের বিরুদ্ধে বাফেলো ক্রিমিনাল কোর্টে বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন। তিনি গৃহহীন। তার নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা না থাকায় মামলাগুলোর একটিতেও হাজিরা দেননি। হত্যাকাণ্ডের প্রায় একই সময়ে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ভিডিওতে তাকে দেখা গেছে।
ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি বলেন, অস্ত্রটি বেআইনিভাবে তার দখলে ছিল। দুই বাংলাদেশিকে হত্যায় সেটি ব্যবহার করা হয়েছে কি না পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
বেআইনি অস্ত্র বহনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ডেল ও’কামিংসের সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে জানিয়ে জে কিন বলেন, আর জোড়া খুনের ঘটনার দোষী সাব্যস্ত হলে আজীবন তাকে কারাগারে থাকতে হতে পারে।