নোয়াখালী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪ ১৩:০৩ পিএম
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪ ১৪:০৭ পিএম
নিহত মো. মহিন ভূঞা (বাঁয়ে) তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রুনা আক্তার। প্রবা ফটো
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে রবিবার রাতে বাংলাদেশি এক দম্পতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নিহতরা হলেন মো. মহিন ভূঞা ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রুনা আক্তার।
রবিবার (৩ মার্চ) স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে জোহানেসবার্গের জু-লিস স্ট্রিটে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দম্পতির সঙ্গে থাকা দুই শিশুসন্তান প্রাণে বেঁচে যায়।
নিহত মো. মহিন ভূঞা নোয়াখালীর সেনবাগের অর্জুনতলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মানিকপুর গ্রামের ইসলাম পাটোয়ারী বাড়ির মো. হোসেন ভূঞার ছেলে। রুনা আক্তার একই উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নেরে জমাদার বাড়ির মো.লিটনের মেয়ে।
মহিনের চাচা মো. মিলন ভূঞা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে মহিন ছিল সবার বড়। জীবিকার তাগিদে ২০ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা পাড়ি জমান তিনি।
মিলন ভূঞার ভাষ্যমতে, রবিবার বন্ধের দিন থাকায় মহিন সপরিবারে ঘুরতে বের হন। ঘুরাফেরা শেষে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফেরেন মহিন। এ সময় গেটে আগে থেকে ওতপেতে থাকা এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি মহিনকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ মহিনকে জড়িয়ে ধরে পাশে থাকা স্ত্রী রুনা। অস্ত্রধারী তাকেও গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলে দুজন প্রাণ হারান। ঘটনার সময় তাদের সঙ্গে পাঁচ ও তিন বছরের দুই কন্যাসন্তান ছিল। তারা প্রাণে বেঁচে যায়। নিহত মহিনের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এ মাসেই তার সন্তান ডেলিভারির তারিখ ছিল।
বন্দুকধারী একজন নাকি একাধিক তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিহত মহিনের আত্মীয়দের কথায় বন্দুকধারী একাধিক জন বলে মনে হয়।
মহিনের ছোট ভাই মো. মফিজ ভূঞা বলেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আমার ভাই ও অন্তঃসত্ত্বা ভাবিকে গুলি করে। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। ভাগ্যক্রমে সঙ্গে থাকা তাদের দুই সন্তান বেঁচে যায়। আমার ভাবি ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী আতাউস সালাম জানান, এমন ঘটনায় কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রবাসীদের ধারণা, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ডাকাতির কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা প্রবাসীরা আমাদের নিরাপত্তা চাই ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
অর্জুনতলা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) আব্দুর জব্বার বলেন, গ্রামের বাড়ির মসজিদের মাইকে তাদের মৃত্যু সংবাদ এলাকাবাসীকে জানানো হয়েছে। এতে গোটা এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রবিবার রাত ২টার দিকে আফ্রিকায় থাকা নিহতের দুই ছোট ভাই বিষয়টি দেশের বাড়িতে জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে পূর্ব শক্রতার জেরে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে।
অর্জুনতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন রিপন মহিন ও রুনা নিহত হওয়ার বিষয়ে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় সন্ত্রাসী ও ডাকাতের কবলে পড়ে প্রাণ হারান বাংলাদেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ মহিনের এমন বিদায় আমরা মেনে নিতে পারছি না। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবার তাদের মরদেহ দেশে ফেরত আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছে।