সাগর ও আবিরণ হত্যা
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:৪৬ পিএম
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:০০ পিএম
নিহত সাগর পাটোয়ারী ও মোসা. আবিরণ বেগম। ছবি : সংগৃহীত
সৌদি আরবে নিহত দুই বাংলাদেশি নাগরিকের পরিবার প্রায় ৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর, বিপিএম (বার) মধ্যস্থতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ ক্ষতিপূরণ আদায় সম্ভব হয়েছে।
২০০৬ সালে দাম্মামে নিহত সাগর পাটোয়ারীর পরিবারকে ৫১ লাখ সৌদি রিয়াল এবং ২০১৯ সালে রিয়াদে নিহত আবিরণ বেগমের পরিবারকে ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিপূরণের অর্থ ইতোমধ্যে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।
সাগর হত্যাকাণ্ড
কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার সাগর পাটোয়ারী ২০০৬ সালের ২৭ জুন অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে দাম্মাম শহরে নিহত হন। দীর্ঘসময় আততায়ীকে শনাক্ত করতে না পারায় যথাসময়ে মামলাটির অগ্রগতি হয়নি। ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট শ্রম কল্যাণ উইং প্রতিনিধি দাম্মাম দক্ষিণ থানায় পরিদর্শনকালে জানতে পারে, সেখানে একটি চুরির মামলায় সৌদি নাগরিক উমর আল শাম্মেরি আটক আছেন, যিনি সাগর পাটোয়ারী হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন।
থানার নথি থেকে জানা যায়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উমরকে বিবাদী করে মামলা করলে এ বিষয়ে পুনঃতদন্ত করা হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিহত সাগরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন লোকের সহযোগিতায় রাষ্ট্রদূতের দিকনির্দেশনায় শ্রম কল্যাণ উইংয়ের প্রতিনিধি বিজ্ঞ আদালতে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে অভিযোগ দাখিল করে।
বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালত ২০২১ সালের ২৪ মার্চ অভিযুক্ত উমর আল শাম্মেরির বিরুদ্ধে শিরচ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন। অভিযুক্তের পিতা অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদণ্ডের দাবি প্রত্যাহারের আপস প্রস্তাব করলে রাষ্ট্রদূতের মধ্যস্থতায় ৫১ লাখ রিয়ালের আপস প্রস্তাবে নিহত সাগর পাটোয়ারীর ওয়ারিশগণ সম্মত হয়। বিজ্ঞ আদালত অভিযুক্তের পরিবারের নিকট থেকে রক্তপণের চেক (নং-১৯৭৩৪৫৯৭) গ্রহণ করে মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেন। চলতি বছরের ৬ ডিসেম্বর দাম্মামের সৌদি ফ্রান্সি ব্যাংকের ফয়সলিয়া শাখা মারফত দূতাবাসের ব্যাংক হিসাবে ৫১ লাখ রিয়াল জমা হয়।
আবিরণ হত্যাকাণ্ড
খুলনার পাইকগাছার গৃহকর্মী মোসা. আবিরণ বেগম ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ রিয়াদের আজিজিয়ায় নিয়োগকর্তার বাসভবনে গৃহকর্ত্রী আয়েশা আহমাদ সগির আল জিজানি কর্তৃক নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানি, গৃহকর্তা বাসেম সালেম সগির ও তাদের পুত্র ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে গ্রেপ্তার করে আজিজিয়া পুলিশ।
দীর্ঘ বিচারকার্য শেষে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞ আদালতের তিন সদস্যের বিচারক বেঞ্চ প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে কেসাস (জীবনের বিনিময়ে জীবন) এবং অন্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে করাদণ্ড ও ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল অর্থদণ্ড প্রদান করে মামলার রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের হলে বিজ্ঞ আপিল আদালতের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ কেসাস বা মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পরিবার ও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে রক্তপণের বিনিময়ে আসামিকে ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ জানানো হলে নিহতের পরিবার সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে আসামিদের ক্ষমার সম্মতি প্রদান করতে রাষ্ট্রদূত বরাবর আবেদন করে। সৌদি আরবে সর্বনিম্ন রক্তপণ ৩ লাখ সৌদি রিয়াল হলেও রাষ্ট্রদূতের প্রচেষ্টায় নিহতের পরিবার ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল রক্তপণ পরিশোধের বিনিময়ে ক্ষমা করতে সম্মত হয়।
অভিযুক্তের পরিবার বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রক্তপণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে রিয়াদের ডেপুটি গভর্নর নাবিল বিন আব্দুল্লাহ আল-তাওয়িলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বিজ্ঞ বিচারক চলতি বছরের ১৫ মে প্রধান আসামির হত্যার রায় বাতিল করে আপস অনুযায়ী নিহত মোসা. আবিরণ বেগমের বৈধ ওয়ারিশগণের নামে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল ক্ষতিপূরণের চেক ইস্যু করেন এবং সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের পর তা দূতাবাসের অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর সাগর ও আবিরণ হত্যা মামলায় সৌদি আরবে কোনো বাংলাদেশির অনুকূলে আদায় হওয়া এটাই সর্বোচ্চ ব্লাডমানি। সন্তোষজনক ক্ষতিপূরণ পেয়ে নিহতের পরিবার সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মরত সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে।