সেলিম আহমেদ, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৩ পিএম
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:০৪ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
পাসপোর্টসহ যেকোনো ভুল সংশোধন করতে আগে প্রয়োজন হয় জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি)। কিন্তু সেই জাতীয় পরিচয়পত্রেও ভুল থাকলে ভোগান্তির শেষ নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনের সুযোগ থাকলেও প্রবাসে সে সুযোগটি নেই। ফলে তথ্য সংশোধন জটিলতায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ১ কোটিরও বেশি প্রবাসীকে।
তারা বলছেন, পাসপোর্ট সংশোধনের ক্ষেত্রে দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করা গেলেও জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনো তথ্য সংশোধনের সুযোগ নেই। ফলে অনেক প্রবাসীর পক্ষে পাসপোর্ট তৈরি ও সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করা সম্ভব হচ্ছে না।
ইউরোপের ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের অন্তত ২০ জন প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় পরিচয়পত্র জটিলতার কারণে তৈরি হচ্ছে নানা সমস্যা। এর মধ্যে অন্যতম সঠিক কাগজপত্র তৈরি করতে না পারায় অবৈধ হওয়া, কর্মক্ষেত্র ছাড়তে বাধ্য হওয়া ইত্যাদি। এতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা হাজারো প্রবাসী অবৈধ হয়ে নিজেদের কর্মক্ষেত্র ছাড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। আর এসব প্রবাসী অবৈধ হওয়ার কারণে কোনো কাজ করতে পারছেন না। এতে করে দেশের অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। প্রবাসীরা কাজ হারিয়ে দেশে ফেরত এলে তা দেশের রেমিট্যান্সের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে প্যারিসের বাসিন্দা আজিজুল হাকিম বলেন, ‘এনআইডি সংশোধন জটিলতায় অনেক প্রবাসী পাসপোর্ট করতে পারছেন না। ফলে তারা অবৈধ হয়ে যাচ্ছে, কর্মক্ষেত্র ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধান করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।’
আরেক প্রবাসী নাইমুর রহমান বলেন, ‘প্রবাসে বৈধ থাকার জন্য পাসপোর্ট প্রয়োজন। কিন্তু জাতীয়পত্র সংক্রান্ত জটিলতায় নির্ভুল পাসপোর্ট তৈরি করা যাচ্ছে না। এতে নানা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে।
ফ্রান্স প্রবাসী কমিউনিটি নেতা লুৎফুর রহমান বাবু বলেন, ‘নামের ও বয়সের ভুল অনেকের রয়েছে। ফ্রান্স, ইউকে ও ইউরোপসহ সব দেশের প্রবাসীরাই এ সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে না পারা প্রবাসীদের একটি গুরুতর সমস্যা। অনেকের শুধুমাত্র এর জন্যই দেশে আসতে হচ্ছে। ভুল নিজে না করে, অন্যের ভুলের জন্য হয়রানি ও জরিমানার শিকার হতে হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এনআইডির ভুলগুলো ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও মাঠপর্যায়ের কর্মীদের অদক্ষতার কারণে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সবকিছু ডিজিটাল হয়েছে। এরপরও যদি শুধুমাত্র একটি কাজ করার জন্য দেশে আসতে হয় তাহলে কীভাবে হবে? আর জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল তো আমরা করিনি। তাহলে অন্যের ভুলের মাশুল কেন আমাদের দিতে হবে? আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই যেন বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে বা মিশনগুলোতে এনআইডি সংশোধনের ব্যবস্থা করা হয়।’
এর আগে গত ১১ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে দূতাবাসের মাধ্যমে এনআইডি সংশোধনের সুযোগ চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ফ্রান্স-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম। সেখানে তারা দাবি করেন, এমন জটিলতার কারণে তৈরি হচ্ছে নানা সমস্যা। বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা হাজারো প্রবাসী অবৈধ হয়ে নিজেদের কর্মক্ষেত্র ছাড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। আর এসব প্রবাসী অবৈধ হওয়ার কারণে কোনো কাজ করতে পারছেন না। এতে করে দেশের অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। প্রবাসীরা কাজ হারিয়ে দেশে ফেরত এলে তা দেশের রেমিট্যান্সের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকষণ করা হলে ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা বলেন, ‘আমাদের ১ কোটির বেশি মানুষ দেশের বাইরে আছেন। বিভিন্ন কাজে প্রবাসীদের এনআইডি প্রয়োজন। এনআইডি সংশোধনসহ কোনো জটিলতা হলে তারা দূতাবাসগুলোকে জানিয়ে থাকেন। কিন্তু দূতাবাসগুলো থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবা দিতে হলে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার জানামতে বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। দুয়েক জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার চিন্তাভাবনা হচ্ছে। সরকার এ সিদ্ধান্ত নিলে এবং দূতাবাসগুলোতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করলে দূতাবাস থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবা দেওয়া সম্ভব।’
ফ্রান্সে বসবাসরত প্রবাসীদের কবে নাগাদ ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘শিগগির এখানে ই-পাসপোর্ট দেওয়া শুরু হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় মেশিনপত্র ইনস্টলেশন করতে হবে, তারপর ট্রায়াল রান শুরু হবে। এখানে জায়গার কিছুটা সংকট আছে। তবে আমরা দ্রুত এসব সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি।’