× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রধান চ্যালেঞ্জÑ‘দক্ষতার ঘাটতি’

প্রবা প্রতি‌বেদন

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩৭ পিএম

আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩৭ পিএম

বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রধান চ্যালেঞ্জÑ‘দক্ষতার ঘাটতি’

প্রতি বছর হাজারো বাংলাদেশি কর্মী উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমান বিদেশে। কিন্তু তাদের অনেকের স্বপ্নই রূপ নেয় না বাস্তবে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো প্রযুক্তিগত ও কারিগরি দক্ষতার অভাব, যা বাংলাদেশি শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে টিকে থাকার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।

নোয়াখালীর ৩০ বছর বয়সি যুবক রফিক সৌদি আরবে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে গিয়েছিলেন পরিবারের জন্য ভালো কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল কঠিন। প্রযুক্তিগত ও কারিগরি দক্ষতার ঘাটতি থাকায় অন্যান্য দেশের সহকর্মীদের তুলনায় অনেক কম বেতনে কাজ করতে হতো তাকে। 

রফিক বলেন, ‘একই কাজ করলেও, আমার সহকর্মীরা প্রায় আমার দ্বিগুণ বেতন পেত। আমি অধিকাংশ মেশিন পরিচালনার নিয়ম জানতাম না, যা আমার কাজের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা তৈরি করেছিল।’

বরিশালের ২৮ বছর বয়সি নারী সালমা গৃহপরিচারিকা হিসেবে মালয়েশিয়ায় কাজ করতে যান। তিনি জানান, আমি যে বাসায় কাজ করতাম সেখানে তাদের প্রত্যাশামাফিক কাজ করতে অনেক সমস্যা হতো আমার। তারা চাইতো আমি আধুনিক গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করি, কিন্তু আমি আগে কখনো এসব ব্যবহার করিনি।

প্রশিক্ষণের অভাবে প্রায়ই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়তে হতো তাকে। যেখানে উন্নত প্রশিক্ষণ থাকায় ফিলিপাইনের গৃহকর্মীরা উচ্চ বেতন পেত, সেখানে সালমা অনেক কম বেতনে কাজ করতেন। 

ঢাকার বাসিন্দা ২৬ বছর বয়সি রনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি দোকানে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিছু দিনের মধ্যেই তিনি লক্ষ্য করলেন, তার সহকর্মীরা তার তুলনায় বেশ দক্ষ। 

রনি বলেন, ‘আমার পাকিস্তান ও ভারতের সহকর্মীরা দ্রুত কাজ শেষ করে ফেলতো, তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগ, বিক্রয়, নগদ লেনদেন এবং দোকান ব্যবস্থাপনায় অনেক দক্ষ ছিল, যেখানে আমাকে সব কাজ হাতে কলমে করতে হতো।’  

বিদেশে অবস্থানরত হাজারো বাংলাদেশি কর্মীর বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তোলে এই গল্পগুলো। প্রতিবছর অসংখ্য বাংলাদেশি অভিবাসী দক্ষতার অভাবে চাকরি হারান, ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হন এবং অনেক ক্ষেত্রে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান জনশক্তি রপ্তানিকারক হলেও, দক্ষতার ঘাটতি একটি বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। অনেকে বাংলাদেশিই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না নিয়েই যাত্রা করেন বিদেশে।

দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশি অভিবাসীরা অধিক পারিশ্রমিক পেতে পারেন, যা রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াবে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার আইওএমের ২০২৪ সালের বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ও ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি কর্মীরা গড়ে প্রতি মাসে ২০৩.৩৩ ডলার আয় করেন, যেখানে ফিলিপাইনের কর্মীরা ৫৬৪.১ ডলার, ভারতীয় কর্মীরা ৩৯৫.৭১ ডলার, পাকিস্তানি কর্মীরা ২৭৫.৭৪ ডলার এবং চীনা কর্মীরা ৫৩২.৭১ ডলার আয় করেন। এছাড়াও, ৬০% বাংলাদেশি অভিবাসী স্বল্প দক্ষতার কাজ করে থাকেন, যা অন্যান্য দেশের দক্ষ কর্মীদের তুলনায় তাদের আয় কমিয়ে দেয়। দক্ষতা উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিলে বাংলাদেশের শ্রমিকদের চাকরির সুযোগ বাড়বে, যা জাতীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল অভিবাসন প্ল্যাটফর্ম ‘আমি প্রবাসী’ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। তাদের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ইতোমধ্যে সাড়ে তিন লাখের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে শুধু ২০২৪ সালেই ১ লাখের বেশি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

আমি প্রবাসী-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক ই. হক বলেন, ‘বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের অন্যতম চালিকা শক্তি হলো অভিবাসন খাত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শুধু নভেম্বর মাসেই আমরা ২.১৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছি, যা বার্ষিক ১৩.৪৭% প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যদি আমরা দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা বাড়াতে পারি, তাহলে এই আয় সহজেই দ্বিগুণ বা তারও বেশি হতে পারে। আমরা শুরু থেকেই এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি এবং অভিবাসীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করেছি।’

আমি প্রবাসী বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২৪ অনুযায়ী, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে ড্রাইভিং, কম্পিউটার অপারেশন এবং গৃহপরিচারনা ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রশিক্ষণ কোর্স। এর মধ্যে ২০২৪ সালে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ১৭,৭৯৯ জন, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ১৬,৭৩২ জন এবং গৃহকর্মীর কাজ শিখেছেন ৯,৩২৩ জন।  

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা