× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিএনপি থেকে বহিষ্কৃতদের ভাষ্য

ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত দল ধ্বংসের নামান্তর

বাছির জামাল

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪ ১৩:০১ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তকে ‘দল ধ্বংসের নামান্তর’ বলে মনে করেন ভোটে অংশ নেওয়ার কারণে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতারা। বহিষ্কৃত একাধিক নেতা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এভাবে টানা বর্জন করতে থাকলে স্থানীয় পর্যায়ে রাজনীতি করা কঠিন হয়ে যাবে, একদিন দল ধ্বংস হয়ে যাবে।’

তারা বলেন, ‘আমরা বর্জন করলেও সাধারণ কর্মীরা কোনো-না কোনোভাবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। অন্য কোথাও যুক্ত হয়ে পড়ছেন। এতে স্থানীয় পর্যায়ে দল কর্মী হারাচ্ছে।’ 

এদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা ধারণা করছেন, ‘ভোটে অংশগ্রহণকারী নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের যোগাযোগ রয়েছে। কেবল প্রার্থী নয়, যারা তাদের সঙ্গে আছে, তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না।’ 

বহিষ্কৃত নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এটা তাদের খোঁড়া যুক্তি। যারা অশুভ শক্তির সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচনে যাচ্ছেন, তারা নিজেদের আত্মপক্ষ সমর্থনে এ রকম খোঁড়া যুক্তি দিতেই পারেন। কিন্তু দলও মনে করে, এই সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। এটাই সত্য, এটাই বাস্তবতা।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ‘সরকারের পাতানো ফাঁদ’ বলে মন্তব্য করে বলেছেন, ‘সর্বশেষ ফাঁদ পেতেছেন আমাদের আজকের সরকার। এর আগে জাতীয় নির্বাচনেও ফাঁদ পেতেছিলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে। কিন্তু বিএনপি সেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে।’ তিনি বলেন, ‘যেই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না, সেই নির্বাচনের প্রয়োজন বাংলাদেশে নাই। রাজতন্ত্র কায়েম করতে পারেন, রাজতন্ত্র ঘোষণা দিতে পারেন। কিন্তু নির্বাচনের কথা আপনাদের মুখ দিয়ে মানায় না।’ 

একনজরে অংশগ্রহণ এবং বহিষ্কার

উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ১৫ এপ্রিল রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা ভোটে অংশ নেওয়া নেতাদের বহ্ষ্কিার করে বিএনপি। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে যে দেড়শ উপজেলায় ভোট হতে চলেছে, সেটিতে চেয়ারম্যান পদে অন্তত ২৮টি পরিষদে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির অনুসারীরা। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান মিলিয়ে ভোটে আছেন অন্তত ৭৯ জন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের মধ্যে গত ২৬ এপ্রিল ৭৩ জনকে, পরদিন তিনজনকে এবং সবশেষ ৩০ এপ্রিল বহিষ্কার করা হয় চারজনকে। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মেহেরপুর সদর উপজেলায় সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থী রোমানা আহমেদ। বিএনপি তখন তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে যে ১৬১টি উপজেলায় ভোট হতে যাচ্ছে, সেখানেও অংশগ্রহণকারী বিএনপির ৬১ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। 

অংশগ্রহণকারীদের যুক্তি

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তাদের যুক্তি কী? এ প্রশ্নে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ঘিওর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আবদুল মান্নান মনে করেন, ‘নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত দল ধ্বংসের নামান্তর।’ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বর্জন করে দলকে কমিউনিস্ট পার্টি বানিয়ে ফেলছি। এভাবে টানা বর্জন করতে থাকলে একদিন দল ধ্বংস হয়ে যাবে। স্থানীয় পর্যায়ে রাজনীতি করা কঠিন হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বর্জন করছি। কিন্তু সাধারণ কর্মীরা তো বসে নেই। তারা ক্ষমতাসীন দলের হয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছে। এতে স্থানীয় পর্যায়ে দল কর্মী হারাচ্ছে।’ 

একই অভিমত ব্যক্ত করেন সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী গণেন্দ্র চন্দ্র সরকার। আগেও এ পদে জিতেছেন উপজেলা শাখা বিএনপির এই সাবেক সভাপতি। বহিষ্কারাদেশ পেয়েও তিনি দমে যাননি। বরং ভোটের প্রচারে নেমে কেন্দ্রীয় নেতাদের তীব্র সমালোচনা করছেন। তার সঙ্গে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের অনেক নেতাকর্মীও প্রকাশ্যে কিংবা পরোক্ষভাবে ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন।

গণেন্দ্র বলেন, ‘আমার ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা কেন্দ্রে বসে নির্দেশনা দেন। বাস্তবে মাঠের খবর নেন না।’ তৃণমূলের কর্মীদের থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা ‘দূরে সরে যাচ্ছেন’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তারা দলকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। আমি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।’

২০১১ সালে নাটোরের নলডাঙ্গার ব্রহ্মপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে জয় পাওয়া সরদার আফজাল হোসেন এবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন কৈ মাছ প্রতীক নিয়ে। বিএনপির ভোটবর্জনে বিরক্ত নলডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাবেক এই সিনিয়র সহসভাপতি বলেন, ‘বারবার নির্বাচনে যাচ্ছে না, এই দলে থেকে লাভ কী? নির্বাচনে না গেলে আঞ্চলিক রাজনীতিতে আমরা টিকে থাকব কীভাবে?’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির লোকজন আমার সঙ্গেই থাকবে। নির্বাচনী মাঠে সবাই আমার সঙ্গে শতভাগ জয়ী হবে।’ 

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়ে উপজেলা শাখার আহ্বায়কের পদ হারানো গৌছ খানও বলেন, ‘দল জাতীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে আমার বয়স ৬০ বছর। পাঁচ বছর পর কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো অবস্থা থাকবে না। এসব বিষয় চিন্তা করা উচিত। আমরা দীর্ঘদিন ধরে জনসম্পৃক্ততার বাইরে থেকে লাভ কী হচ্ছে?’

হরিরামপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের একজন উপজেলা যুবদলের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুর রহমান তুষার। তিনি বয়রা ইউনিয়নের পরপর তিনবারের চেয়ারম্যান। তুষার বলেন, ‘আমি বয়রা ইউনিয়ন পরিষদে মানুষের সেবা করেছি। যখন তফসিল হয়েছে তখন সুনির্দিষ্টভাবে বুঝতে পারিনি দল নির্বাচন করবে না। এখন মাঠে নেমে গেছি, গণসংযোগ শুরু করেছি, পরে ১৪ এপ্রিল দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেলাম, নির্বাচন করবে না।’ 

নির্বাচন থেকে সরে গেলে ‘কলঙ্ক রটবে’ মন্তব্য করে তুষার বলেন, ‘মানুষের মধ্যে নানা কথা রটবে; অনেকে বলবে, আমি টাকা খেয়ে বসে গেছি। ভবিষ্যতে আমার ডাকে কেউ সাড়া দেবে না। এজন্যই আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ইলেকশন করছি।’

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের পদ হারিয়েছেন মো. রমিজ উদ্দিন লন্ডনী। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্ষমতা আছে বলেই বহিষ্কার করেছে। এটা কোনো বিষয় না। আমি নির্বাচনের মাঠে আছি এবং শেষ পর্যন্ত থাকব।’ বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও তার পাশে আছেন বলে দাবি করেন রমিজ উদ্দিন।

নাঙ্গলকোট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম ছুপুও বহিষ্কারাদেশকে পাত্তা দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দলে আমার কোনো পদ-পদবি নেই। তাই আমার কাছে বহিষ্কারের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয়।’

একই কথা বলেছেন, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য শাহিনুর আক্তার বিউটি। যিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হওয়ার কারণে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমি বিএনপির কেউ না। রাজবাড়ী বিএনপিতে আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। এ কমিটিতে আমি নেই। তাছাড়া কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক পদেও আছি নামকাওয়াস্তে।’ তিনি বলেন, ‘দলের জন্য এত কিছু করেছি। কোনো মূল্যায়ন করেনি। তাই বহিষ্কার করল কি করল না, তাতে আমার কিছু আসে যায় না। এসব নিয়ে এখন চিন্তা করি না।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা