বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৩৮ পিএম
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:০৯ পিএম
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের। ফাইল ফটো
পরিষ্কার ধারণা ছিল, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে কখনও আন্দোলনের মুখে কোনো সরকার পদত্যাগ করে নাই।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের বর্ধিত সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সকাল ১০টা ৫৭ মিনিটে কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভার উদ্বোধন করা হয়।
এতে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার, সালমা ইসলামসহ অনেকে।
জিএম কাদের বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আন্দোলন চলাকালে তৃতীয় শক্তি এসে সরকার পরিবর্তন করে এমন ইতিহাস নেই। ফলে, বিএনপির ১ কিংবা ১০ লাখ বা ১ কোটি লোক নিয়ে রাস্তায় নামলেও বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না।
তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে আমি বিভিন্ন বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠকে করে পরিষ্কার বুঝেছি, তিনটি বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তারা নয় আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি এ আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত।
দলের ভেতর নানা দিক নিয়ে দ্বিধা তৈরি হয়েছে জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘আমার বক্তব্য নিয়ে জনমনে এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি করা হয়েছে। এরশাদের ভাবমূর্তি ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। রাজনীতিতে এরশাদ ও এরশাদের পরিবারকে নির্বাসনে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে যখন আপনারা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তখন আমি গভীরভাবে পুরো দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তারা তাদের ব্যর্থতার দোষ আমার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। নিজেদের দোষ ঢাকতে আমাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।’
আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘তারা অনুগত বিরোধী দল হিসেবে আমাদের চাচ্ছিল। কিন্তু আমি তাতে রাজি হইনি। আমরা নির্বাচনে যাব কি না এটা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে যখন বসি তখন তারা বলেন, আমরা নির্বাচনে না গেলে আমাদের দলকে টিকিয়ে রাখতে সমস্যা হবে। সামনে রাজনীতি যদি করতে চান, তাহলে গলায় মালা নিবেন বা গলায় ফাঁসি নিবেন সেটির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ২৬ জনের একটি তালিকা দিয়ে আওয়ামী লীগ বুঝাল যে তারা আমাদের সুবিধা দেওয়া হলো। কিন্তু আমরা যেখানে ক্যানিডেট ছিল তাদের দলের প্রার্থীও ছিল। তাই আমাদের কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। আমি আমার দলের প্রার্থীদের বলেছিলাম, এখানে কোনো ছাড়ের বিষয় নেই, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সব জায়গায় রয়েছে, তারাও জয়ী হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসনব্যবস্থা তৈরি করতে চাচ্ছে। তারা আমাদের মতো দলকে গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে চায়। তাহলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু গৃহপালিত না হলে তাদের কাছে কোনো স্থান নাই। দেশকে চরমপন্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এখন পর্যন্ত কোনো ভরসা পাচ্ছি না। তারা যেটি বলে, স্বাধীনতার পক্ষে, স্বাধীনতার চেতনার পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানুষ জীবন দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এখন প্রজাতন্ত্রের জায়গায় একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র কায়েম করতে চায়। এতে সকলের প্রথম আনুগত্য আওয়ামী লীগের কাছে, দ্বিতীয় আনুগত্যও আওয়ামী লীগের কাছে।’
বিরোধীদলীয় এ নেতা আরও বলেন, ‘দেশের মানুষকে বিরাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। এখন জনগণ ভোট দিতে যায় না, রাজনীতিতে আগ্রহী হয় না, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজেদের দলের লোকদের বসিয়ে রেখেছে। এর মাধ্যমে মানুষ রাজনীতি বিমুখ হচ্ছে। এটিই বিরাজনীতিকরণ। আমরা গৃহপালিত হব না, যতদিন থাকব ততদিন দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাব। আপনারা আজকে পরামর্শ দিবেন কীভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, গৃহপালিত দল হিসেবে নয়, নিজস্ব দল হিসেবে কীভাবে চলতে পারে।’
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা গত দ্বাদশ নির্বাচনে গিয়েছিলাম প্রেসিডিয়াম কমিটির সম্মতিক্রমে। তবে এ নির্বাচনে আমরা আশানুরূপ ফলাফল পাইনি। এর জন্য সরকারের দৌরাত্ম্য, তাদের অর্থের দৌরাত্ম্য ছিল। আবার দলের অনেকে ভুল বুঝেছেন, অনেকে চলে গেছেন। আমি বলব- আমাদের যা ভুলত্রুটি হয়েছে আসেন আলোচনা করি এবং আগামীতে দলকে কীভাবে আরও বেশি সংগঠিত করা যায়, তা নিয়ে কাজ করব।’
এদিকে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের পর নানা প্রশ্ন উঠেছে দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে। এ ছাড়া দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি মতভেদ দেখা গেছে। এ বর্ধিত সভার মাধ্যমে তারা জানতে এসেছেন, দলীয় সমস্যা থেকে উত্তরণে কেন্দ্রীয় নেতারা পরবর্তী সময়ে কী সিদ্ধান্ত নেন।
এ ছাড়াও বক্তব্যের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে পার্টিকে জানাতে চান জাপার বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার কেন্দ্রীয় নেতারা।