× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নিয়ন্ত্রণহীন তৃণমূল

বাছির জামাল ও দীপক দেব

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৪৯ এএম

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৫২ এএম

নিয়ন্ত্রণহীন তৃণমূল

প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশনাও উপেক্ষিত হচ্ছে তৃণমূলে। কেন্দ্র থেকে বারবার আপত্তি প্রকাশের পরও আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপি ও মন্ত্রীদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা প্রার্থী হিসেবে জোরেশোরে মাঠে রয়েছেন। দলীয় সভাপতির পক্ষ থেকে আত্মীয়স্বজনকে প্রার্থী না করার বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানানোর পরও খুব একটা সাড়া মেলেনি। এ অবস্থায় দলীয় শৃঙ্খলা ও কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সংশ্লিষ্টদের অনেকেই মনে করছেন, অতীতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো অপরাধে গুরুদণ্ড না হওয়ার কারণেই অনেকে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করার মতো সাহস দেখাচ্ছেন। ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে তারা দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়টিকে প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। 

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে ভোটবর্জন করে আসা বিএনপির ‍তৃণমূলের নেতারা শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই উপজেলা নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ কারণে ৭৩ জনকে বহিষ্কারও করা হয়েছে দল থেকে। দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপির প্রায় ৩৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। 

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানান, উপজেলা নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করতে দলীয় প্রতীক না দিয়ে উন্মুক্ত রাখার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তারই সুযোগ নিচ্ছেন এমপি-মন্ত্রীরা। বিষয়টি অনুধাবন করার পর এমপি-মন্ত্রীদের পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী না হওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দল থেকে। ফোন করে সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানান দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। যদিও ভোটের আগের দিন পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই। 

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি ও মন্ত্রীদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের প্রায় সকলেই মাঠে রয়েছেন। এই সংখ্যা ৪০-৪৫ জন হবে। শেষ সময়ে বসে যাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হলেও বাস্তবে মন্ত্রী ও এমপিদের পরিবারের সদস্যরা সেই পথে হাঁটবেনÑ এমন ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত মিলছে না। এমনকি প্রকাশ্যে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অনেককে নেতিবাচক কথাবার্তাও বলতে শোনা গেছে। 

গত মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে ছেলে আসিবুর রহমান খানের ভোট থেকে সরে যাওয়ার বিষয় নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে রীতিমতো তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়েন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের এমপি ও মন্ত্রীদের মধ্যে যাদের পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান। মাদারীপুর সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। গত ১৮ এপ্রিল দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ফোন করে ছেলেকে ভোট থেকে সরিয়ে দিতে শাজাহান খানকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তারপরও আসিবুর রহমান খান বহাল তবিয়তে মাঠে থাকায় দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার শাজাহান খান ধানমন্ডি কার্যালয়ে এলে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার বিষয়টি তাকে আবারও জানিয়ে দেন ওবায়দুল কাদের। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত দেরিতে নেওয়ার কারণে ছেলেকে ভোট থেকে সরানো যাচ্ছে না বলে অপারগতা প্রকাশ করেন শাজাহান খান। তখন ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করা শাজাহান খানের রাজনৈতিক চরিত্রে পরিণত হয়েছে। তখন উচ্চ কণ্ঠে এর প্রতিবাদ করেন শাজাহান খান। এই সময় দলের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের ভেতর শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে কি নাÑ এমন প্রশ্ন করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, যদি শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ত, তাহলে আওয়ামী লীগ কীভাবে টানা চার মেয়াদে সরকারে আছে?

এদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে নির্বাচনের মাঠে থাকা মন্ত্রী ও এমপিদের স্বজনদের প্রসঙ্গে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে একটি তালিকা করছেন সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এই তালিকায় দলের প্রবীণ নেতারাও আছেন। 

কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য তোফায়েল আহমেদের বড় ভাই আলী আশরাফের মেয়ে রেহেনা আক্তার লাইজুর স্বামী, আলী আজম মুকুল এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন বিপ্লবের বোনের জামাই আক্তার হোসেন হাওলাদার। জনপ্রিয়তা না থাকা সত্ত্বেও দুই এমপির প্রভাব খাটিয়ে তারা প্রার্থী হয়েছেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগের কপি প্রতিদিনের বাংলাদেশের কাছে রয়েছে। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিষয়ে কী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটি নিয়ে কথা হবে। 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্যকারীদের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত কী হবে তা এখনই সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আগামী ৩০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কথা হবে।’ 

এই প্রসঙ্গে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণীমূলক নির্দেশ নেতাকর্মীদের মানতে হবে। যারা মানবেন না তারা আওয়ামী লীগের প্রকৃত নীতি ও রাজনীতি বোঝেন না। বোঝার ক্ষমতাও তাদের নেই। না মানার উদ্দেশ্য হলো দলের শৃঙ্খলা তারা মানছেন না। এর দায় তাদেরই নিতে হবে।’

এই প্রসঙ্গে সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করার পরিণতি সবাই কোনো না কোনোভাবে ভোগ করবেন। একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত মানবেন কি মানবেন না যার যার বিষয়। তবে দলীয় শৃঙ্খলা যে বা যারা ভঙ্গ করবে, সেই দায়ভার তাদের নিতে হবে। 

বিএনপিতেও একই অবস্থা

আওয়ামী লীগের মতোই উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় নির্দেশনা তেমন কার্যকর হয়নি তৃণমূলে। ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত জানানোর পরও তা অমান্য করে প্রথম ধাপে বিএনপির অনেক নেতাই প্রার্থী হিসেবে রয়ে গেছেন। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে গতকাল ৭৩ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, উপজেলা নির্বাচন ঘিরে এই সত্যটি প্রকাশ পেল যে, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ওপর বিএনপির হাইকমান্ড নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেছে। দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, বিএনপির মতো দলগুলো যদি একের পর এক নির্বাচন বর্জন করে, তাহলে তাদের অস্তিত্ব নিয়েই একদিন টান পড়বে। কেননা স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের প্রভাব ও টিকে থাকার সঙ্গে এই নির্বাচনগুলোর সম্পর্ক রয়েছে। দীর্ঘদিন নির্বাচনে না গিয়ে তারা তাদের অস্তিত্ব নিয়েই সংকটের মধ্যে পড়ে গেছেন। যে কারণে এবার ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত তারা আর আমলে নিচ্ছেন না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। 

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির স্থানীয় নেতারা অংশ নেন। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রথম দিকে অংশ নিলেও ভোটে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সব স্থানীয় নির্বাচন বর্জন করে আসছে দলটি। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় কুমিল্লার মনিরুল হক সাক্কু, নারায়ণগঞ্জের তৈমূর আলম খন্দকারসহ অনেককে দলীয় পদ-পদবি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এবার উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তাতে অংশ নেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শীর্ষ নেতৃত্বকে চাপ দেন বিএনপির তৃণমূল নেতারা। বিশেষ করে এবার যেহেতু আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক দেয়নি, তাই বিএনপির তৃণমূল নেতাদের ‍যুক্তি হচ্ছেÑ দলীয় প্রভাবমুক্ত পরিবেশে নির্বাচনে অংশ নিলে তাতে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা থাকা নেতাকর্মীরাও প্রকাশ্যে আসতে পারবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কয়েকজন স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি তুলেও ধরেছিলেন। তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছিলেন, উপজেলা নির্বাচনের অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত না নিলেও কেউ অংশ নিতে চাইলে তার ব্যাপারে দল ‘বেখেয়াল’ থাকবে। কিন্তু গত ১৫ এপ্রিল রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এর কারণ হিসেবে তারা বলে, ইতঃপূর্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিষয়ে দলের যে সিদ্ধান্ত তা পরিবর্তনের মতো কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। 

গত ২২ এপ্রিল ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ওই দিন বিএনপির পদবিধারী যেসব নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। এরপর গত ২৩ এপ্রিল রাত থেকে তাদের তিন দিনের সময় দিয়ে শোকজ করা হয়। গতকাল বিকালে ৭৩ জনকে বহিষ্কার করা হয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তের পর তাদের নির্বাচন থেকে ফেরানোর নানা চেষ্টা করা হয়। এ লক্ষ্যে প্রার্থীদের কাছে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের একটি চিঠি পাঠানো হয়। পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের বোঝানোর জন্য। সব উপেক্ষা করেই বিপুলসংখ্যক সাবেক ও বর্তমান নেতা নির্বাচনে থেকে গেছেন। 

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের মানুষ বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনকে মূল্য দেয় না। কারণ এখানে ভোটের আগে ভোট হয়ে যায়। কেউ যদি দলের সিদ্ধান্ত না মানেন, বুঝতে হবে সরকারি দলের কোনো টোপে পড়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে অশুভ চক্রের সঙ্গে আঁতাত বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাব্বীর আহমদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন বর্জন করে আসছে। বিএনপির মতো দলগুলো যদি একের পর এক নির্বাচন বর্জন করে, তাহলে তাদের অস্তিত্বেই একদিন টান পড়বে। বরং বলা ভালো বিএনপি তার অস্তিত্ব ধ্বংস করার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কেননা এই দলটি তো একেবারে আদর্শিক দল নয় যে, আদর্শ না থাকলে তারা নির্বাচনে যাবে না।’ 

তিনি আরও বলেন, কিছু দিন আগে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেল। এ নির্বাচনও তারা বর্জন করেছে, ঠেকাতে পারেনি। এখন স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে সেটা ঠেকাতে পারবেÑ তা মনে হয় না। কত দিন আর বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্বাচনবিমুখ হয়ে থাকবে। স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সার্ভাইভালের প্রশ্ন জড়িত। স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের প্রভাব, টিকে থাকা স্থানীয় পর্যারের এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘদিন নির্বাচনে না গিয়ে তারা তাদের অস্তিত্ব নিয়ে সংকটের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। 

জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে ভোট করতে বিএনপি ও দল-সংশ্লিষ্ট অন্তত ৩৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই ধাপে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ২১ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩০ এপ্রিল। নির্বাচন থেকে সরে আসতে কেন্দ্রীয় এবং জেলা নেতাদের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে সাংগঠনিক সর্বোচ্চ শাস্তির বার্তাও। প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ৩০ এপ্রিলের পর প্রথমে তাদের শোকজ নোটিস দেওয়া হবে। তৃতীয় ধাপের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন ফরম জমার শেষ তারিখ ২ মে এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ মে। চতুর্থ ধাপের নির্বাচন হবে ৫ জুন। এই ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৯ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ১৯ মে পর্যন্ত।

সারা দেশে ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে চার ধাপে এবার নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫টি উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলার ভোট হবে ৮ মে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা