× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মন্ত্রী-এমপির সন্তান ও আত্মীয়রাই ফ্যাক্টর

দীপক দেব

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:০৫ এএম

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৩১ এএম

মন্ত্রী-এমপির সন্তান ও আত্মীয়রাই ফ্যাক্টর

আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী না থাকলেও মন্ত্রী এমপিদের সন্তান, পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়রাই এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মাঠে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাদেরকে ভোটের মাঠে না থাকতে দলের কেন্দ্রীয় নির্দশনা থাকলেও মাঠ পর্যায়ে সেটা অনেক জায়গাতেই মানা হচ্ছে না। ফলে আওয়ামী লীগের জন্য এটা একটা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেড়েছে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কাও। 

নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার পাশাপাশি ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধির বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে আসন্ন এই নির্বাচনে প্রার্থীতার বিষয়টি উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। এছাড়া দলের মধ্যে গ্রুপিং ও সংঘাত-সংঘর্ষ এড়াতে এবার কাউকে দলীয় প্রতীক না দেওয়ারও  সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রীয় এই সিদ্ধান্ত মেনে চলতে দলীয় নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার বা পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী করা যাবে না। কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট এমপি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়। কিন্তু কেন্দ্রের এই নির্দেশের পরও অনেকে হাটছেন উল্টোপথে। তাদের কেউ কেউ এরই মধ্যে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন, কোনো কোনো এলাকায় দিচ্ছেন প্রার্থীতার ঘোষণাও। আর প্রভাবশালীদের এমন তৎপরতার কারণে সাধারণ ভোটারদরো নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের অনেকেই মনে করছেন- উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে এমপি মন্ত্রী ও দলের দায়িত্বশীল নেতাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখার যে বার্তা দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণ করা আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ্য হিসেবে দেখা দিতে পারে। 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যকার নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত সংঘর্ষ ও প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটেছে। সেই রেশ এখনো রয়ে গেছে। এই বাস্তবতায় উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক বা কেউ কোন ধরনের প্রশ্ন তুলুক তা দেখতে চায়না আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড। এজন্য নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্টের মতো অভিযোগ কারো বিরুদ্ধে পাওয়া গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও হুশিয়ারী করা হয়েছে। কেন্দ্রে এরই মধ্যে কোন কোন নেতার বিরুদ্ধে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়গুলো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে বলেও দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানাগেছে।    

দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অধিকাংশ নেতার অভিমত ছিল- প্রতীক বরাদ্দের কারণে দলের তৃণমূলে গ্রুপিং বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে দলের প্রভাবশালী নেতারা, বিশেষ করে স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীরা স্ব স্ব নির্বাচনি এলাকায় তাদের আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী করছেন। এ কারণে দলের অনেক জায়গায় তৃণমূলে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমপি-মন্ত্রীদের প্রশাসনের ওপর খবরদারি করার সুযোগ আছে এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা নির্বাচন করতে পারবেন না। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় সভাপতির এই নির্দেশনা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, এসএম কামাল হোসেন ও আফজাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দলের হাই কমান্ডের নির্দেশেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে এই বৈঠকে বসেন। বৈঠকে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের ছেলেমেয়ে ও আত্মীয়স্বজনরা অংশগ্রহণ না করার নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে ও মন্ত্রী-এমপিরা তাদের পক্ষ নিলে দলের পক্ষ থেকে বিশেষ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের যেসব এমপি-মন্ত্রীর ছেলেমেয়ে ও আত্মীয়স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন তাদের তালিকা করে তাদের বিষয়ে খোঁজ রাখতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের  নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচন বিরোধী অবস্থান নেওয়ায় ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগকেও কৌশলগত অবস্থান নিতে হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দিচ্ছে না। দল ও দলের বাইরে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি যাতে নির্বাচিত হয় সেটাই আওয়ামী লীগ প্রত্যাশা করে।’ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা যেন কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে না পারেন, সেজন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কঠোর সাংগঠনিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।  

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বৃহস্পতিবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, উপজেলা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমূখর করার স্বার্থ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যগণকে নিজ পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। 

বৈঠকে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের নানান বিষয় নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কয়েকজন সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের জন্য স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে তাদের কোনো আত্মীয়স্বজন ও ছেলেমেয়েরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। যদি তারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে উপজেলা  নির্বাচনে অংশ নেয় এবং এমপি-মন্ত্রীরা তাদের সমর্থন করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে দল।

এবার দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদে ভোট হবে চারটি ধাপে। প্রথম ধাপের ১৫২টি উপজেলা পরিষদে ভোট হবে ৮ মে। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ২১ মে। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। 

দেশের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগের অন্তত ১০ জন নেতা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। দলের পক্ষ থেকে উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্তের কারণে অনেকেই নির্বাচন করার আগ্রহ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এই দুই উপজেলায় দুইজনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত ৩১ মার্চ বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই প্রার্থীতা ঘোষণা করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগেরসাধা্রণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস সহ শীর্ষ নেতাদের অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। গৌরনদীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমান ও আগৈলঝাড়ায় বরিশাল ১ আসনের সংসদ সদস্যের ছেলে সেরনিয়াবাত আশিক আবদুল্লাহকে একক প্রার্থী ঘোষণার পর অনেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা না বললেও একটি পক্ষ ভেতরে ভেতরে এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে এলাকায় রয়েছে চাপা উত্তেজনা। 

এদিকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অবৈধ হস্তক্ষেপের লিখিত অভিযোগ  আনা হয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর অন্যতম সদস্যও সাবেক মন্ত্রী সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে। মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গত রবিবার রাতে ধানমণ্ডিতে আওয়ামীলীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় সভাপতির শেখ হাসিনা বরাবর এই অভিযোগ জমাদেন। একটি অনুলিপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পত্রে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আব্দুর রাজ্জাকের অবৈধ হস্তক্ষেপ, প্রার্থী ও কর্মীদের হুমকি প্রদান বন্ধ এবং নির্বাচন প্রভাবিত করার কর্মকাণ্ড ও ষড়যন্ত্রের প্রতিকার চাওয়া হয়েছে। 

এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে নাটোরের সিংড়া উপজেলায় একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে জেলা ও উপজেলার রাজনীতিতে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত ২৯ মার্চ প্রতিমন্ত্রীর ঢাকার বাসায় স্থানীয় কয়েকজন নেতাকে নিয়ে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের আরও তিনজন নেতা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানাগেছে। 

এদিকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে নাটোরে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের পর মারধরের অভিযোগ উঠেছে আরেক প্রার্থীর লুৎফুল হাবীব রুবেলের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেলোয়ার হোসেন আসন্ন সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অনলাইনে আবেদন করে দুপুরে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে যান তিনি। সেখানে কয়েকজন তাকে হঠাৎ মারধর করে কালো একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গিয়ে আরও মারধর করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।

এই ঘটনায় নাটোরের সিংড়া উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ করার অভিযোগে অপর প্রার্থী মো. লুৎফুল হাবিবকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংস্থাটির উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার অভিযুক্তকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ‘দলীয়’ প্রার্থী হিসেবে দুজনের নাম ঘোষণা করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীমো. মহিববুর রহমান। চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব তালুকদার, ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. ইউসুফ আলীরনাম ঘোষণা করেন তিনি। এমন অবস্থায় প্রতিমন্ত্রীর এ ধরনের ঘোষণাকে ‘দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী’বলে মন্তব্য করেছেন দলের কেউ কেউ। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিতে স্থানীয়ভাবে গণসংযোগ চালিয়ে আসা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামিম আল সাইফুল বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী হয়ে তিনি নিজের খেয়াল-খুশিমতো কাউকে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন না।’

সূত্রে জানাগেছে, এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৪টি উপজেলায় এমন অবস্থা রয়েছে। একজন প্রতিমন্ত্রী ও ১২ সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থী হয়েছেন বা  হচ্ছেন। যাদের একক প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে নানা তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে উপজেলা নির্বাচনে কাউকে সমর্থন দেবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেক জায়গায় মন্ত্রী, এমপি, সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এসেছে। আমরা সেগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। যারা দলকে খণ্ডিত করার চেষ্টা করবে, নিজের মতো করে দল চালানোর চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।’

এদিকে দলের নেতা ও এমপি-মন্ত্রীদের এমন অবস্থা বন্ধে দলকে বেশ বেগ পেতে হবে বলেও মনে করেন তৃণমূলের কেউ কেউ। এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রার্থী হওয়া ও সমর্থন নিয়ে কেন্দ্র থেকে একটা গাইডলাইন দেওয়া হলে সকলের জন্য সুবিধা হবে বলে মনে করেন তাদের কেউ কেউ।  

এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম চট্টগ্রাম বিভাগের নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মতবিনিময় সভায় উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে প্রার্থীতা নিয়ে কেন্দ্র থেকে একটি গাইডলাইন করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘উন্মুক্ত বলে এভাবে দলকে ছেড়ে দেওয়া হলে সবাই নির্বাচনের জন্য দাড়িয়ে যাবে। প্রতি জায়গায় যদি ১০ থেকে ১২ জন করে প্রার্থী হয়ে যায় তাহলে দলীয় শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে। আর দায়িত্বশীল নেতা এমপি মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়ে বিরত রাখাও কঠিন হবে? তথ্য প্রযুক্তির যুগে নানা ভাবে সমর্থন দেওয়া যায়, এগুলো মনিটরিং করাও কঠিন। এজন্য কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত একটা গাইডলাইন থাকলে সবার জন্য সুবিধা হবে। তা না হলে দলে বিশৃঙ্খলা ও বিভক্তি বৃদ্ধি পাবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা