উপজেলা নির্বাচন
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৫৮ পিএম
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২৬ পিএম
আওয়ামী লীগের লোগো। ছবি : সংগৃহীত
উপজেলা নির্বাচনে দলের এমপি-মন্ত্রীর সন্তান, পরিবারের সদস্য এবং নিকটাত্মীয়দের প্রার্থী না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্দেশ অমান্য করে কেউ ভোট থেকে সরে না দাঁড়ালে বহিষ্কারসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ বিভাগের এমপি-মন্ত্রীদের দলের এই নির্দেশ জানাতে শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। তারা নিজ নিজ বিভাগে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন।’
এবার উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে চার পর্বে। প্রথম পর্বে ১৫০টি উপজেলায় ভোট হবে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রথম পর্বে ১৪ উপজেলায় এমপি-মন্ত্রীর সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়রা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এমপি ও মন্ত্রীদের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত উপজেলা নির্বাচনের চার পর্বের জন্যই প্রযোজ্য বলে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নিজের ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়নকাজ না করার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। নাটোরে লুৎফুল হাবিবের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, এসব খবরসহ নানা বিভেদের তথ্য দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এরপর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ডেকে উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দলের প্রধানের নির্দেশনা পেয়ে ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। এতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক ও উপদপ্তর সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে এমপি-মন্ত্রীদের মধ্যে যাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য নির্বাচন করছেন, সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, ‘দলের নেতাদের দাবির মুখে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়নি। মূল লক্ষ্য ছিল সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনটি প্রভাবমুক্ত রাখা। কিন্তু ভোট শুরুর পর দেখা যাচ্ছে এমপি-মন্ত্রীরা নিজের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের ভোটে দাঁড় করিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। এটা পছন্দ করছেন না দলের প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি কঠোরভাবে প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন।’
মন্ত্রী-এমপিরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন, সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকেও নানাভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের নেতারাও বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ভোট বর্জন করেছে। তাদের প্রার্থীরা বিপুল সংখ্যায় ভোটে অংশ নেবেন বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু আদতে তা হচ্ছে বলে মনে হয় না। এ অবস্থায় মন্ত্রী-এমপিরা প্রভাব বিস্তার করলে আর ভোট থাকবে না। এজন্য দলের নীতিনির্ধারকরা ভোট সুষ্ঠু ও ভোটারের উপস্থিতি যাতে বাড়ে, সেই চেষ্টায় আছেন। মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না থাকলে কোন্দল-সংঘাতও কম হবে।’