প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:২৭ পিএম
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বাংলা নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। প্রবা ফটো
সরকার দেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতি বদলে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রবিবার (১৪ এপ্রিল) বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বাংলা নববর্ষ বরণের এক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা কঠিন যুগসন্ধিক্ষণে এসে উপস্থিত হয়েছি। আমরা আজকে শুধু রাজনৈতিক আধিপত্য নয়, আমরা সাংস্কৃতিক আধিপত্য, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মধ্যে পড়েছি। আমাদের দীর্ঘদিনের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, আমাদের দীর্ঘদিনের ভাষা, আমাদের শব্দ- এসবকে বদলে দেওয়ার অনেক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।’
রিজভী বলেন, ‘স্বাধীন ভুখণ্ডের মধ্যে এখানকার ধলেশ্বরী-শীতালক্ষ্যা-পদ্মা-যুমনা-ইছামতি- এখান থেকে উচ্ছারিত আমাদের যে সংগীত, আমাদের যে গান, আমাদের যে সংস্কৃতি- এটা আমাদের নিজস্ব। এই নিজস্বতার মধ্য দিয়ে আমাদের সংস্কৃতির যে মোজাইক তৈরি হয়েছে সেই মোজাইকটি ওবায়দুল কাদেররা বিভ্রান্ত ছড়িয়ে ভাঙতে পারবে না। এই মোজাইকের ওপরেই আমাদের সার্বভৌমত্ব, আমাদের স্বাধীনতা দাঁড়িয়ে থাকবে। আর এর প্রতীক হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এই কারণেই আমাদের বাংলাদেশের সংস্কৃতির এই ভুখণ্ডের মধ্যে আমাদের যা সম্পদ সেটা গানে হোক, সেটা কথায় হোক, সেটা নাটকে হোক, সেটা যাত্রা-জারি-সারি গানে হোক- সেটা আমাদের নিজস্ব। এটাকে রক্ষার প্রতীক হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। এটা তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কি করে নিজের স্বত্তাকে রক্ষা করতে হয়।’
রিজভী বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, বিএনপি নাকি বাঙালি সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না। আমি বলতে চাই, আপনি কিসে বিশ্বাস করেন? এই বাঙালি সংস্কৃতি- এটার তাৎপর্য কি, এটার সংজ্ঞা কি? আপনি যদি একটু ব্যাখ্যা করে বলতেন।’
তিনি বলেন, ‘এখন ইংল্যান্ডের ভাষাও ইংরেজি, আমেরিকার ভাষাও ইংরেজি, নিউজিল্যান্ডের ভাষাও ইংরেজি, অস্ট্রেলিয়ার ভাষাও ইংরেজি, আরও ছোট-খাটো দেশের ভাষা ইংরেজি রাষ্ট্র ভাষা। তাহলে সবাই কি ইংরেজ? তাহলে কেউ অস্ট্রেলিয়ান, কেউ আমেরিকান, কেউ কানাডিয়ান কেনো?
বাঙালি তো অনেক দেশে আছে। ভারতের ত্রিপুরায় আছে, পশ্চিম বাংলায় আছে, বাংলাদেশে সেটা থাকবে কিন্তু ওবায়দুল কাদের সাহেব যে কথা বলেছেন সেটা কোনো উদ্দেশ্যে ছাড়া যে বলেননি- এটা আমি মনে করি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে বিএনপি জড়িত, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান তার ঘোষণাই মানুষ উদ্ধুদ্ধ হয়েছে। আমার বাংলাদেশের যে ভাষা সেটা প্রোটেকশন দেবে বাংলাদেশের মানুষ। ওবায়দুল কদের সাহেব আপনি কোন বাঙালির কথা বলছেন?’
ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছিলেন, ‘তলে তলে অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক আছে…, প্রভুদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। তলে তলে কাউকে খুশি করার জন্য, প্রভুদের খুশি করার জন্য উনি এই কথা বলেছেন।’
সকালে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রা শুরুর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে প্রতিষ্ঠিত সত্য কারা বৈশাখের চেতনাবিরোধী। যারা ১৪০০ বঙ্গাব্দে আওয়ামী লীগের মঙ্গলশোভাযাত্রা পণ্ড করে দিয়েছিল সেই অপশক্তি আজও বাংলার মাটিতে। এদেশে এরা সাম্প্রদায়িকতার বিশ্বস্ত ঠিকানা। বিএনপি এদেশে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক। এরা বাঙালি সংস্কৃতিকে সহ্য করতে পারে না। এদের হৃদয়ে পাকিস্তান।’
জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের উদ্যোগে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে জাসাস শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠান হয়।
জাসাসের সহসভাপতি লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, জাসাসের আহমেদ কিসলুসহ জাসাসের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।