প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৫০ পিএম
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ২০:২০ পিএম
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ফাইল ফটো
বিএনপি-জামায়াতকে ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘যারা রাজনীতির নামে আগুনসন্ত্রাস করে, রাজনীতির নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে, তাদের এই দেশে রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না। এরা রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত, রাজনীতিবিদ নয়। তাদের যারা আর্থিক সহায়তা দেয়, নেতৃত্ব দেয় তারা দুর্বৃত্তদের নেতা। সুতরাং বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে যে আগুনসন্ত্রাস বিভিন্ন সময় হয়েছে এবং এখনও ওত পেতে বসে আছে, তাদের নেতারা হচ্ছে এই দুর্বৃত্তদের নেতা। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা, সাপ্তাহিক গণবাংলার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীমের স্মরণে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটি ও সাপ্তাহিক গণবাংলা এ সভার আয়োজন করে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতির নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা গত দুই-তিন দশকে পৃথিবীর কোথাও আমি দেখি নাই। শুধু মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা নয়, আপনারা জানেন, গত নির্বাচনের আগে কীভাবে ট্রেনের মধ্যে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। যাত্রী বেশে ঢুকে সেখানে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে বের হয়ে গিয়েছে। তারা জানে সেখানে নারী-শিশু আছে, আগুনে পুড়ে তারা অঙ্গার হয়ে গেছে।’
‘এই যে আগুনসন্ত্রাস, এটা কল্পনারও বাইরে। সুতরাং আজকে যেমন কোনো জায়গায় আগুন না লাগে সেদিকে সচেতন হতে হবে, তেমনি যারা দেশে রাজনীতির নামে আগুনসন্ত্রাস চালায় তাদের বিরুদ্ধেও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার,’ যোগ করেন তিনি।
অগ্নিদুর্ঘটনা নিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অগ্নিনির্বাপণে যেটি প্রয়োজন সেটি হলো মানুষের সচেতনতা। মানুষের সচেতনতার যদি অভাব থাকে, তাহলে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেও অগ্নিনির্বাপণ করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশ একটি গরমের দেশ। আমাদের দেশের প্রত্যেকটি ঘরবাড়িতেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ঘরবাড়িতে এবং বিশেষ করে রেস্টুরেন্টগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাখা হয় না। সরকার এক্ষেত্রে এখন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, ঢাকা শহরে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকার কারণে অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যাতে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড আর না ঘটে। অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’
ফায়ার সার্ভিসকে ঢেলে সাজানো হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগে দেশের মাত্র ৪০টা উপজেলায় ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ছিল, আমরা যখন সরকার গঠন করি ২০০৯ সালে। এখন প্রত্যেকটা উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন আছে। এটা একটা বিরাট অগ্রগতি। ফায়ার সার্ভিসে আগে ২০ তলায় উঠতে গিয়ে ফায়ার ফাইটিং করার ব্যবস্থা ছিল না। ২০ তলা বা আরও উঁচু ভবনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ফয়ার ফাইটিং করতে পারে তাদের সেইভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যাতে আকাশ থেকেও অগ্নিনির্বাপণ করতে পারে, সেজন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সবশেষে যেটি প্রয়োজন সেটি হলো মানুষের সচেতনতা। মানুষের সচেতনতার যদি অভাব থাকে, তাহলে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেও অগ্নিনির্বাপণ করা সম্ভব নয়।’
‘ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিলাম, থাকব’
ফিলিস্তিন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিলাম, থাকব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের এই হামলা, এই বর্বরতা, নৃশংসতা মানুষ হত্যার মহোৎসব থামছেই না। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যেটি কল্পনার বাইরে। এই হামলায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ফিলিস্তিনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব না।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের নিষেধাজ্ঞার পরেও ইসরায়েল হামলা করেছে। গতকালের ঘটনার পর পশ্চিমা বিশ্বের বোধোদয় হবে। পশ্চিমা বিশ্ব ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিলাম, থাকব। যারা ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করে, তারা নিরীহ নারী ও শিশুদের হত্যার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করছে। তাই তাদের বোধোদয় হওয়া উচিত।’
স্মরণসভায় সাপ্তাহিক গণবাংলার প্রধান উপদেষ্টা এমএ করিমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। এতে আরও বক্তব্য দেন প্রয়াত আতাউর রহমানের একমাত্র কন্যা ফারদিন রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য লায়ন মশিউর আহমেদ, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটির চেয়ারম্যান মো. সুমন সরদার, মহাসচিব এমএ বাশার প্রমুখ।