× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আরও কাছাকাছি আসছে বিএনপি ও জামায়াত

বাছির জামাল

প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৪০ এএম

আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ১১:১৩ এএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

গত বছর থেকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য এগিয়ে নেওয়ার যে প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, সম্প্রতি সেই প্রচেষ্টার পালে জোর হাওয়া লেগেছে। সম্প্রতি দল দুইটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা পরস্পরের ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। যা থেকে এ দুই দলের নৈকট্য রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে আবারও দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। অবশ্য বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, ইফতারে যোগ দেওয়ার সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনকে কিংবা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াকে এক করে দেখা ঠিক হবে না।

পাঁচ বছর পর ইফতারে দুই দলের শীর্ষ নেতারা

প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে বিএনপির রাজনীতিবিদদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ দলটির চারজন কেন্দ্রীয় নেতা অংশগ্রহণ করেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বিএনপির এই ইফতার পার্টিতে অংশ নিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে এক টেবিলে পাশাপাশি বসেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। এর পর গত শনিবার জামায়াতের ইফতার মাহফিলে যোগ দেন বিএনপির নেতারা। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল না গেলেও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নাল আবেদিন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা যোগ দেন। 

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম জানান, হোটের সোনগাঁওয়ে জামায়াতের ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপির ১৮ জন নেতা যোগ দিয়েছেন। আর ইস্কাটনের লেডিসক্লাবে বিএনপির ইফতার অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমীরসহ চার জন্য নেতা অংশ নিয়েছেন। 

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবি করেছে জামায়াত

এ দিকে পারস্পারিক ইফতারপর্বের পর রবিবার (৩১ মার্চ) জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবি জানান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে নতুন করে সম্পর্ক তৈরির বা সম্পর্কোন্নয়নের এটি একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

সর্বশেষ ২০১৫ সালে হোটেল সোনারগাঁও হোটেলে জামায়াত আয়োজিত ইফতারে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরের বছর জামায়াত ইফতার পার্টির আয়োজন করলেও পরে পুলিশের বিধিনিষেধে তা বাতিল হয়ে যায়। এরপর থেকে দলটিকে আর বড় আকারে ইফতার মাহফিল করতে দেখা যায়নি।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর থেকে দীর্ঘদিনের মিত্র ও জোট সঙ্গী জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে বিএনপির। এরপর বিভিন্ন সময়ে এই দুই দলের শীর্ষ নেতারা পারস্পরিক বাকযুদ্ধেও জড়ান। এক পর্যায়ে জামায়াতকে নিয়ে গঠিত ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেয় বিএনপি। এরপর থেকে দল দুটির নেতাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কাছাকাছি হতে দেখা যায়নি।

বরফ গলার শুরু গত বছরের জুলাই থেকে

গত ১২ জুলাই বিএনপির নেতৃত্বে এক দফা আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই দলটির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নতুন করে যোগাযোগ শুরু হয়। বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসূচি দিতে থাকে জামায়াত। এরই মধ্যে যুদ্ধাপরাধী কারাবন্দি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমান শোকবাণী দেন। অন্যদিকে তারেক রহমান ও তার চিকিৎসক স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় জামায়াত। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দুই দলের দূরত্ব অনেকটা কমে আসে। সবশেষে গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের আগে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এভাবে উভয় দলের সম্পর্ক নাটকীয়ভাবে উষ্ণ হয়ে ওঠে।

সাংগঠনিক বিবেচনায় জামায়াতকে কাছে চায় বিএনপি

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাংগঠনিক শক্তি বিবেচনায় জামায়াতকে কাছে নিতে চায় বিএনপি। কেননা, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদলগুলো নানা কর্মসুচি দিয়ে মাঠে থাকলেও শক্তি দেখাতে সমর্থ হননি। তাছাড়া আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে ভারতকে খুশি করতেই জামায়াতকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু দ্বাদশ নির্বাচনে ভারত আওয়ামী লীগের পক্ষালম্বন করায় জামায়াতকে বিএনপি আর দূরে রাখতে চাইছে না দলটি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘জামায়াতকে এক মঞ্চে নিয়ে আন্দোলন করার বিষয়ে আমাদের শরিক দলগুলোর অনেকের চাহিদা রয়েছে। দলের নীতিনির্ধারকরা হয়তো এ দিকটি বিবেচনায় নিয়ে আলোচনা করছেন। তবে এখনও এরকম সিদ্ধান্ত হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘ইফতার একটি ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান। সে-অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সঙ্গে মাঠের আন্দোলন ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াকে এক করে দেখা ঠিক হবে না।’ 

এদিকে জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানাচ্ছেন, সংসদ নির্বাচনের পর আন্দোলন নিয়ে দুই দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যেই দুই দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে আগের মতো পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদেরও যে কোনও অবস্থায় সহাবস্থানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘নির্বাচনের পর বিএনপি হয়তো কিভাবে আন্দোলন সংগঠিত করবে, তা নিয়ে চিন্তা করছে। এর পরই এই প্রসঙ্গ আসবে যে, আমরা তাদের সঙ্গে কিভাবে আন্দোলনে অংশ নেব। আমরা একমঞ্চে আন্দোলন নিয়ে এত লালায়িত নই। আমাদের কথা হচ্ছে, আগে আন্দোলনটা সংগঠিত হোক।’ 

এ বিষয়ে জামায়াতের প্রচার সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক বাড়া-কমা কোনো বিষয় নয়। আমাদের দুই দলের মধ্যে সম্পর্ক স্থিতাবস্থাই আছে। রাজনৈতিক আদর্শও আমাদের কাছাকাছি। কমন ইস্যুও এক। সেটা হচ্ছেÑ‘দ্বাদশ নির্বাচন বাতিল করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন।’ তিনি বলেন, ‘একে-অন্যের অনুষ্ঠানে গেলে সম্পর্ক বাড়ে। আমি মনে করি- ইফতার অনুষ্ঠানে দুই নেতারা যাওয়াতে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক বেড়েছে। 

প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। এই জোট ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে। পরে ২০১২ সালে চারদলীয় জোট আরও কয়েকটি দল নিয়ে প্রসারিত হয় ২০ দলীয় জোটে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে এই জোট মূলত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি তার মিত্রদের জোটের নাম ব্যবহার না করতে বলার পর কার্যত ২০-দলীয় জোট বিলুপ্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে, ২০০৮ সালের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার পর থেকে প্রকাশ্যে জামায়াতের তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি। বিশেষ করে ২০১৩ সালে ৪ মার্চ সমাবেশের পর জামায়াতকে আর মাঠে দেখা যায়নি। সম্প্রতি দলটি আবারও সক্রিয় হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা