প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১৬:৪৯ পিএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১৮:৫১ পিএম
শনিবার দুপুর ১২টায় জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি অংশের ডাকা দশম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রওশন এরশাদ। প্রবা ফটো
আজকের এই সম্মেলন না হলে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যেত বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। তিনি বলেন, ‘আজ এই সম্মেলন না হলে আমরা হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হারিয়ে ফেলতাম। দেশের মানুষ, জাতীয় পার্টির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই তার প্রতিফলন ঘটেছে।’
শনিবার (৯ মার্চ) দুপুর ১২টায় জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি অংশের ডাকা দশম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় সংগীত ও জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মৃধা। এতে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন রওশন এরশাদ অনুসারী জাতীয় পার্টির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটসহ মৎস্যভবন এবং শাহবাগ এলাকা বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। নানা রঙ-বেরঙের পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে সম্মেলনস্থল। সড়কদ্বীপগুলোতে লাগানো হয়েছে এরশাদ শাসনামলের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ছবি সংবলিত ফেস্টুন। নির্মাণ করা হয়েছে দ্বিতলবিশিষ্ট মঞ্চ।
রওশন এরশাদ বলেন, ‘আজ আমার রাজনৈতিক জীবনের এক ঐতিহাসিক দিন। আমার গড়া প্রাণপ্রিয় সংগঠন জাতীয় পার্টি এ রকম একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন আয়োজন করতে পেরেছে দেখে, আমার হৃদয় কানায় কানায় ভরে গেছে। এই সম্মেলন আয়োজনের জন্য-জাতীয় পার্টির সব স্তরের নেতাকর্মীদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
তিনি বলেন, ‘পল্লীবন্ধু এরশাদ এদেশে যে নতুন ধারার ইতিবাচক রাজনীতির প্রবর্তন করে ছিলেন, সেই রাজনীতি হারিয়ে যেতে বসেছিল। আজ এ দশম সম্মেলনের মাধ্যমে পল্লীবন্ধু এরশাদের নীতি-আদর্শ এবং উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ও সংস্কারের রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে জনগণের মনে আবার আমরা বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।’
জাপার একাংশের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এখনও টিকে আছি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর যখন একটু ঘুরে দাঁড়ালাম, তখন আমাদের দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিজেদের আয়ত্মে রাখার জন্য আদালতে দাঁড়াতে হয়েছিল। মাননীয় আদালতের সুবিচারে পল্লীবন্ধু এরশাদ এবং আমি রওশন এরশাদ লাঙ্গল প্রতীক জাতীয় পার্টির জন্য বরাদ্দ পেয়েছিলাম। সেই লাঙ্গল প্রতীক এখনও আমাদের জাতীয় পার্টির অনুকূলে আছে এবং আগামীতেও থাকবে। ইনশাআল্লাহ।’
কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের উদ্দেশে রওশন এরশাদ বলেন, ‘আপনাদের স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, পল্লীবন্ধু এরশাদের জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভেদ নাই। আমরা এক আছি, ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকব। অতীতে যারা পার্টি ছেড়ে গেছে, তারা কেউ পল্লীবন্ধু এরশাদের নীতি আদর্শ নিয়ে যায়নি। এমনকি তারা পল্লীবন্ধুর ছবিও সঙ্গে নেয়নি। তাই জাতীয় পার্টি কখনও ভেঙেছে তা আমি মনে করি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে পার্টির ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না রেখে বিকেন্দ্রীকরণ করার প্রস্তাব রেখেছি। জাতীয় পার্টিতে গণতন্ত্র চর্চার একটা নিদর্শন আমরা সৃষ্টি করতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমাদের সম্মেলনের বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক গঠিত গঠনতন্ত্র সংশোধন উপকমিটি গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর প্রস্তাব আনবে। আপনারা পাস করে দিলে তা জাতীয় পার্টির আইনে পরিণত হবে।
সম্মেলনে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ, কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাইদুর রহমান টেপা, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সাদ এরশাদ প্রমুখ
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জেপির মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী এম নাজিমউদ্দীন আল-আজাদ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন প্রমুখ, বাংলাদেশ হিউম্যান পার্টির চেয়ারম্যান, চিনের সহকারী রাষ্ট্রদূত ফেং জিজিয়া প্রমুখ।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি স্বৈরাচারকে ঘৃণা করি। এরশাদ যখন স্বৈরাচার ছিলেন তখন তাকেও তীব্র ঘৃণা করতাম। তিনি প্রেসিডেন্ট থাকতে তাকে ঘৃণা করতাম। আমার হৃদয়ে স্বৈরাচারের কোনো জায়গা নেই। তবে তিনি স্বৈরাচার থেকে একজন প্রকৃত রাজনীতিবিদ হয়েছেন এজন্য তিনি এই উপমহাদেশের একজন শ্রেষ্ট মানুষ। সেনাবাহিনী থেকে নির্বাচনে এসে এ উপমহাদেশে কেউ রাজনীতিতে ঠিকতে পারে নাই।’
তিনি বলেন, ‘এরশাদ জেলখানা থেকে ৫ আসনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার এলাকায় আওয়ামী লীগের পক্ষে গণসংযোগ করতে গিয়ে আমি দেখেছি এলাকার মানুষ তাকে কত পছন্দ করে।’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপি এখন মস্ত বড় দল। তবে আমি এখনও বিশ্বাস করি জাতীয় পার্টি যদি মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলে তাদের মতো মানুষের এতো আস্তাভাজন কেউ হতে পারবে না।
জাতীয় পার্টির (রওশন) মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, আয় ব্যয়ের হিসাব চেয়ে একাধিক দফায় চিঠি দিলেও সাবেক কমিটির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব (জিএম কাদের ও মুজিবুল হক (চুন্নু) কোনো উত্তর দেননি। যে কারণে কোনো হিসাব উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। এখন হিসাব না দিলেও ভবিষ্যতে আইনগতভাবে হিসাব আদায় করা হবে।
তিনি বলেন, জিএম কাদের পার্টির সঙ্গে বেঈমানি করেছেন। ২৬টি আসনে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে, তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির প্রার্থী হিসেবে রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী হন। জিএম কাদের জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিলেন না। তিনি বারবার বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন না। সারা দেশের ২৫০ জন প্রার্থীকে কোরবানি দিয়েছেন। তাদের কোনো খোঁজ নেয়নি।
জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের দাবির মুখে রওশন এরশাদ পার্টির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর বর্ধিতসভায় সব জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ তাকে অভূতপূর্ব অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানান কাজী মামুনুর রশীদ।
সাদ এরশাদ বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার করণে শিশু বয়সেই মায়ের হাত ধরে আমাকে জেলে যেতে হয়েছিল। আজ আবার রাজনীতির জন্যে মায়ের হাত ধরে আপনাদের সামনে এসেছি। আপনারা যদি আমাকে আপনাদের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন, তাহলে আমিও অঙ্গীকার করছি, আব্বুর দেখানো পথ ধরে আমি সব সময় আপনাদের সঙ্গে নিয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আব্বুর মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টি থেকে পল্লীবন্ধুর নাম নিশানা প্রায় মুছে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু আজ আপনাদের দেখে মনে হলো, পল্লীবন্ধু এরশাদকে মুছে ফেলার শক্তি কারও নেই। আমরা সবাই একসঙ্গে এগিয়ে যাব। পল্লীবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই আমার লক্ষ্য।’