× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

১৪ দল আছে, ১৪ দল নেই

দীপক দেব

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৮ এএম

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৪ এএম

১৪ দল আছে, ১৪ দল নেই

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনেকটাই স্থবির ১৪ দলীয় জোট। নির্বাচন ও সরকার গঠনের প্রায় দেড় মাস অতিক্রান্ত হলেও সরকারি দলের পক্ষে জোট নিয়ে কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। তবে নির্বাচন ও আসনছাড় প্রসঙ্গে সৃষ্ট ক্ষোভ ও অসন্তোষ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে শরিক দলগুলো। ১৪ দলের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের নীরব ভূমিকায় জোট শরিকদের মধ্যে ক্ষোভের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনাও শুরু করেছেন তাদের কেউ কেউ। এ অবস্থায় ২৩ দফার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ১৪ দলীয় জোটের প্রয়োজনীয়তা আছে কি নেই তা নিয়েও সংশ্লিষ্ট অনেকের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। শরিক দলগুলোর দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, ২৩ দফার ভিত্তিতে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল, বর্তমানে তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। কারও কারও মতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে আওয়ামী লীগ জোট শরিকদের যেভাবে মূল্যায়ন করছে, তাতে জোটের বিষয়টি নিয়ে তাদের অবস্থানও পরিষ্কার হওয়া উচিত। 

১৪ দলীয় জোটের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি ও তাদের মিত্র দলবিহীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর প্রত্যাশা বেশি থাকলেও তাতে ভালো সাড়া দেয়নি দলটি। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার কম আসনে ছাড় দেওয়া হয় শরিকদের। বিগত নির্বাচনগুলোতে কমপক্ষে ১০টি করে আসন ছাড় দেওয়া হলেও আওয়ামী লীগ এবার মাত্র ছয়টি আসনে ছাড় দেয়। এদিকে শরিক দলের এই ছয়জন নৌকা নিয়ে ভোট করলেও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাসদের অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন ছাড়া বাকি চারজন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হন। পরাজিতদের মধ্যে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জেপি সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এবং জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন রয়েছেন। এছাড়া বিগত নির্বাচনে নৌকা নিয়ে বিজয়ী হওয়া জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এবং বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে এবার আসনে ছাড়ই দেওয়া হয়নি। 

বিষয়টি নিয়ে শরিক দলের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা থাকলেও শুরুতে এসব নিয়ে তেমন কথা বলতে দেখা যায়নি। প্রথমদিকে এ নিয়ে শরিক দলের নেতারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ আলোচনাতেই শুধু ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন। তবে এরই মধ্যে কোনো কোনো দলের নেতারা প্রকাশ্যে কথা বলা শুরু করেছেন। সৃষ্ট পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনকে দুষছেন কেউ কেউ। এ নিয়ে চলতি মাসে আরও অন্তত তিনটি দল বৈঠকে বসছে নিজেদের মধ্যে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে।

১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কাঠামো জাতীয় কমিটির দুই দিনব্যাপী সভার প্রথমদিন গত শুক্রবার জোট শরিকদের অবহেলার বিষয়গুলোতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নেতারা। দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের প্রাপ্য আসন না দেওয়া এবং শরিকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাঁড় করিয়ে তাদের জিতিয়ে আনার জন্য আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরের শক্তিশালী চক্র কাজ করেছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার ন্যক্কারজনক নগ্ন ভূমিকাও দেখা গেছে। কুষ্টিয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরেছেন হাসানুল হক ইনু। 

অন্যদিকে এরই মধ্যে বৈঠক করেছে ১৪ দলীয় জোটের আরেক শরিক দল তরীকত ফেডারেশন। সেখানেও এসব বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মূল্যায়ন হয়েছে বলে জানান দলটির নেতারা। এ মাসের শেষে নিজেদের মধ্যে মূল্যায়ন করতে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিও। নিজেদের মধ্যে মূল্যায়নের পর শরিক অন্য দলগুলোর সঙ্গেও বসতে চান দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। শনিবার তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, স্থবিরতা বিরাজ করছে জোটে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জোট নিয়ে চিন্তাভাবনার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। আমরা এলাকার (রাজশাহী মহানগর) অবস্থা যদি বলি, তাতে করে বেঁচে আছি কি না, সেটাও খোঁজ রাখে না কেউ। নির্বাচন থেকে শুরু হওয়া নেতিবাচক রাজনীতি এখনও চলমান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-২ আসন থেকে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন ফজলে হোসেন বাদশা। 

২১ ফেব্রুয়ারির পর প্রেসিডিয়ামের বৈঠক ডাকা হবে জানিয়ে জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী তিনি এই জোট করেছেন, এজন্য তিনিই ঠিক করবেন এই জোটের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না। এখানে অন্যদের রাগ-ক্ষোভ দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না। তবে নির্বাচনে শরিক দলগুলোর সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা হয়েছে, তা না করে সরাসরি বলে দিলেই পারত তোমরা (শরিক দলগুলো) তোমাদের মতো করে নির্বাচন করো। আমি কারও বিষয়ে কোনো দায়িত্ব নিতে পারব না।’ গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে বাকি তিনজনের মতো তিনিও পরাজিত হয়েছেন। এদিকে জাসদের একটি সূত্র দাবি করেছে, ২৩ দফা নিয়ে নতুন করে মূল্যায়নের পক্ষে মতামত এসেছে তাদের জাতীয় কমিটির সভায়। আগামী কাউন্সিলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলটি। 

জোট নিয়ে হতাশার সুরে কথা বলেছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদে জোটের প্রার্থী হতে চেয়েও আসন ছাড় না পাওয়া সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। তিনি বলেন, জোট নিয়ে আমাদের মধ্যে এই মুহূর্তে কোনো ভাবনা নেই। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শিগগির দলীয় বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা করে পরবর্তী অবস্থান পরিষ্কার করা হবে। এবারের নির্বাচনে চট্টগ্রামের একটি আসন থেকে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করার ইচ্ছার কথা জোটনেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানিয়েছিলেন ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিপরিষদে স্থান পাওয়া দিলীপ বড়ুয়া। 

এদিকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর গত ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা শপথগ্রহণের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার গঠিত হয়। সেখানে ১৪ দলীয় জোটের কোনো প্রতিনিধিত্ব দেখা যায়নি। এমনকি আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র মিলে যে ৪৮ জনকে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, সেখানেও মাত্র একজন রয়েছেন শরিক দল থেকে। অতীতের তিনটি সরকার গঠনের পর ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে সরকারপ্রধানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গেলেও সেই ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা দেখা যায়নি। যদিও গত ১১ জানুয়ারি বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানে ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের দেখা গেছে। 

১৪ দলীয় জোটের একটি সূত্র দাবি করেছে- জোটের শরিক দলগুলোর পক্ষ থেকে জোটনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বসার বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের কারও কারও সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। শিগগির প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে সময় দেবেন এমন আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে তাদের। সূত্রের ধারণাÑ সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন দেওয়া শেষ হওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদের সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে সাক্ষাতের জন্য সময় দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এই অবস্থায় শরিক দলগুলোর প্রত্যাশা এড়াতে এই চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে এমন ধারণা ওই নেতার।

জানতে চাইলে তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল, তার প্রয়োজনীয়তা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আমরা নিজেদের মধ্যে অনেক বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। তবে ১৪ দলীয় জোট ও নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকল্প আছে বলে মনে করছি না।

২০০৫ সালে ২৩ দফার ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দলগুলো নিয়ে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে সরব উপস্থিতির মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই জোটের কার্যক্রম। ২০০৮ সালের পর থেকে গত চার নির্বাচনে জোটের প্রতীক নৌকা নিয়ে জোটগতভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে শরিক দলগুলো। তবে এখন আস্তে আস্তে জোটের গুরুত্ব কমে আসতে দেখা যাচ্ছে। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে ১৪ দলীয় জোটের অংশীদারত্ব ছিল। সেই সময় জোটের অন্তত একজন টেকনোক্র্যাটসহ চারজন নেতা মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জোটশরিকদের কাউকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। একই সঙ্গে আসন বৃদ্ধির বিষয়টিও গুরুত্ব হারায় আওয়ামী লীগের কাছে। সেই ধারাবাহিকতা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়েও অব্যাহত রাখে আওয়ামী লীগ। এ কারণেই জোটের অনেকের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা