আবারও রাজপথে বিএনপি
বাছির জামাল
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:০৬ এএম
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৩৮ এএম
বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ফাইল ছবি
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রায় তিন সপ্তাহ চুপ থাকার পর নতুন করে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, সীমান্ত হত্যাকাণ্ডসহ নানা জনসম্পৃক্ত ইস্যু নিয়ে এবার কার্যক্রম শুরু করেছে এ দল। উদ্দেশ্য- এসব জনসম্পৃক্ত ইস্যুকে সামনে এনে সরকারকে চাপে ফেলা। যাতে রাজপথে শক্ত অবস্থান ও চূড়ান্ত আন্দোলনের পথ তৈরি হয়।
ইতোমধ্যে গত ৩০ জানুয়ারি নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিন সংসদ বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কালো পতাকা মিছিল করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের পর গত দশ দিনে সারা দেশে অন্তত দুই দফা কালো পতাকা মিছিল করতে দেখা গেছে বিএনপিকে। এ কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে নীতিনির্ধারকরা সন্তুষ্ট। সদ্য কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া নেতাকর্মীরাও এতে অংশ নেওয়ায় দলে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পরপর চীন, ভারত, রাশিয়া ও জাপানসহ অনেকগুলো দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হয়নি। তবে গত রবিবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে সেদেশের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। তাতে জো বাইডেন বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সমর্থনের পাশাপাশি একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অভিন্ন স্বপ্ন পূরণে অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠায় ঢাকার সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের দূত পিটার হাস পুনরায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে দ্বাদশ ভোট সুষ্ঠু হয়নি, তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এ চিঠি বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে হতাশা তৈরি করেছে। যদিও বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তির এ চিঠি দ্বাদশ ভোটে নির্বাচিত সরকারকে বৈধতা দেয় না। তারা শুধু বিদ্যমান সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়। কারণ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এটা এক দেশের সরকারের সঙ্গে অন্য দেশের সরকারের স্বাভাবিক সম্পর্ক। এতে প্রমাণিত হয় না যে, যুক্তরাষ্ট্র দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর গতকাল সোমবার রাতে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। এতে আন্দোলন ও জনসম্পৃক্ত ইস্যুর বিষয়ে আলোচনা করেছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। সামনে রোজা। সূত্র জানাচ্ছে, এ মাসকে কেন্দ্র করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গুচ্ছ কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, গণমানুষের দাবি এবং আশা-আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে আন্দোলনের কর্মকৌশল সাজাতে হবে। এভাবে মাঠে থেকে নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করে সরকারকে বেকায়দা ফেলার কৌশল প্রণয়ন করছে বিএনপি।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কারাবন্দি নেতাকর্মীদের জামিনে মুক্ত করাই এখন নীতিনির্ধারকদের মূল লক্ষ্য। তাই তারা এখন এমন কর্মসূচি দিতে চায় না, যাতে সরকার হার্ডলাইনে চলে যায়।
এ বিষয়ে ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘আমরা রাজপথে আছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না-হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাব।’
সংগঠন পুনর্গঠনের কাজ চলবে
নতুন করে আন্দোলন শুরু করতে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থাকেও একটি শক্ত ভিত্তির ওপর স্থাপন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। দীর্ঘ সময় আন্দোলন-সংগ্রামে থাকায় ২০১৬ সালের পর দলের আর কোনো কাউন্সিল হয়নি। গঠনতান্ত্রিকভাবে তিন বছর পরপর এই কাউন্সিল হওয়ার কথা। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা ৮২। এর মধ্যে মাত্র ১০টিতে মূল ও কয়েকটিতে আবার আংশিক কমিটি রয়েছে। ৫২টি জেলা কমিটি চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। বাকিগুলোর হালনাগাদ তথ্য নেই। সব মিলিয়ে ৫০টির বেশি জেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। তাছাড়া বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ১৯ পদের মধ্যে বর্তমানে শূন্য আছে পাঁচটি। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যানের ১৩টি, উপদেষ্টা ১৫টি, সম্পাদক ও সহসম্পাদকসহ একশর মতো পদ শূন্য হয়ে আছে। বিএনপির দুটি সহযোগী ও ৯টি অঙ্গসংগঠনের অবস্থাও বেহাল। এসব সংগঠনের মধ্যে কয়েকটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলেও বেশির ভাগের মেয়াদ নেই।
দলের নীতিনির্ধারকরা জানান, আন্দোলনের পাশাপাশি দলের পুনর্গঠনের কাজও চলবে। সেক্ষেত্রে একেবারে জেলাপর্যায় থেকে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ স্তরগুলো পুনর্গঠন করা হবে। আন্দোলনে সক্রিয় নন, কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ নাই- এমন কাউকে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সংগঠনের নেতৃত্বে আনা হবে না। এছাড়া আন্দোলনে অঙ্গসংগঠনগুলো রাজপথে প্রত্যাশিত সক্ষমতা দেখাতে পারেনি।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের পুনর্গঠন কাজ একটি চলমান প্রক্রিয়া। আন্দোলন ও দলের পুনর্গঠন কাজ একসঙ্গে চলছে।