প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৩১ পিএম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:০৩ পিএম
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে কথা বলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। প্রবা ফটো
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠি পাওয়ায় ‘অত গুলগুলা ভাব’ হওয়ার দরকার নেই বলে ক্ষমতাসীনদের হুঁশিয়ার করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুসহ নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’।
রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠনো চিঠিতে বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন, একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অভিন্ন স্বপ্ন পূরণে অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
এ প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘বাইডেন (যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট) সাহেব তাকে চিঠি লিখেছেন– এতে অত গুলগুলা ভাব হওয়ার দরকার নেই। তিনি (বাইডেন) বলেছেন– তোমাকে (প্রধানমন্ত্রী) এশিয়া প্যাসিফিকের সঙ্গে যুক্ত করে আমরা সম্পর্ক রাখতে চাই। তার মানে আমার কথামতো চলতে হবে এবং আমার টাকা (যেসব প্রকল্পে বিনিয়োগ অর্থ) দিয়ে দিতে হবে।’
মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, ‘কিন্তু পিটার হাস (যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত) বলেছেন– ভোট কিন্তু ভালো হয়নি। আর এই যে এত বেশি গল্প করেন, চামচামি করেন, দালালি করেন– ভারত-রাশিয়া-চীন আমাদের পক্ষে আছে, কী রকম পক্ষে আছে বলেন তো! ভারত আর চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতা…। তিস্তা যে কখন কাকে দিয়ে দেয় এই ভয়ে চীনের দিকে তাকিয়ে থাকে ভারত…। ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকে চীন। আর শেখ হাসিনার সরকার নিজেরাও খুব চালাক-চতুর, দুই দিকে খেলার চেষ্টা করে। খেলতে খেলতে এই খেলা শেষ হয়ে যাবে।’
বিদেশিরা ঋণের অর্থ শোধ করার তাগাদা দিচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ বিদেশ থেকে ঋণ করেছে ১০০ বিলিয়ন ডলার। এই টাকা শোধ করতে পারবে কত দিন… শোধ দেওয়ার সময় হয়ে গেছে…. এখন সবাই টাকা চাচ্ছে। আমেরিকা-ইউরোপ অত চাপ দেয়নি। কিন্তু চীন-রাশিয়া বলেছে– তোমার সাথে দোস্তি বন্ধুত্ব যাই থাকে… টাকা দাও…। সংবাদপত্রে এসেছে… ওরা টাকা চায়।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘৭ বছর আগে চীনের প্রেসিডেন্ট আমাদের দেশে এসেছিলেন। তখন তিনি ২০ বিলিয়ন ডলার দিতে চেয়েছেন। ৭ বছরে কত দিয়েছেন… ৪ বিলিয়ন। এরপরও অনেক জায়গা থেকে আমেরিকা বলেন, জাপান বলেন, সব জায়গা থেকে বলছে...এই সরকারের এখন কোনো বন্ধু নেই।’
তিনি বলেন, ‘হতাশ হওয়ার কিছু নেই। হতাশ তারা হবে। কারণ তারা ভোট করে হতাশ, কারণ এ রকম ভোট দুনিয়ার কেউ স্বীকার করেনি। তারা ভোট করে হতাশ, কারণ পুলিশ বুঝেছে, ব্যুরোক্রেসি বুঝেছে, পার্টি বুঝেছে এই ভোট ভোট নয়। এই ভোট করার পর জোট ভেঙেছে, এই ভোট করার পরে নিজের দলের মধ্যে আম-জাম-ডাব গাছ সব এক… যেটা নৌকা, সেটাই ঈগল, সেটাই আবার ট্রাক…. দল আছে আর?’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি (একাংশ) নুরুল হক নুর বলেন, ‘এখন বলছে– স্থানীয় সরকার নির্বাচন নৌকা প্রতীকে করবে না। সেজন্য স্থানীয় সরকারে প্রতীক তুলে দেওয়া হচ্ছে। আপনারা যখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেছেন, তখন আমরা বারবার বলেছিলাম এটা গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যায়ে সহিংসতাকে নিয়ে যাবে। এখন তারা তুলে দিচ্ছে প্রতীক। কারণ নৌকা এখন মার্কেট পাচ্ছে না।’
তিনি বলেন ‘এতটা ঘৃণিত প্রতীকে পরিণত হয়েছে যে, নৌকা থাকলে মানুষ এখন ভোটকেন্দ্রে যাবে না। তাই তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছে। আমরা বারবার বলেছি, আমাদের দেশের পরিবেশে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা গায়ের জোরে ক্ষমতা ধরে রেখেছে, তাদের জনভিত্তি নেই। সব মিলিয়ে তারা ১০ শতাংশ ভোটার ভোটকেন্দ্রে নিতে পারেনি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নারীকে যৌন হেনস্থার ঘটনা প্রসঙ্গে নুর বলেন, ‘এই সাহস কীভাবে হয়– বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা যা ইচ্ছা তাই করবে। তাদের বাধা দেওয়ার কেউ নেই। এটা শুধু জাহাঙ্গীরনগর নয়, এ রকম ঘটনা বাংলাদেশে অহরহ ঘটছে।’
‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ সংগঠনের সভাপতি কেএম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংক, লেবার পার্টির ফারুক রহমান, এনডিপির আবু তাহের, জাগপার রাশেদ প্রধান, বিএনপির আবদুস সালাম আজাদ, কাজী রওনুকুল ইসলাম টিপু, অন্যান্য সংগঠনের গিয়াস উদ্দিন খোকন, মিয়া মো. আনোয়ার, সারোয়ার রহমান সরকার প্রমুখ বক্তব্য দেন।