× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘কোম্পানি’ খুলে ৫ যুবলীগ নেতার ভাড়াবাণিজ্য

সৈয়দ ঋয়াদ

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৩৪ পিএম

আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:০৪ পিএম

‘কোম্পানি’ খুলে ৫ যুবলীগ নেতার ভাড়াবাণিজ্য। প্রবা ফটো

‘কোম্পানি’ খুলে ৫ যুবলীগ নেতার ভাড়াবাণিজ্য। প্রবা ফটো

রেলের জমি নিয়ম-বহির্ভূতভাবে একটি ক্লাবের নামে বরাদ্দ নিয়ে গত দশ বছর ধরে তা থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন যুবলীগের পাঁচ নেতা। রেলওয়ের সম্পত্তি কোনো ক্লাব, সমিতি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া বা ইজারা দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও রাজধানীর কমলাপুরে রেলওয়ের একটি জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের নামে। তবে ক্রীড়াচক্রের নামে বরাদ্দকৃত ওই জমি ইজারা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন যুবলীগের পাঁচ নেতা, যারা একই সঙ্গে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের পরিচালকও। প্রতিদিনের বাংলাদেশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই অনিয়মের তথ্য।

জানা যায়, রাজধানীর কমলাপুরে অবস্থিত ওই মাঠটি পেতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে আবেদন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। অভিযোগ রয়েছে, এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের ওই পাঁচ পরিচালক। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ দেয় ১৫ কাঠা জমি। একই সঙ্গে মাঠটি দেখভালের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে। মূলত ক্রীড়া চক্রের খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ ও খেলার মান উন্নয়নের জন্য মাঠটি ব্যবহার করা হবেÑ এই বিবেচনা থেকেই সেটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। যদিও এ ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হয় রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বরাদ্দের নীতিমালা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বরাদ্দ ও ইজারাসংক্রান্ত ২০২০ সালের সর্বশেষ নীতিমালায়ও কোনো ক্লাব বা সমিতিকে জমি বরাদ্দ দেওয়া যাবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। ওই নীতিমালার ৪৫-এর ক ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘কোনো সমিতি/ক্লাব/শ্রমিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের অফিস ঘর/দপ্তর স্থাপনের নিমিত্ত কোনক্রমেই রেলভূমি লাইসেন্স/লিজ/বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত এ সকল প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে উচ্ছেদযোগ্য হবে।’

কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের নামে বরাদ্দ দেওয়া হলেও এই মাঠ খেলাধুলার কোনো কাজে আসছে না। বরং ব্যক্তিস্বার্থে সেটি ব্যবহার করছেন যুবলীগের ওই পাঁচ নেতা। মাঠটি দখল করে তারা ভাড়াবাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। এককালীন দুই কোটি টাকা ও মাসিক ১০ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করে পুরো টাকাটাই নিজেদের পকেটে পুরছেন তারা। মাঠ ভাড়া দিয়ে গত দশ বছরে তারা অন্তত ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের ওই পাঁচ পরিচালক ‘এলএসআরজেবি’ নামে একটি কোম্পানি খুলে তার মাধ্যমে মাঠটি ভাড়া দিয়েছেন একটি পরিবহন প্রতিষ্ঠানকে। কোম্পানির এই নামকরণ হয়েছে পাঁচ পরিচালকের নামের আদ্যাক্ষর মিলিয়ে। এর প্রথম অক্ষরটি হলো ইসমত জামিল আকন্দ লাভলুর ‘এল’, দ্বিতীয়টি যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজার নামের ‘আর’, সালেহ জামান সেলিমের নামের ‘এস’, এসএম জাহাঙ্গীরের ‘জে’ এবং বেলায়েত হোসেন বেপারীর নামের ‘বি’। এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ও মাসিক ভাড়ার ভিত্তিতে তারা এই মাঠ ভাড়া দিয়েছেন স্টার লাইন নামে একটি পরিবহন কোম্পানির কাছে। 

সরেজমিন দেখা যায়, খেলার মাঠের জায়গায় কেবল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের প্যাভিলিয়ন নামে একটি ভবন রয়েছে। প্যাভিলিয়নের এই সাইনবোর্ডের নিচেই পুরো জায়গাজুড়ে রয়েছে স্টার লাইন পরিবহনের টার্মিনাল ও কাউন্টার। খেলাধুলার চর্চা করার কোনো আলামত সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

খেলার মাঠকে বাসস্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহারকারী স্টার লাইন পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী আলাউদ্দিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘আমি এটা ভাড়া নিয়েছি এলএসআরজেবি কোম্পানির কাছ থেকে। ভাড়ার জন্য অগ্রিম দুই কোটি টাকাও দিয়েছি। এই জায়গার জন্য মাসে দশ লাখ টাকা করে ভাড়া দিই। চুক্তির মেয়াদ প্রায় শেষ হওয়ার পথে।’

ক্রীড়া চক্রের জায়গা কীভাবে ভাড়া নিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের পাঁচজন পরিচালকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছি। চুক্তি হয়েছে এলএসআরজেবি নামের কোম্পানির সঙ্গে। কোম্পানির পরিচালক জাহাঙ্গীর প্রতিমাসে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়।’

হাজী আলাউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা দুই কোটি টাকা অগ্রিম দিয়ে জায়গাটা রেজা, জাহাঙ্গীর, লাভলু ও সেলিমের কাছ থেকে নিয়েছি। মাসে জায়গার ভাড়া বাবদ ১০ লাখ টাকা দিই। মাস শেষে জাহাঙ্গীর এসে ভাড়ার টাকা নগদে নিয়ে যান। ভাড়ার রসিদ দেখে বলতে পারব সব।’

মাঠ ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের পরিচালক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘সাইনবোর্ড দেখছেন আপনে? সাইনবোর্ড দেখলে বোঝেন না কারা টাকা নিছে? এটার ডাইরেক্টর লাভলু ভাই। আপনি লাভলু (ইসমত জামিল আকন্দ লাভলু) ভাইয়ের লগে কথা বলেন।’

এলএসআরজেবি কোম্পানির নামে দুই কোটি টাকা অগ্রিম নিয়ে স্টার লাইন পরিবহনকে জমি ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রেজা বলেন, ‘আমি ক্লাবের ডাইরেক্টর। আমি একজন সাধারণ মেম্বার। আমি ক্লাবের কাছ থেকে জমিটি মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে ভাড়া নিছি। আমি তো লাভ করুম, তাই না? আমি নেওয়ার পর দশ টাকা লাভ করতে পারি, বিশ টাকাও লাভ করতে পারি। আপনি ডাইরেক্টর ইনচার্জ লাভলু ভাইরে কল দেন। আমি তার নাম্বার দিই। তার লগে কথা কন। হাজার হাজার কোটি টাকা খাইয়া ফালায়, আর আমি জায়গা ভাড়া নিছি আমারে ফোন দেন।’ তবে ইসমত জামিল আকন্দ লাভলুর নাম্বার চাইলে তৎক্ষণাৎ রেজা নাম্বারটি দিতে অস্বীকৃতি জানান।

হাজী আলাউদ্দিনের কাছ থেকে যিনি প্রতি মাসের ভাড়ার টাকা সংগ্রহ করেন সেই এস এম জাহাঙ্গীরকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আঠারো সাল পর্যন্ত টাকা আনতাম। আমাকে লাভলু ভাই দায়িত্ব দিছিল। ২০১৮ সালে নির্বাচনের পর থেকে আমি এটা জানি না। ব্যবসা-বাণিজ্য রাজনীতি নিয়া ঝামেলায় আছি। ক্লাবেও যাই না অনেক দিন।’ ক্লাবের কোনো পদে আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পদে আছি, তবে ক্লাবে যাওয়া হয় না।’

বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, জমিটি শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রকে দেওয়া হয়নি, দেওয়া হয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে, তারা কীভাবে ম্যানেজ করেছে আমরা জানি না। আমাদের টাকা-পয়সা পরিশোধ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। তবে রেলওয়ের ভূমি বরাদ্দের যে নীতিমালা সে অনুযায়ী ক্লাবকে বরাদ্দ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা জমিটির বেশিরভাগ অংশের বরাদ্দ বাতিল করেছি।

এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সদ্য বদলি হওয়া সচিব (অতিরিক্ত সচিব) পরিমল সিংহ এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি। তিনি পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. শামসুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। যোগাযোগ করা হলে পরিচালক বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। আপনাকে জেনে জানাতে পারব।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা