দেবর-ভাবির পাল্টাপাল্টি
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৩৫ পিএম
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:০৪ পিএম
রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। সংগৃহীত ফটো
রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলে নিয়েছেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের অনুসারী নেতারা। রওশন এরশাদ ঘোষিত জাপার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে এই কার্যালয়ে কয়েকটি কার্যক্রম চালিয়েছেন নেতারা। তারা বলেছেন, রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিতে প্রাণ ফিরেছে। এখন থেকে তারা এই কার্যালয়ে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
তবে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা নেতাদের দাবি– দল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও কিছু ভাড়াটে লোক এই কাজ করেছে। তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলে নেওয়ার খবর সত্য নয়। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ বিভ্রান্তিকর।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাপার পুরোনো দ্বন্দ্ব নতুন করে সামনে আসে। জিএম কাদেরের সঙ্গে মতবিরোধে গত সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশ নেননি। তার অনুসারীদের কাউকে মনোনয়ন দেয়নি জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। নির্বাচনের পর রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
২৫ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ এনে ৬৭১ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পদত্যাগী ও বহিষ্কৃতরা ২৮ জানুয়ারি জড়ো হন পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশনের গুলশানের বাসায়। সেখানে জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেই দলের হাল ধরার ঘোষণা দেন এরশাদের স্ত্রী। মামুনুর রশীদকে তিনি দেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব।
জিএম কাদেরের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেন, রওশনের দেওয়া অব্যাহতির ঘোষণাকে তারা আমলে নিচ্ছেন না।
যা বলছেন রওশনপন্থিরা
জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ১০টায় মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ে যান। তার সঙ্গে ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু, ফখরুল আহসান শাহজাদা, খোরশেদ আলম খোশু, শাহীন আরা সুলতানা রিমা প্রমুখ।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রথমে দলের প্রতিষ্ঠাতা এইচএম এরশাদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রওশন অনুসারী নেতারা। পরে তারা মোনাজাতে অংশ নেন। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে কার্যালয় ত্যাগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদেরকে দলের সাবেক চেয়ারম্যান ও মুজিবুল হক চুন্নু সাবেক মহাসচিব হিসেবে উল্লেখ করেন কাজী মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘তারা দুজন দলের অনেক ক্ষতি করেছেন, দলের ইমেজ নষ্ট করেছেন। বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আমাদের দল এখন শক্তিশালী, দল প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা– দল সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আজ থেকে আমরা এই কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করলাম।’
এক প্রশ্নের জবাবে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘কাদের-চুন্নুর জন্য আজ দলের বেহাল দশা। তাদের নেতৃত্বের প্রতি পার্টির নেতাকর্মীদের আস্থা নেই।’
কাদেরপন্থিদের পাল্টা
সন্ধ্যায় জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাপার যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদুল আলম এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল নেওয়ার খবর অসত্য, মনগড়া এবং বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই। প্রকৃতপক্ষে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে অব্যাহতিপ্রাপ্ত কয়েকজন এবং কিছু ভাড়াটে লোক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে কার্যালয়ের নিচতলায় অবস্থিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রুমে ১০ থেকে ১২ মিনিট অবস্থান করেন। পরে অফিসের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে তারা চলে যান। বিষয়টি নিয়ে কিছু সংবাদমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচারিত হয়েছে।’
মাহমুদুল আলম আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সারা দেশে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে এক ও ঐক্যবদ্ধ আছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলের বিভ্রান্তিমূলক সংবাদে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’