× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্বতন্ত্র এমপিরা আওয়ামী লীগ ও স্পিকারের দিকে তাকিয়ে

দীপক দেব

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৩ এএম

প্রবা ফটো

প্রবা ফটো

জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করার লক্ষ্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন সদ্য নির্বাচিত স্বতন্ত্র এমপিরা। আওয়ামী লীগের ৬১ নেতাসহ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী মোর্চা বা জোট গঠন করার সুযোগ থাকলেও এই বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের সিগন্যালের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। স্বতন্ত্রদের পক্ষ থেকে সরকারি দলের অবস্থান জানার পাশাপাশি জাতীয় সংসদের অভিভাবক স্পিকারের সঙ্গে দুই-এক দিনের মধ্যে দেখা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে মোর্চা বা জোট গঠনের লক্ষ্যে তাদের অবস্থান জানা গেছে। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই সংসদে বিরোধী দল কে হবে তা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়। একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা জাতীয় পার্টি (জাপা) এবার ১১ আসনে বিজয়ী হওয়ার পর বিরোধী দল নিয়ে আলোচনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ৬২ আসনে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিরোধী দলে বসবেন এ নিয়েও শুরু হয় নানা গুঞ্জন। ১০ জানুয়ারি নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণের দিনও স্বতন্ত্র এমপিদের অনেকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তখন কেউ কেউ মোর্চা বা জোট গঠনের আগ্রহের কথাও বলেছিলেন। 

শপথগ্রহণের পর স্বতন্ত্র এমপিদের কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেছেন মোর্চা গঠনের বিষয়ে। বিচ্ছিন্নভাবে শুরু হওয়া সেই আলোচনা এখনও চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে ফরিদপুর থেকে নির্বাচিত দুইজন এমপি নিজেদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেন। এই প্রক্রিয়াতে সামনে না থাকলেও টাঙ্গাইলের একটি আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাবেক এক প্রভাবশালী নেতাও রয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে স্বতন্ত্র ৬২ এমপির মধ্যে ৬১ জনই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা হওয়ার কারণে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। এক্ষেত্রে দলের গ্রিন সিগন্যাল পেলেই অধিকাংশ স্বতন্ত্র এমপি জোট বা মোর্চ গঠনের বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ দেখাবেন বলে জানিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পাওয়া একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন, দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত জানার পরেই তারা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। দল যেখানে তাদের ভূমিকা রাখতে বলবে তারা সেখানেই ভূমিকা রাখবেন। যেহেতু আগামী ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে তাই চলতি সপ্তাহে না হলেও আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, সংবিধান বা সংসদ পরিচালিত হয় যে কার্যপ্রণালি বিধির দ্বারা, তার কোথাও বিষয়টি স্পষ্ট নয় যে সংসদের বিরোধী দল হওয়ার জন্য ন্যূনতম কতগুলো আসন পেতে হবে। তবে এ রকম একটি রেওয়াজ আছে যে মোট আসনের অন্তত এক-দশমাংশ না পেলে সেই দলকে বিরোধী দল বলা যায় না। তার মানে ৩০০ আসনের সংসদে অন্তত ৩০টি আসন থাকতে হবে। প্রতিবেশী ভারতে এই চর্চা রয়েছে। যেমন এই ‍মুহূর্তে ভারতের লোকসভায় কোনো বিরোধীদলীয় নেতা নেই। ৫৪৫ জনের ভারতের লোকসভায় কমপক্ষে এক-দশমাংশ আসন না পেলে সেই দলকে বিরোধী দল হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয় না। যেহেতু বাংলাদেশের সংবিধান বা কার্যপ্রণালিবিধিতে এ রকম কোনো বিধান নেই। বরং স্পিকার চাইলে তার বিবেচনামতে সংসদে বিরোধিতাকারী দল বা সংঘের নেতাকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন। এখানে তার একক ক্ষমতা রয়েছে। অবশ্য স্পিকার সাধারণত সংসদ নেতার সঙ্গে পরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ফলে জাপাকেই বিরোধী দল এবং সেই দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকেই বিরোধীদলীয় নেতা ঘোষণা করতে হবেÑ এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। 

আইনজ্ঞরাও জানান, সংসদে বিরোধী দল কিংবা বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনের বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার স্পিকারের। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ২(১)(ট) ধারায় বলা হয়েছে, বিরোধীদলীয় নেতা অর্থ হলো, ‘স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমতে দল বা অধিসঙ্গের নেতা।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দল প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তারা (বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী) যদি মনে করেন স্বতন্ত্র হিসেবেই থাকবেন, তখন দেখা হবে কতজন স্বতন্ত্র হিসেবে থাকলেন। যদি দেখা যায়, তারা একটি মোর্চা করবেন, তখন বিরোধী দল কারা হবে, সেটি পরিষ্কার হবে। এজন্য অপেক্ষা করতে হবে। তারা (স্বতন্ত্র) কতজন কোথায় থাকতে চাচ্ছেন, কতজন স্বতন্ত্র থাকতে চাচ্ছেন এই বিষয়গুলো যখন পরিষ্কার হবে, তখনই বোঝা যাবে, কারা বিরোধী দল হবে।

সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ৬২ জন হলেও একা একা তাদের বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ নেই। তবে তারা সংসদে থাকা অন্য কোনো দলকে সমর্থন দিতে পারেন। যে দলের সমর্থন বেশি হবে তারাই হবে বিরোধী দল। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আলাদাভাবে জোট করতে পারেন, তখন ওই জোটে কতজন হবে, সেই হিসেবে তারাও বিরোধী দল হতে পারে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র মোর্চা গঠনের আগ্রহ প্রকাশ করে ফরিদপুর-৩ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য এ কে আজাদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কনট্রিট আলোচনা হয়নি। যেটুকু হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে হয়েছে। আমরা দুই-এক দিনের মধ্যে স্পিকারের সঙ্গে দেখা করব। তার কাছে জানতে চাইবো রুলস অব বিজনেস কী হবে? তারপর আমরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ার কারণে এখনও সবার সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে আমরা যারা জয়ী হয়েছি তারা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের লোক। কিন্তু দল থেকে এখনও কোনো সিগন্যাল পাইনি। তাই দলের সঙ্গেও আমাদের আলোচনার বিষয় রয়েছে। কারণ দল বলেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে, আমরা করেছি। এরপরে আর কোনো সিগন্যাল পাইনি। দল যদি মনে করে আমরা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করব, আমরা করব। এজন্য সবকিছুই দল ও স্পিকারের ওপর নির্ভর করছে বলেও জানান তিনি। 

জানা গেছে, এর আগে দশম সংসদেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটবদ্ধ হয়েছিলেন। সংখ্যায় কম হওয়া সেই জোট নিয়ে তেমন আলোচনা ছিল না। সেই সময় সংসদের মেয়াদের সাড়ে তিন বছর পর আবার এরা দল বেঁধে আওয়ামী লীগে ফিরেও গিয়েছিলেন। এবারও যদি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটবদ্ধ হয়ে কাউকে নেতা নির্বাচন করেন, তাহলে জাতীয় পার্টির প্রধান বিরোধী দল আর বিরোধীদলীয় নেতা পাওয়ার সুযোগ আর থাকবে না বলে মনে করেন একাধিক বিশেষজ্ঞ।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী শফিকুর রহমান বাদশা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। শেখ হাসিনা আমার নেত্রী। তাই দলের সিদ্ধান্তের ওপর আমার সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে। দল যদি মনে করে মোর্চা ও জোট গঠন করতে হবে তাহলে আমি সেখানে থাকব। 

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে ১০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ থেকে নবনির্বাচিত ২২২ জন এমপি শপথগ্রহণের পর এরই মধ্যে সংসদ নেতা হিসেবে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে পুনর্নির্বাচিত করা হয়েছে। ওই দিন ৬২ জন স্বতন্ত্র এমপি ঐক্যবদ্ধভাবে শপথ নেন। এ ছাড়া জাপার ১১ জন এমপি পার্টির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শপথ নেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সেই দিন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের বৈঠকের মধ্য দিয়ে সংসদ নেতা, উপনেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ নির্বাচন করলেও সেদিন বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়নি। বিরোধী দলের আসনে জাপা ও স্বতন্ত্রদের মধ্যে কারা বসতে যাচ্ছে সেই বিষয়ে সুরাহা না হওয়ায় এসব পদের সিদ্ধান্ত ঝুলে রয়েছে। ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসার আগেই এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা