প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৫৯ এএম
কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়। ছবি : সংগৃহীত
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিক্ষোভ-অস্থিরতা চলছে জাতীয় পার্টিতে। নানা অভিযোগে গত বুধবার নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের পর শুক্রবার দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছে দলটি।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলীয় গঠনতন্ত্রের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কাজী ফিরোজ রশীদকে কো-চেয়ারম্যান ও সুনীল শুভরায়কে প্রেসিডিয়াম সদস্য পদসহ দলীয় সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন, যা ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। যদিও এই সিদ্ধান্তের কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
অব্যাহতির কারণ জানতে চেয়ে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, ‘শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান মনে করেছেন নেতকার্মীদের বিক্ষোভে এ দুজন নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারাই মূল ভূমিকা পালন করেছেন। পার্টি ভাঙতে পারে এমন আশঙ্কাও ছিল।’
অব্যাহতির আগে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে এটি করেছেন।
দুজনের অব্যাহতিতে জাপার সংকট আরও প্রকট হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একটি সূত্র বলছে, জাপা চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে বহিষ্কারে কেন্দ্র ও তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতাই একাট্টা। তারা শিগগিরই সম্মেলনের প্রস্তুতি নেবেন।
কাজী ফিরোজ রশীদ ও সুনীল শুভরায় দুজনই জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। কাজী ফিরোজ রশীদ দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। আর সুনীল শুভরায় এরশাদের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি ছিলেন।
ঢাকা-৬ আসন থেকে দুবার এমপি হওয়া ফিরোজ রশীদ এবারও প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত আসনটি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সমঝোতা না হলে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
এবার নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের পুরোনো বিবাদ নতুন করে প্রকাশ্যে আসে। রওশন অভিযোগ করেন, এরশাদের ভাই জিএম কাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সরিয়ে ‘ক্যু’ করে জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব নিয়েছেন। রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতাদেরও এবার লাঙ্গলের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এরশাদের ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ যে রংপুর-৩ আসনের এমপি ছিলেন, সেখানে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে ভোট করেন জিএম কাদের নিজে। শেষ পর্যন্ত রওশন বা সাদ আর নির্বাচনে আসেননি।
অব্যাহতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, আমাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, লোকমুখে এ বিষয়ে আমি জেনেছি। দলের পক্ষ থেকে আমাকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। কোনো প্রতিক্রিয়াও নেই।
সুনীল শুভরায় বলেন, জাতীয় পার্টি এখন পারিবারিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়েছে। এ পার্টি থেকে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া অর্থহীন বলেই মনে করি। কেননা চেয়ারম্যান আগেই নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। দলকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন তিনি।
গত বুধবার বেশ নাটকীয়তার পর শপথ নেয় জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত ১১ সংসদ সদস্য। সকালে সংসদ ভবনে যখন শপথ চলছিল তখন জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেন। চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় নির্বাচনে পরাজিত ও বঞ্চিত প্রার্থীরা। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের পদত্যাগ দাবি জানায় তারা। সেই আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই ফিরোজ রশিদ ও সুনীল শুভরায়কে বহিষ্কার করা হলো।
বুধবার বনানী কার্যালয়ের সামনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা। এ সময় জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাও বক্তব্য দেন। বিক্ষোভে জাতীয় পার্টির নেতা লিয়াকত হোসেন খোকা, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল ইসলাম, গোলাম মোহাম্মদ রাজু প্রমুখ কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন না কাজী ফিরোজ রশীদ। তবে জানা গেছে, তার বাসায় বঞ্চিত ও বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বৈঠক করে পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয় ঘেরাওয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
জানতে চাইলে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, শীর্ষ নেতারা সরকারের কাছে বিক্রি হয়েছেন। তাই মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। চেয়ারম্যান তার স্ত্রী ও নিজের আত্মীয়দের আসনে সমঝোতা করেছে। এজন্য এবার ভরাডুবি হয়েছে। পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী এবং একাদশ সংসদের নির্বাচিত এমপিদের বাদ দিয়ে নিজ স্ত্রীর মনোনয়ন নিশ্চিত করায় নির্বাচনের শুরু থেকেই জিএম কাদেরের প্রতি বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।