× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

প্রার্থী ২৭০, আলোচনায় মাত্র ৯

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:০০ এএম

আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৫০ এএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বিএনপি নির্বাচনে না আসায় ভোটের আগে নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম ও সুপ্রিম পার্টিকে নিয়ে ছিল রাজনৈতিক মহলে নানা কৌথূহল। বিএনপি থেকে বড় একটি অংশ তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএমের হয়ে নির্বাচন করবে বলে গুঞ্জন ছিল। বিএনপি ছেড়ে আসা দল দুটির প্রধানরাও এমন আভাস দিয়েছেন। জাতীয় পার্টিকে পেছনে ফেলে তৃণমূল বিএনপি বা বিএনএম সংসদে বিরোধী দল হচ্ছে এমন খবরও রটেছিল। কিন্তু শেষমেশ কোনো গুঞ্জনই সত্যি হয়নি। প্রার্থী তালিকায়ও বড় কোনো চমক দেখাতে পারেনি দলগুলো। এবার ভোটের মাঠেও কোণঠাসা তারা। এই তিন দল থেকে ভোটের চূড়ান্ত লড়াইয়ে ২৭০ জন প্রার্থী থাকলেও আলোচনায় রয়েছেন মাত্র ৯ জন। বাকি অধিকাংশ প্রার্থীরই টিকবে না জামানত। আবার ভোটে নামিয়ে শীর্ষ নেতারা তাদের কোনো খোঁজখবর নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএমের অধিকাংশ প্রার্থীর। অনেকেই সরে যাচ্ছেন নির্বাচন থেকে। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধন পায় তৃণমূল বিএনপি। নিবন্ধন পাওয়ার পর বিএনপির সাবেক প্রভাবশালী ভাইস চেয়ারম্যান ও কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরীকে চেয়ারম্যান এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে মহাসচিব ও দলটির প্রতিষ্ঠাতা বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদাকে নির্বাহী চেয়ারম্যান করে নতুন কমিটি ঘোষণা দেয়। বিএনপির এ দুই নেতার যোগদানে রাজনীতির মাঠে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। বিএনপি নির্বাচন বয়কট করলেও দলটির অনেক নেতাই তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করে নির্বাচনে যাচ্ছেন বলে সুর উঠেছিল। 

শমসের মবিন ও তৈমূর আলম খন্দকার জানিয়েছিলেন তাদের প্রার্থী তালিকায় থাকবে চমক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাবেক আমলা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাসহ পেশাজীবীরা তাদের দলে যোগ দেবেন। ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিলেও তাতে ব্যর্থ হয়। শেষমেশ ২৮০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে তৃণমূল বিএনপি। সব প্রক্রিয়া শেষে এখন ১৩৭ জন প্রার্থী সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে চূড়ান্ত লড়াইয়ে রয়েছেন। তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তালিকায় ৫ জন সাবেক এমপির নাম ছিল। তাদের মধ্যে ঝিনাইদহ-২ আসনে নুরুদ্দিন আহমেদ নির্বাচনে অংশ নেননি আর সাতক্ষীরা-৪ আসনে এইচএম গোলাম রেজা লড়ছেন বিএনএম থেকে। বাকি তিনজনের মধ্যে ঋণখেলাপি হওয়ায় সাবেক এমপি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের প্রার্থী এমএ আওয়ালের প্রার্থিতা বাতিল হয়। বর্তমানে ভোটের মাঠে আছেন সাবেক দুই এমপি। 

তৃণমূল বিএনপির এই ১৩৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ভোটের মাঠে আলোচনায় রয়েছেন মাত্র ৪ জন। তারা হলেন সিলেট-৬ আসনে শমসের মবিন চৌধুরী, মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে অন্তরা সেলিমা হুদা, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার এবং সাবেক এমপিদের মধ্যে মৌলভীবাজার-২ আসনে এমএম শাহীন। অন্যদিকে বিএনপির সাবেক আরেক এমপি আব্দুল গণি মেহেরপুর-২ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হলেও ভোটের মাঠে খুব একটা আলোচনায় আসতে পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শমসের মবিন চৌধুরী ভোটের মাঠে খুব একটা স্বস্তিতে না থাকলেও শেষ পর্যায়ে আলোচনায় এসেছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন তার আসনে শক্ত প্রার্থী। বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে এই আসনে নুরুল ইসলাম নাহিদ ও সরওয়ার হোসেনের বাড়ি বিয়ানীবাজারে। আর শমসের মবিনের বাড়ি গোলাপগঞ্জে। গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগের একটি পক্ষও সমর্থন জানিয়েছে তাকে। ফলে ভোটের মাঠে আলোচনায় রয়েছেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার লড়ছেন এই আসনের চতুর্থবার নৌকার প্রার্থী এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীকের বিরুদ্ধে। এলাকায় গাজীর শক্ত অবস্থান থাকায় তৈমূরের জয় সহজ নয়।

মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে লড়ছেন অন্তরা সেলিমা হুদা। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম সারোয়ার কবির এবং বিকল্পধারার মাহী বি চৌধুরী। তাদের তিনজনেরই রয়েছে শক্ত অবস্থান। শেষমেশ চতুর্মুখী লড়াইয়ে জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন অন্তরা।

মৌলভীবাজার-২ আসনে বিএনপির সাবেক এমপি এমএম শাহীনও ভোটের মাঠে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। দলের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন দুইজন। এরা হলেন সাবেক এমপি ও কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুলাউড়া আওয়ামী লীগের বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি সফি আহমেদ সলমান। আওয়ামী লীগে তিনজন প্রার্থী থাকায় সুবিধা পেতে পারেন এমএম শাহীন।

অন্যদিকে নির্বাচনের মাঠে নামিয়ে দিয়ে এখন আর কেন্দ্রীয় নেতারা কোনো খোঁজ রাখছেন নাÑ এমন অভিযোগ তুলেছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তৃণমূল বিএনপির ৬০ প্রার্থী। গত ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলেন তারা শমসের মবিন চৌধুরী, অন্তরা হুদা ও তৈমূর আলম খন্দকারকে ‘জাতীয় বেইমান’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন। ওই প্রার্থীদের আরও অভিযোগ, দলের শীর্ষ ওই তিন নেতা দলের তহবিল থেকে বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। 

এসব দায় স্বীকার করেন দলের মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকারও। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নতুন দল হিসেবে প্রার্থীদের নির্বাচনী খরচ দিতে পারিনি। এ ছাড়া ঠিকমতো সবার সঙ্গে সমন্বয় করতে পারিনি। প্রার্থীরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রচার চালাচ্ছেন।’

নতুন নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএমও বিভোর ছিল সংসদের বিরোধী দল হওয়ার স্বপ্নে। তারা বিএনপিসহ বিভিন্ন দল থেকে প্রার্থীদের বাগিয়ে আনার চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেনি। শেষমেশ ৮৩ আসনে প্রার্থী দিলেও ভোটের চূড়ান্ত লড়াইয়ে আছেন ৫২ প্রার্থী। তাদের প্রতীক নোঙ্গর। এর মধ্যে গত দুই-তিন দিনে ভোটে নামিয়ে দলের শীর্ষনেতারা কোনো সহযোগিতা করছেন নাÑ এমন অভিযোগ তুলে দলটির কুষ্টিয়া-২ আসনের প্রার্থী শেখ আরিফুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের মো. আব্দুল হাকিম সিকদার, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের প্রার্থী সাবেক এমপি দেওয়ান শামছুল আবেদীন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

বিএনএমের প্রার্থী তালিকায় ৫ জন সাবেক এমপির নাম থাকলেও এখন ভোটের মাঠে রয়েছেন মাত্র ৩ জন। তারা হলেন ফরিদপুর-১ আসনে শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, সাতক্ষীরা-৪ আসনে এইচএম গোলাম রেজা ও নীলফামারী-১ আসনে জাফর ইকবাল সিদ্দিকী। এই তিনজন সাবেক এমপি ছাড়াও পাবনা-২ আসনে সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী রয়েছেন সুবিধাজনক অবস্থানে। 

নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ছেড়ে বিএনএমে যোগ দেন সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। বিএনএমে যোগ দেওয়ার পরপরই তাকে বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফরিদপুর-১ আসনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তার পথচলা খুব একটা মসৃণ নয়। আসনটিতে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক এমপি আব্দুর রহমান, আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কৃষক লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সাংবাদিক আরিফুর রহমান। এ দুজনের ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান থাকায় জাফরকে অনেক লড়াই করে জয়ী হতে হবে। 

সাতক্ষীরা-৪ আসনে দলের প্রার্থী হয়ে লড়ছেন সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত নেতা এএইচএম গোলাম রেজা। এই আসনে সাতজন প্রার্থী থাকলেও মূল আলোচনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসএম আতাউল হক দোলন। এ দুজনের মধ্যেই মূল লড়াই হবে বলে ধারণা ভোটারদের। 

নীলফামারী-১ আসনে নোঙ্গর প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি জাফর ইকবাল সিদ্দিকী। আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী জাতীয় পার্টির আরেক সাবেক এমপি এন কে আলম চৌধুরী রয়েছেন আলোচনায়। তবে এন কে আলম চৌধুরী দীর্ঘদিন এলাকায় না থাকায় তার অবস্থান কিছুটা নড়বড়ে হওয়ায় বিএনএমের জাফর ও আওয়ামী লীগের আফতাবের মধ্যে মূল লড়াই হতে পারে। 

পাবনা-২ আসনে বিভিন্ন দলের ৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটের মাঠে সরব আওয়ামী লীগের আহমেদ ফিরোজ কবির ও বিএনএমের প্রার্থী জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী। এ দুজনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে একজন জয়ের মালা পরবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

ভোটের আগে নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ১২১ আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেও চূড়ান্ত লড়াইয়ে রয়েছেন ৮১ জন। দলের সভাপতি সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ মাইজভান্ডারী চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে নির্বাচন করছেন। তিনি ছাড়া বাকিদের কোনো খবর-বার্তা নেই।

সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ মাইজভান্ডারীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীসহ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। তিনজন হেভিওয়েট প্রার্থী একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় সাইফুদ্দীন আহমেদ মাইজভান্ডারীর নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া খুব একটা সহজ নয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা