প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৪৩ পিএম
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৪৬ পিএম
একজন নোবেলজয়ী শ্রমিকদের পাওনা কিংবা অধিকার বুঝিয়ে না দিলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে কিনা- সে প্রশ্ন রেখেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। প্রবা ফটো
বন্ধুরাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিয়ে অনেক কথা বলে মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘একজন নোবেলজয়ী যদি শ্রমিকদের পাওনা কিংবা অধিকার বুঝিয়ে না দেন, তার বিরুদ্ধে কি মামলা হবে না? আশা করি, বন্ধুরাষ্ট্রগুলো এ নিয়ে কথা বলবে।’
সোমবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘শরণার্থীর জবানবন্দি ১৯৭১’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান হয়। সেখানে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার রায় প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীতে অনেক নোবেলজয়ী ফৌজদারী ও দেওয়ানি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। অনেকে জেলও খেটেছেন। ড. ইউনূসের প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাচ্ছি- তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে না দেওয়ার জন্য। তিনি শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেননি, বহুবছর ধরে।’
‘এরপর যখন শ্রমিকেরা আদালতে গেছেন, তখন আদালতের বাইরের দুজন শ্রমিক নেতাকে তিন কোটি, তিন কোটি ছয় কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দুজন শ্রমিক নেতা টাকা পেলে তো হবে না, কারণ সাধারণ শ্রমিকেরাতো কোনো টাকা পাননি। সে কারণে সাধারণ শ্রমিকরা মামলা করেছেন। সেই মামলার রায় হতে যাচ্ছে,’ বলেন তিনি।
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘এখন শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে নানা কথা হয়। শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোও অনেক কথা বলে। কাজেই নোবেলজয়ী যদি শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে না দেন, তাহলে কি তার বিরুদ্ধে মামলা হবে না? আশা করি, বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও এ নিয়ে কথা বলবেন। শ্রমিকের অধিকার ও পাওনা বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে মামলা হয়েছে।’
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলেছে- ‘আমরা যদি মানবাধিকার নিয়ে কোনো বক্তব্য দিই, সরকার তাতে বিরক্ত হয়, তারা আমাদের প্রতিপক্ষ বলে মনে করে।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মোটেও বিরক্ত হই না। মানবাধিকার নিয়ে কথা বললে, সেগুলো আমরা দেখি, পর্যবেক্ষণ করি। অনেক ক্ষেত্রে সত্য ঘটনা হলে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
‘কিন্তু যারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন, তারা পেট্রোলবোমা সন্ত্রাস নিয়ে কোনো কথা বলে না কেন? তারা ফিলিস্তিনের হাজার অসহায় নারী-শিশুকে যেভাবে ইসরাইলি বাহিনী হত্যা করছে, তা নিয়ে কথা বলেন না কেন? বিএনপি ঘরানার কয়েকজন লোকের মানবাধিকার, নাকি দেশের প্রতিটি মানুষের মানবাধিকারের কথা তারা বলছেন?’ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
মানবাধিকার নিয়ে কথা বললে সারা দেশের প্রেক্ষাপটে বলতে হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আজ যে মানুষের অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে, প্রেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে, মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যহত করা হচ্ছে, সেটাও মানুষের সাংবিধানিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ। এগুলো নিয়ে তারা কথা বলে না কেন? সেটি নিয়ে যখন কথা বলেন না, তখন আমরা বিরক্ত হই। কিন্তু মানবাধিকার নিয়ে কেউ কথা বললে আমরা বিরক্ত হই না।’
বিএনপির অসহযোগ আন্দোলন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের অসহযোগ আন্দোলন সফল। কারণ কেউ বিএনপিকে সহযোগিতা করছে না। কাজেই তাদের অসহযোগ আন্দোলন তাদের নিজেদের ক্ষেত্রে সফল। জিয়াউর রহমান কারফিউ দিয়ে দেশ চালাতেন। তিন বছর কারফিউ থাকত, প্রথমে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শুরু করেছিল, পরে রাত ১২টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত তিনি কারফিউ দিয়েছিলেন। বিএনপি জিয়াউর রহমানের কাছ থেকেই এসব শিখেছে।’
প্রার্থীর ওপর বিএনপি হামলা চালাতে পারে বলে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা জানি, তারা প্রার্থীদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছেন, যাতে ভোটটা বন্ধ হয়ে যায়। প্রার্থীদের ওপর হামলা করবে, হত্যা করবে, যাতে ভোট বন্ধ হয়ে যায়।’
এর ব্যাখ্যায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো একটি নির্বাচনী এলাকায় যদি কোনো প্রার্থী মারা যান, তাহলে সেই নির্বাচনটা বন্ধ হয়ে যায়। সে কারণে বিএনপি এমন পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু তাতে লাভ হবে না। তাদের সব পরিকল্পনা সন্ত্রাসীমূলক। এখন তারা প্রার্থীদের ওপর হামলা পরিকল্পনা করেছে। জঘন্য সন্ত্রাসী সংগঠন ছাড়া কেউ সেটা করে না।’