সংসদ নির্বাচন
সেলিম আহমেদ
প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:১৭ এএম
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৯ পিএম
বিনোদন জগৎ কিংবা খেলার মাঠ থেকে সংসদ সদস্য হওয়া নতুন কিছু নয়। এবারও একঝাঁক তারকা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ দলীয় মনোনয়নে, কেউবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নেমেছেন ভোটের লড়াইয়ে। চিরচেনা গণ্ডি থেকে বেরিয়ে দিনরাত চষে বেড়াচ্ছেন যার যার নির্বাচনী এলাকা। ভোটের জন্য যাচ্ছেন দুয়ারে দুয়ারে।
গত কয়েক দিনের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসান তাদের আসনে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে তেমন একটা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে ফেরদৌস, মাশরাফি, সাকিবরা অনেকটা নির্ভারই আছেন বলা যায়। তারকা প্রার্থীদের মধ্যে বাকিরা কমবেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পরও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে।
তারকাদের মধ্যে নীলফামারী-২ আসনে আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা-১০ আসনে ফেরেদৗস আহমেদ, মানিকগঞ্জ-২ আসনে মমতাজ বেগম, নড়াইল-২ আসনে মাশরাফি বিন মর্তুজা, মাগুরা-১ আসনে সাকিব আল হাসান নৌকার প্রার্থী। এর বাইরে বরিশাল-২ আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী সংগীতশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী ডলি সায়ন্তনী পাবনা-২ আসন থেকে নির্বাচন করছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে রাজশাহী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।
নির্বাচনী এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নীলফামারী-২ (সদর) আসনে পঞ্চমবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন ‘বাকের ভাই’ খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর। বিগত চারটি নির্বাচনে তাকে লড়তে হয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি জামায়াতের বিরুদ্ধে। কিন্তু এবার তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, যিনি এ আসনে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন। এই আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেনÑ জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি ও জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোরছালিন ইসলাম। ফলে এ আসনের নির্বাচন এবার অনেকখানি লড়াইপূর্ণ হবে।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলোর অন্যতম ঢাকা-১০ থেকে এবারের নির্বাচনে লড়ছেন আওয়ামী লীগসহ ৫ দলের প্রার্থী। কিন্তু ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফেরদৌস ছাড়া অন্যদের উপস্থিতি বিশেষভাবে চোখে পড়ে না। বেশিরভাগ ভোটারের কাছে তারা অচেনা। ফেরদৌস একাই চালাচ্ছেন সরব প্রচার। ফেরদৌস সহজেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে যাবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটররা।
নড়াইল-২ আসনে দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। গতবারের মতো এবারও তাকে নিয়ে ভোটারদের দারুণ উচ্ছ্বাস। এই আসনে মাশরাফির বিরুদ্ধে ৭ প্রার্থীর মধ্যে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও খুব প্রভাব ফেলতে পারছেন না। মাশরাফির জয় নিয়ে সমস্যা দেখছেন না অনেকেই।
মাগুরা-১ আসনে এবার নৌকার প্রার্থী জাতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান অধিনায়ক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। রাজনীতির মাঠে নতুন হলেও তাকে নিয়ে ভোটারদের ব্যাপক আগ্রহ। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগেরও কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। সাকিবের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের কাজী রেজাউল হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. সিরাজুস সায়েফিন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) কে এম মোতাসিম বিল্লা এবং তৃণমূল বিএনপির সঞ্জয় কুমার রায়। তবে তারা তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন বলে মনে করছেন না স্থানীয়রা। রাজনীতিতে সাকিবের অভিষেকটা জয় দিয়েই হবে বলে তারা আশাবাদী।
মানিকগঞ্জ-২ আসনে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও জয়ের পথ মসৃণ নয় লোকসংগীতের জনপ্রিয় শিল্পী মমতাজ বেগমের। তার বিরুদ্ধে ১০ প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই শক্তিশালী। ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান সফিউল আরেফিন, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু এবং ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাহাবুদ্দিন আহমেদ চঞ্চলের কারণে অনেকটেই চাপে রয়েছেন মমতাজ। এ আসনে এবার চতুর্মুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে।
বরিশাল-২ আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে গামছা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন আরেক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস। সুরে সুরে ভোটারদের তিনি দিচ্ছেন নানা আশ্বাস। তার প্রচারে চমক আছে। গ্রামের সাধারণ মানুষও তাকে দেখে উচ্ছ্বসিত। তবে জয়ের জন্য তাকে লড়াই করতে হবে অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে। এ আসনে রয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। শরিক দল হওয়ায় আওয়ামী লীগ তাকে এ আসন ছেড়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়েও শেরেবাংলার দৌহিত্র এ. কে ফাইয়াজুল হক এবং সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হয়েছেন। কাজেই নকুল বিশ্বাসের জন্য ভোটে জেতাটা মোটেও সহজ ভাবা যাবে না।
পাবনা-২ আসনে বিএনএমের প্রার্থী জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী প্রচারে বেশ সরব রয়েছেন। গণসংযোগকালে ভোটারদের অনুরোধে গানও গাইছেন তিনি। তার বিপরীতে ৮ প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের আহমেদ ফিরোজ কবিরের সঙ্গেই আসল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হবে তাকে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন রাজশাহী-১ আসনে। এই আসনে এবার প্রার্থী সংখ্যা ১১। তাদের মধ্যে ৫ জনই হেভিওয়েট প্রার্থী। বাকি ৬ জন রাজনীতিতে প্রায় নতুন মুখ। হেভিওয়েটদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান আক্তার আরেক স্বতন্ত্র গোলাম রাব্বানীকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ফলে সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন এ আসনে মূল লড়াই হবে ৪ জনের মধ্যে। বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী টানা ১৫ বছর ধরে এখানে এমপি থাকলেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে দলের মধ্যে তিনি অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে আছেন। এখন স্বতন্ত্র তিন প্রার্থীর সঙ্গে তাকে লড়াই করতে হচ্ছে। যাদের মধ্যে অন্যতম ধরা হচ্ছে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মন্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানীকে। এরপরই রয়েছেন মাহিয়া মাহি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সাবেক স্ত্রী আয়েশা আক্তার ডালিয়া।