× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ফিরে দেখা ২০২৩

আওয়ামী লীগ ব্যস্ত ছিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়

দীপক দেব

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৮ এএম

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৮ এএম

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ফাইল ছবি

বছরজুড়ে রাজনৈতিক মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে বিরোধীদের মোকাবিলা করার পাশাপাশি এবার বিদেশি পরাশক্তিগুলোর ‘চাপ’ও সুকৌশলে সামলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলোর সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের বিপরীতে শান্তি সমাবেশ, শান্তি শোভাযাত্রার মতো কর্মসূচি পালন করে মাঠের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখেন আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো শক্তিধর দেশ ও গোষ্ঠীর নির্বাচনকেন্দ্রিক চাপও সামাল দেওয়া হয়েছে সুকৌশলে। পাশে নিতে পেরেছে ভারত ও চীনকে।

রাজনীতিসচেতন অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কৌশলে বছরজুড়ে বিদেশি চাপ ও বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবিলা করে বিদ্যমান ব্যবস্থায় আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে অনেকটাই সফল হয়েছে। সব মিলিয়ে ২০২৩ সাল আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ঘটনাবহুল একটি বছরই ছিল। 

শান্তি সমাবেশের পাল্টা কৌশল 

২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ শুরু হয়। সেই সময় বিএনপি নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সমাবেশ করার বিষয়ে অনড় অবস্থানে থাকে। তবে সেখানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি না দেওয়ায় সমাবেশটি শেষ পর্যন্ত বিকল্প স্থান রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশের দুই দিন আগে থেকেই মাঠে তৎপর ছিল আওয়ামী লীগ। পুরো রাজধানী নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তৎপর ছিলেন দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতারাও। শেষ পর্যন্ত পল্টনে সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ার জন্য ওই দিন সাভারে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। এর আগে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। ২০২৩ সালে বছরজুড়ে বিএনপির প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিরই পাল্টা হিসেবে শান্তি সমাবেশ করে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ।

২৮ জুলাই মোকাবিলা তিন সংগঠন দিয়ে

গত ২৮ জুলাইয়ের কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল বিএনপির পক্ষ থেকে। এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে পাল্টা কৌশল খাটায় বিএনপি। প্রথমে ২৭ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার অনুমতি চায়। প্রশাসন বৃহস্পতিবার কর্মদিবস হিসেবে উল্লেখ করে অনুমতি না দিলে পরে এক দিন পিছিয়ে শুক্রবার ২৮ জুলাই সেই সমাবেশ করে বিএনপি। এর পাল্টা হিসেবে আওয়ামী লীগ তার তিন সংগঠন দিয়ে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তৃতা করেন। বিএনপির এই সমাবেশ সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানার পাশাপাশি ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোতেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। ২৮ জুলাইয়ের পাশাপাশি পরদিন ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলো ঘেরাও কর্মসূচিও মোকাবিলা করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ফলে এই দফাতেও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে ব্যর্থ হয়ে যায় বিএনপির আন্দোলন। 

২৮ অক্টোবর মোকাবিলা 

২৮ অক্টোবর সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল বিএনপি। এই কর্মসূচি থেকে সরকার পতনের লক্ষ্যে লাগাতার কর্মসূচি চালানো হতে পারে এমন কথাও চাউর ছিল। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যেভাবে বসে গিয়েছিল একই কায়দায় বিএনপির নেতারা এখানে বসে যাবেনÑ এমন আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে। সেদিনও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। সেই কর্মসূচি থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রথমে কাকরাইল এলাকাতে সমাবেশে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালান। সেখান থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা শুরু করেন। সংঘর্ষের পর শেষ পর্যন্ত পণ্ড হয়ে যায় বিএনপির ২৮ অক্টোবর মিশন। 

এ ঘটনার পর ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দেয় বিএনপি। পাল্টা হিসেবে কর্মসূচি হিসেবে সারা দেশে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হরতাল এখন ভোঁতা অস্ত্র। এ অস্ত্রে কোনো কাজ হবে না। আমরা শান্তি চাই। এজন্য সারা দেশে শান্তি সমাবেশ করব।’ গত ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে অগ্নিকাণ্ডের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কর্মসূচি পালন করা হয়। 

সামাল দেওয়া হয় বিদেশি মহলগুলোকেও 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ও আওয়ামী লীগের ওপর ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করা হয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ ও দাতা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা এসে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। একই সঙ্গে নতুন ভিসানীতিও ঘোষণা করা হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষ থেকে সংবিধানের বিষয়টি সামনে এনে ও বিএনপির অতীত রাজনীতির বিষয়গুলো তুলে ধরার কৌশল অবলম্বন করে বিদেশিদের সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে সংলাপ ও বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়টি নিয়ে বিদেশিদের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হলেও তা কৌশলেই প্রত্যাখ্যান করা হয়। ২৮ অক্টোবরের পর বাংলাদেশের বড় তিনটি দলকে চিঠি দিয়ে ‘পূর্বশর্ত ছাড়া’ সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। সেই চিঠির ইতিবাচক সাড়া দেয় বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে চিঠি নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চিঠির বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। পরে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সচিবালয়ে গিয়ে লু’র সেই চিঠি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে পৌঁছে দেন। তখন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সময়কে কারণ হিসেবে দেখিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেনÑ ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে, এই মহূর্তে সংলাপের আর সুযোগ নেই।’ এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতা নিয়েও মুখ খুলতে শুরু করে আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে পরিচিত রাশিয়া। এ ছাড়া চীন ও ভারত নির্বাচনের পক্ষে নিজেদের অবস্থানের কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে এমন বার্তাও দেওয়া হয়েছে দেশগুলোর পক্ষ থেকে। ফলে কূটনৈতিকভাবেও নেওয়া কৌশলগুলোতে সফলতা আসার ফলস্বরূপ ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলেও মনে করে রাজনীতিসচেতন মহল।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা