× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সমঝোতা আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগের তৃণমূল

দীপক দেব

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৫ এএম

প্রবা ফটো

প্রবা ফটো

নির্বাচনী কৌশল নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত আর তৃণমূলের বাস্তবতা এবার এক সুরে মিলতে পারছে না। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছন্দপতনই দেখা যাচ্ছে। এবারের বাস্তবতা হচ্ছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিক ও মিত্রদের আওয়ামী লীগ যে ৩২টি আসনে ছাড় দিয়েছে তা মাঠপর্যায়ে গিয়ে আর ধোপে টিকছে না। সমঝোতার বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আসন সমঝোতার ভিত্তিতে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে নৌকার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও দেখা যাচ্ছে প্রায় সবখানেই রয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দলীয় নেতাকর্মীরা নৌকার প্রার্থী না থাকলেও ঝুঁকে আছেন সেসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর দিকে। বিষয়টি আগেভাগে অনুধাবন করে শরিক ও মিত্র দল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে স্বতন্ত্রদের তুলে নেওয়ার জোর দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ। যদিও আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর শরিক ও মিত্রদের আশঙ্কাই সত্য বলে প্রমাণিত হতে শুরু করেছে। ছাড় দেওয়া ৩২ আসনের অনেকগুলোতেই শরিক ও মিত্র দলের প্রার্থীদের পরিবর্তে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো থেকে প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনেও এই পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিপরীত ভূমিকা নেওয়ায় ছাড় পেয়েও ভোটের মাঠে ভালো অবস্থানে নেই শরিক ও মিত্র দলের প্রার্থীরা। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করার পর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে এই প্রথম শরিকদের এমন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমন্বয় না করা গেলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।

শরিকদের ৬ আসনের চালচিত্র

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে ছয়টি আসন ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) তিনটি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি আসন পেয়েছে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০টি আসন ছাড় দেওয়া হয়েছিল শরিকদের। তারা এবার আরও বেশি আসনের প্রত্যাশায় থাকলেও তা পূরণ হয়নি। তবে অতীতের তিন নির্বাচনের মতো এবারও শরিকদের ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে নৌকার প্রার্থীদের তুলে নিয়ে তাদের স্থানে শরিক দলের প্রার্থীদেরই নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শরিকদের আপত্তি সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তুলে নেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে ভাগে পাওয়া ছয়টি আসনের প্রতিটিতেই স্বতন্ত্রদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে শরিক প্রার্থীদের। ভোটের আগেই শরিক দলের প্রার্থীদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। অতীতে শরিক দলের প্রার্থীদের পাশে থেকে তাদেরকে প্রচারে অংশ নিতে দেখা গেলেও এবার ব্যতিক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে প্রায় সবখানে। তারা এবার দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। এমনকি এলাকার গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও এ বিষয়ে নীরবতা পালন করছেন। 

শরিক দলগুলোর আসনগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচারও শুরু করেছেন শরিক দলের প্রার্থীরা। নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রচারে তাদের নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীরা সঙ্গে থাকলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আগের মতো তেমন একটা পাশে থাকতে দেখা যায়নি। এমনকি জরুরি সভা ডেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে থাকার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। 

রাজশাহী প্রতিবেদক রাজু আহমেদ জানান, রাজশাহী-২ (সদর) আসনে এবারও ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ২০০৮ সাল থেকে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে টানা তিন মেয়াদে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনিই মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত প্রচারের প্রথম পাঁচ দিনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কাউকে তার সঙ্গে দেখা যায়নি। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েও সমঝোতার পর বসে যেতে হয়েছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামালকে। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেককেই তার সঙ্গে মাঠে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এমনকি গতকাল মতবিনিময় সভা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়ামে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশাকে অনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানিয়ে এই মতবিনিময় সভা আয়োজন করেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। সভায় মহানগর আওয়ামী লীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সব মহল্লা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসলাম সরকার বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটি ওয়ার্ড ও মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের মধ্য থেকেই প্রার্থী চায়। তাদের চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই আমাদের এই সিদ্ধান্ত।’

জানা গেছে, প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার দুই দিন পর গত বুধবার প্রচারে নামেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। গত নির্বাচনগুলোতে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর ও ভেড়ামারা) আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। শুরু থেকেই এই আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। তবে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগকারী উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুল আরেফিন ট্রাক প্রতীক নিয়ে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেককেই তার পাশে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় এই দুই উপজেলায় জাসদের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের বিরোধের কারণে এবার তারা প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। জাসদের উপ দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন গতকাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতাকর্মী সাময়িক বিরোধিতা করলেও ধীরে ধীরে সবাই জোটের প্রার্থীর পক্ষেই সংগঠিত হওয়া শুরু করেছেন।

এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। গত তিন নির্বাচনে তিনি ঢাকা-৮ আসন থেকে নৌকা নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার দলের নেতাকর্মীদের বিরোধিতার মুখে তাকে প্রথমে বরিশাল-৩ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলা হলেও শেষ মুহূর্তে সেটাও পরিবর্তন করে বরিশাল-২ আসন থেকে তাকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তও মেনে নিতে চাইছেন না এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। বরিশাল-২ আসন থেকে দলীয় প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনূস মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলেও এখানে তাদের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেনÑ বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নাতি ফাইয়াজুল হক। গত ১৮ ডিসেম্বর বিকালে বানারীপাড়ায় আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভায় যোগ দিলে নৌকার প্রার্থী রাশেদ খান মেননের সামনেই আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। বর্তমান সংসদ সদস্য শাহে আলমের অনুসারী ও তালুকদার মো. ইউনূসের সমর্থকদের মধ্যে ঘটা এই সংঘর্ষের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে ঐক্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব নৌকার প্রার্থী মেননের ভোটেও পড়বে বলে অনেকেই মনে করেন। 

জোটের আরেক হেভিওয়েট নেতা জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান ও টানা সাতবারের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে এবারও পি‌রোজপুর-২ আসনে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন জেলা আওয়ামী লী‌গের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কানাই লাল বিশ্বাস। তবে এ আসনে পিরোজপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন মহারাজ মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করেন, গত তিন নির্বাচনের মতো নৌকা পেলেও এবার আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জন্য ভোটের লড়াই খুব সহজ হবে না। 

আলোচনায় না থেকেও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে নৌকা পেয়ে যাওয়া জাসদের মোশাররফ হোসেনও স্বতন্ত্র প্রার্থীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। এ আসনে নৌকার সঙ্গে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর তুমুল লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয়রা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে লড়ছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইস্কান্দার মির্জা শামীম। ঈগল মার্কা নিয়ে মাঠে নেমেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আব্দুল্লাহ। তার স্ত্রী মাহমুদা বেগমও এ আসনে লড়ছেন তবলা মার্কা নিয়ে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহায়েদ মুরাদসহ অনেক নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ অবস্থায় নৌকা পেলেও মোশাররফ হোসেনের পাশে নেই আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ। তাকে ছাড় দেওয়ায় দলের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। 

বগুড়া থেকে মোহন আখন্দ জানান, অন্য পাঁচ প্রার্থীর তুলনায় কিছুটা হলেও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বগুড়া-৪ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হওয়া জাসদের রেজাউল করিম তানসেন। ২০০৮ সাল থেকেই আসনটি জাসদকে ছেড়ে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ২০০৮ ও ২০১৮ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন তানসেন। ২০১৪ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। তবে ২০১৮ সালে তিনি পরাজিত হন। পরে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যের পদত্যাগের ফলে ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে তিনি আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে আসনটি জাসদকে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না তৃণমূল আওয়ামী লীগ। কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলার আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ বলছেন, দলীয় প্রার্থীকে সরিয়ে নেওয়ায় এবার নৌকার সমর্থক ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নেওয়া কঠিন হবে। আসনটিতে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। তবে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। তৃণমূল আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা না পেলে তানসেনের জন্য জয় পাওয়া কঠিন ভাবছেন অনেকেই। 

জাপাও চ্যালেঞ্জে রয়েছে অনেক আসনে

সমঝোতায় ২৬ আসন পেয়েও আওয়ামী লীগ ও নিজ দলের স্বতন্ত্রদের কারণে স্বস্তিতে নেই জাতীয় পার্টি। অন্তত তিনটি আসনে জাপার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে মাঠে আছেন দলটিরই মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা। এজন্য ছাড় পাওয়া ২৬ আসনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি আসনেই স্বতন্ত্রদের নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে তাদের প্রার্থীদের।

জানা গেছে, অনেক দেনদরবারের পর ঢাকা-১৮ আসনটি শেষ মুহূর্তে জাপাকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এখানে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদের প্রার্থী হয়েছেন। এই আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেটলি প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন। ফলে শেরিফা কাদের লাঙ্গল নিয়ে কতটা নৌকার ভোট টানতে পারবেন, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। 

নীলফামারী-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রানা মোহাম্মদ সোহেলের বিপরীতে আওয়ামী লীগের চারজনসহ মোট পাঁচজন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে নীলফামারী-৪ আসনে জাপার বর্তমান সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমানকে। কাছাকাছি অবস্থা গাইবান্ধা-২ আসনেও। জাতীয় পার্টির মো. আব্দুর রশীদ সরকারের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে ভোটে নামা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ সারোয়ার কবীর। সাতক্ষীরা-২ আসনে জাপার মো. আশরাফুজ্জামানের সামনেও আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। অন্যদিকে রংপুর-১ আসনে জি এম কাদেরের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়বেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকা জাপার সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার দিক থেকে। একই অবস্থা পিরোজপুর-৩ আসনে। সেখানে জাপার বর্তমান সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় প্রার্থী মো. মাশরেকুল আজমকে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে। ময়মনসিংহ-৮ আসনে জাপার ফখরুল ইমামকে লড়তে হবে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া মাহমুদ হাসানের বিরুদ্ধে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার সামনে শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. মঈন উদ্দিন। 

মানিকগঞ্জ-১ আসনে জাপার জহিরুল আলমের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন মাহমুদ। অন্যদিকে হবিগঞ্জ-১ আসনে জাপার মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরীকে লড়তে হবে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর সঙ্গে। এ ছাড়া ফেনী-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক সংসদ সদস্য রহিম উল্লাহ। চট্টগ্রাম-৫ আসনে জাপার কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী। চট্টগ্রাম-৮ আসনে জাপার সোলায়মান আলম শেঠকে স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। বরিশাল-৩ আসনে জাপা প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়াকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আতিকুর রহমানের সঙ্গে লড়তে হবে। বগুড়া-২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বিএনপির সাবেক নেত্রী বিউটি বেগম। 

তবে এ রকম পরিস্থিতিতেও জাপা তাদের একার শক্তিতে জিতে আসতে পারবে এমন কিছু আসনও রয়েছে। যেমনÑ শামীম হায়দার পাটোয়ারীর গাইবান্ধা-১, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের ঠাকুরগাঁও-৩, জি এম কাদেরের রংপুর-৩, মুজিবুল হক চুন্নুর কিশোরগঞ্জ-৩, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের পটুয়াখালী-১, এ কে এম সেলিম ওসমানের নারায়ণগঞ্জ-৫, এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমানের কুড়িগ্রাম-১, পনির উদ্দিন আহমেদের কুড়িগ্রাম-২, নূরুল ইসলাম তালুকদারের বগুড়া-৩ ও সালাহ উদ্দিন আহমেদের ময়মনসিংহ-৫ আসন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা