বাছির জামাল
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:৫১ পিএম
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:২৮ এএম
সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় আগামী ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের পর থেকে মামলা-গ্রেপ্তারসহ নানা চাপের মুখে থাকায় এসব দল নির্বাচন প্রতিরোধ করার মতো কোনো কর্মসূচি দেবে না। যদিও জনগণ যাতে ভোটে অংশগ্রহণ না করে এবং ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটাররা উপস্থিত না হয়, সেজন্য নানা পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো। তাদের লক্ষ্য, আগামী নির্বাচন যে ‘একতরফা’ হচ্ছে, সেটি প্রমাণ করা।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকে তারা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। ওইদিন হরতালও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কুয়েতের আমীরের মৃত্যুতে ওইদিন রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করায় তা এক দিন পেছানো হয়। তবে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। বিএনপি হাইকমান্ড থেকে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখা হবে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। একই সঙ্গে ভোট বর্জনের নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা দিতে পারে বিএনপি।
অবশ্য এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তিনি শুধু জানিয়েছেন, বিএনপি হাইকমান্ড বুধবার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবে।
ভোট বর্জনের অসহযোগধর্মী কর্মসূচি
বিএনপি ও মিত্র দলগুলোর জ্যেষ্ঠ নেতারা জানাচ্ছেন, বুধবার বিএনপি হাইকমান্ডের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ভোট বর্জনের কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। এই কর্মসূচি হবে অনেকটা অসহযোগধর্মী। নীতিনির্ধারকরা চিন্তা করছেন দুই পর্যায়ে ভোট বর্জনের কর্মসূচি দেওয়ার। প্রথম পর্যায়ে প্রাথমিকভাবে আগামী শুক্রবার থেকে ভোট বর্জনের আহ্বান-সংবলিত লিফলেট-প্রচারপত্র বিলির মাধ্যমে সারা দেশে গণসংযোগ কর্মসূচি শুরু করতে পারে বিএনপি ও তার মিত্র সংগঠনগুলো। এ পর্যায়ে সামাজিক মাধ্যম, পথসভা, উঠোন বৈঠক ইত্যাদির মাধ্যমে ভোটে না গিয়ে তা চূড়ান্ত বর্জনের জন্য জনগণের কাছে আহ্বান জানানোর চিন্তা আছে বিএনপির। তবে পাশাপাশি নির্দিষ্ট বিরতিতে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিও থাকবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অসহযোগের এলাকা ও ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হবে।
নেতারা বলছেন, প্রথম পর্যায়ের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে আন্দোলনকে যদি বেগবান করা যায়, তাহলে দ্বিতীয় পর্যায়ে অসহযোগ আন্দোলনের মতো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে দেশবাসীর প্রতি অফিস-আদালত বর্জন, যান চলাচল বন্ধ ও কলকারখানা বন্ধ রাখা তথা সরকারকে সর্বোতভাবে অসহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হতে পারে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় বিরোধী দলগুলোর এই অসহযোগিতার আহ্বান বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ে হাইকমান্ডেও সংশয় রয়েছে। এজন্য পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে এরকম কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে কি না, তা ঠিক করা হবে বলে জানা গেছে।
নতুন বছরে আসতে পারে টানা অবরোধ-হরতাল
বিএনপির মিত্র দলগুলোর কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, নতুন বছরের প্রথমদিকে বিশেষ করে জানুযারির প্রথম কিংবা দ্বিতীয় দিন থেকে একেবারে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত অবরোধ ও হরতালের মতো টানা কর্মসূচি রাখা যায় কি না, তা নিয়ে তারা আলোচনা করছেন।
এ ব্যাপারে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র জোট গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা নির্বাচন বর্জনের ডাক ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত রাখব। এই আহ্বান দেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেব। আমরা আন্দোলনের সমস্ত ফর্ম অনুসরণ করব। সহিংসতা, উস্কানিতে পা না দিয়ে ভোট বর্জনের তৎপরতা অব্যাহত রাখব।’
তিনি বলেন, ‘অসহযোগের মাত্রা আরও বিস্তৃত হবে কি না, তা পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। রাজপথে গণবিস্ফোরণ হবে, তবে এটা কখন হবে তা এখনই বলতে পারছি না।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী ছাড়া ভোটে আর কোনো বিরোধী রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। এ ব্যাপারটি নিয়ে নানা কোলাজ তৈরি করে প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থীর নামে দলীয় নেতাকর্মীদের ডামি প্রার্থী ও নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল গঠন করে তাদেরকে প্রার্থী করার তথ্যসংবলিত নানা প্রচারপত্রও তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো দেশের জনগণের পাশাপাশি কূটনীতিকদের কাছেও তুলে ধরা হবে।’
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে উচ্ছ্বাস কিংবা আগ্রহ কোনোটাই নেই। এটা ইতোমধ্যে স্পষ্ট যে, নির্বাচনের দিন ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে কোনোরূপ ভোট দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে গেছে। কারণ নির্বাচনের ফলাফল ইতোমধ্যে নির্ধারিত হয়ে গেছে, মানুষের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন চিরতরে ফুরিয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল পাতানো নির্বাচনের তফসিল বর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্বও এ নির্বাচন নিয়ে আস্থাহীনতার প্রশ্ন তুলেছে। কারণ তারা বুঝে গেছে, নির্বাচনের নামে এখানে কত বড় প্রহসন হতে যাচ্ছে।’