× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

২৭ এমপির অনেককেই ছাড় নয়

দীপক দেব

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৩৬ এএম

আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৪৯ এএম

২৭ এমপির অনেককেই ছাড় নয়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার কৌশলের অংশ হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে নমনীয় থাকলেও সব প্রার্থীর জন্য সেটা উন্মুক্ত রাখতে চায় না আওয়ামী লীগ। আগামীকাল ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় শেষ হওয়ার পর প্রার্থী তালিকা এবং আসনভিত্তিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা শুরু করবে দলটি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সময় নেওয়া হবে ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগের দিন পর্যন্ত।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এক্ষেত্রে দলের মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়া ৭১ এমপির মধ্যে যারা নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন, তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আসতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের অনেকের ভোটে থাকার ব্যাপারে আসতে পারে নিষেধাজ্ঞা। আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত এমপিদের মধ্যে মোট ২৭ জন এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাদের মধ্যে কারও কারও আবার দলের মধ্যে শক্ত অবস্থান রয়েছে। তবে দল থেকে এমন সকল প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হবে। 

যদিও অতীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিভিন্ন পর্যায়ে দল থেকে এই ধরনের চাপ উপেক্ষা করে অনেকেই নির্বাচন করেছেন, বিজয়ী হয়েছেন। তাদের সবাইকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও আবার দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সেখানে দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বিপক্ষে স্বতন্ত্র দাঁড়িয়ে জয়ী হন সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মাকে নির্বাচন করানোর জন্য জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে জাহাঙ্গীর আলমকে আবারও দলে ফিরিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ। 

অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য হয়েও রাজনৈতিকসহ নানা কারণে দলের মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি এমন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়েও আওয়ামী লীগের নমনীয় মনোভাব থাকবে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্য। এই সময় ফরিদপুর-৪ আসনের বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে দলের একটি সূত্র জানায়, গত দুই নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েও কাজী জাফর উল্যাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের কাছে পরাজিত হন। এবারও দল থেকে কাজী জাফর উল্যাহকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন বর্তমান এমপি নিক্সন চৌধুরী। আগের দুই দফায় দলের মনোনয়ন না চাইলেও এবারই প্রথম দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন নিক্সন চৌধুরী। অন্যদিকে কাজী জাফর উল্যাহকে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করায় অনেকেরই ধারণা ছিল তিনি এবার ভোট করবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এবারও তার ওপর আস্থা রাখে দল, বাদ পড়েন নিক্সন। অন্য আসনের স্বতন্ত্র আর এই আসনের হিসাব এক নয়, এজন্য প্রতিটি আসনের এমন বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একটা সিদ্ধান্ত সবার ওপর প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না- ভিন্ন ভিন্ন কারণ ও প্রেক্ষাপটের জন্য। 

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে দলের দায়িত্বশীল নেতাদের মধ্যে যে আলোচনা রয়েছে, তাতে দল থেকে সকলের জন্য এক রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। সর্বজনীন সিদ্ধান্ত না নিয়ে আসন ও প্রার্থী বিবেচনায় সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে অন্য দলের প্রার্থীদের উপস্থিতি আছে এমন আসনগুলোতে দলীয় প্রার্থীর জন্য সমস্যা হতে পারে- এমন প্রার্থীদের দল থেকে বসে যেতে চাপও দেওয়া হতে পারে।

আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বলেন, নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে ডামি বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর যে নির্দেশনা হাইকমান্ড থেকে দেওয়া হয়েছে তা সকলের জন্য ঢালাও নয়। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের মতে, আওয়ামী লীগ সভাপতির ওই বার্তা নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়ে অনেকে প্রার্থী হয়েছেন এবং মাঠে থাকার চেষ্টা করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত এই সুযোগ দেওয়া হবে না। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর দলীয়ভাবে যাচাই-বাছাই শুরু করা হবে। এক্ষেত্রে আসন ধরে ধরে কাজ হবে। সবার জন্য এক সিদ্ধান্ত দিতে চায় না দলের হাইকমান্ড। প্রার্থীর অবস্থান, এলাকার রাজনীতি, জোটের শরিকদের সঙ্গে সমন্বয় করা আসনগুলোতে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যারা দলের মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়েছেন, তাদের ভোটের মাঠে না থাকতে দল থেকে নিরুৎসাহিত করা হবে। 

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ শনিবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হবে ৪ ডিসেম্বর। এরপর এসব বিষয়ে দলীয়ভাবে আলাপ-আলোচনা ও পর্যালোচনা শুরু হবে।’ 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কামরুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সময়মতো স্বতন্ত্রদের বিষয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া ঠেকানোর জন্য ডামি প্রার্থীর কথা বলেছেন। কিন্তু যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তারা নেত্রীর বক্তব্যকে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করে প্রার্থী হয়েছেন। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরই মধ্যে কিছু বিষয়ে কথা বলেছেন। ১৭ তারিখের আগেই দলের অবস্থান পরিষ্কার করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। শনিবার তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ডিসেম্বরের ৪ তারিখের পর এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, সবাই এখন নিজের নিজের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। তাই সময়মতো এসব বিষয়ে জানানো হবে।’ 

এদিকে নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এবার মোট ২৯টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৯৬৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। স্বতন্ত্রসহ মোট প্রার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ৭১১ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪৪২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়া এমপির সংখ্যা ৭১। এদের মধ্যে ২৭ জন দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট করার লক্ষ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে মাঠে রয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে এসব এমপির অনেকেই বলেছেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের সঙ্গে রয়েছে। কেন্দ্রকে ভুল বার্তা দিয়ে মনোনয়নবঞ্চিত করা হয়েছে, নির্বাচনে জয়ী হয়ে তা প্রমাণ করতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা তো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। স্বতন্ত্র প্রার্থী যদি হেভিওয়েট কারও সীমানা পেরিয়ে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে যায়, সেটা স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়। এটাতে আমরা বাধা দিতে পারি না। গণতন্ত্র হলো প্রতিযোগিতা। সুষ্ঠু নির্বাচন, সুস্থ প্রতিযোগিতা। এখানে প্রার্থীকে প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করি আমরা। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টার কোনো অভিযোগ পাইনি। নির্বাচন করুক, দেখা যাক, যাকে জনগণ চায়, সে-ই জিতবে।

ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাদের ভাই এই বিষয়ে গত কয়েকদিন ধরেই বলে যাচ্ছেন। শনিবার সর্বশেষ যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে যারা জনপ্রিয় তাদের বিষয়ে একটা ইঙ্গিত আছে। সুতরাং দল থেকে সবার বিষয়ে আলাদাভাবে খোঁজ নেওয়া হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতি জনসমর্থন কেমন সেটাও দেখা হবে, তারপরে সিদ্ধান্ত। সবার জন্য ঢালাওভাবে এক ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা