প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ২২:২৮ পিএম
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:০৩ পিএম
সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে বিএনপির সহযোগী কয়েকটি দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিসহ ‘১২ দলীয় জোট’-এর কয়েকটি দল রয়েছে। এসব দল বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ছিল।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল হাসান সাকিব গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার (আজ) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। এতে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বক্তব্য রাখবেন।
যুক্তফ্রন্টের সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা আব্দুল্লাহ আল হাসান সাকিব জানান, যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ১৫-১৬টির মতো দল। এর মধ্যে রয়েছে মুসলিম লীগ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, জাতীয় পার্টি (মতিন) প্রভৃতি।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক ১২টি দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নতুন জোট ‘‘১২ দলীয় জোট’ আত্মপ্রকাশ করে। এই জোটে ছিল জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টি, জাতীয় দল, বাংলাদেশ এলডিপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল- জাগপা (তাসমিয়া প্রধান), এনডিপি, এলডিপি (সেলিম), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল ), জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক পার্টি এবং সাম্যবাদী দল। এই জোটের মধ্যে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোটের নিবন্ধ রয়েছে।
এই দলগুলো মধ্যে জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম গতরাতে ঘোষণা করেছে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তাদের নেতৃত্বে সমমনা ৬টি ইসলামী দল রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
এদিকে গণঅধিকার পরিষদ (নুর) ও ১২ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টিও (জাগপা-রাশেদ প্রধান) নির্বাচেন যাওয়ার ঘোষণা দিতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
কিন্তু নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি নাকচ করে নুর বলেন, হালুয়া রুটির আসন ভাগাভাগিতে আমরা নেই। আমরা এই সরকারের অধীনে পাতানো নির্বাচনে যাব না। একই কথা বলেন জাগপার নেত্রী ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান।
গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে দশ দফার ভিত্তিতে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। এরপর গত ১২ জুলাই থেকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে আন্দোলনে নামে দলটি। ৪২টির মতো দল এই যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপিসহ ৮টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করেই ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে যুগপতের শরিকদের। তবে বেশ কিছুদিন ধরে যুগপতের নিবন্ধিত একাধিক দল বিএনপিকে ছেড়ে নির্বাচন যেতে পারে বলে রাজনৈতিক অঙ্গণে জোর গুঞ্জন শুরু হয়। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারি চাপ এবং এমপিত্বের প্রলোভনে পা না দিতে বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় যুগপৎ শরিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নির্বাচনে যাবে না ৬ ইসলামি দল
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সমমনা ৬টি ইসলামী দল। দলগুলো হলো বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। এই দলগুলোর মধ্যে কেবল বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়াতে উলামায়ে ইসলামের নিবন্ধন রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর একটি মাদরাসায় বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয় দলগুলো। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রধান আমীরে শরীয়ত মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর সভাপতিত্বে এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় উল্লেখিত দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়া দলগুলো সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সহযোগী জোট হিসেবে আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। বিএনপির সমমনা দল ও জোটগুলো বর্তমানে দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। আজ বুধবার থেকে তাদের আন্দোলনে ষষ্ঠ দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। অপর দিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতিমধ্যে মনোনয়ন ফরম বিক্রিও সম্পন্ন করেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করতে হয়। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। এর আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে।