কাজী হাফিজ
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ০০:৫২ এএম
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:২৪ পিএম
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিধি ভেঙে ব্যানার-ফেস্টুন হাতে মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এসে জড়ো হয়েছেন। প্রবা ফটো
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পাঁচ দিন পার হয়ে গেলেও নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন তৎপরতা নেই। গতবারের নির্বাচনের তুলনায় এবার কিছুটা কম হলেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার সব নির্বাচনী এলাকায় এখনও বহাল। কমিশন এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠালেও তার ফলাফল শূন্য। দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহে মিছিল ও শোডাউনও নির্বাচনী আচরণপরিপন্থি। এ সময় সম্ভাব্য প্রার্থী ও তার সমর্থকদের নির্বাচনী পোস্টার-ফেস্টুন বহন করা ও কোনো প্রতীকের পক্ষে ভোট চাওয়াও নির্বাচনী আচরণপরিপন্থি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন গতকাল সোমবার পর্যন্ত এ বিষয়ে দলগুলোকে সতর্ক করেনি।
দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় আচরণবিধি ভঙ্গ হচ্ছে কি না, হলে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন কি নাÑ এ প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান গতকাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এ বিষয়ে মঙ্গলবার (আজ) কথা বলব।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারসামগ্রী অপসারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।
প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিক্রির সময় ব্যাপক ভিড়ের মধ্যে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সে সময় কেএম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় মিছিল ও শোডাউন নির্বাচনী আচরণপরিপন্থি হিসেবে চিহ্নিত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিল।
আচরণবিধিতে যা বলা আছে
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধির ১২ বিধিতে বলা আছে, ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করা যাবে না। আর ১৭ বিধিতে এই মর্মে বলা আছে যে, এ ধরনের প্রচারকে ‘নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম’ হিসেবে গণ্য করা হবে। কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ এ অনিয়ম করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। কোনো দল এ অনিয়ম করলে অনধিক ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের পক্ষে একটি নির্দেশনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন, বিলবোর্ড, গেট, তোরণ বা ঘের, প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জা ইত্যাদি প্রচারসামগ্রী ও নির্বাচনী ক্যাম্প থাকলে সেগুলো অপসারণ করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
এ লক্ষ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণাসামগ্রী থাকলে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিজ খরচে অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিয়েছে। এজন্য সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়।
দলের নির্দেশও মানছেন না সম্ভাব্য প্রার্থীরা
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিল, অতিরিক্ত লোকসমাগম ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। প্রত্যেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সর্বোচ্চ দুজনকে সঙ্গে নিয়ে আসতে পারবেন। কিন্তু দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ-ই তা মানছেন না। এ পরিস্থিতিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কর্মী-সমর্থকদের প্রচণ্ড ভিড়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালের সামনে জন ও যান চলাচলে এক ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউসহ আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পল্টন মোড় হয়ে গুলিস্তানের দিকে আসা রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে গত রবিবার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকতে না পেরে ফিরে যান।
এ পরিস্থিতিতে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের মূল ফটকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কার্যালয়ের ভেতর থেকে বারবার মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে, শৃঙ্খলা না ফিরলে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হবে না। কিন্তু তারপরও নির্দেশনা মানেননি বেশিরভাগ মনোনয়নপ্রত্যাশীই।
সরেজমিন দেখা যায়, শত শত নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে মিছিল করে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে আসছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তাদের কারও কারও অনুসারীরা একই রঙের টি-শার্ট পরেছেন। অনেকে আবার বাদ্য বাজাতে বাজাতে আসছেন। গত তিন দিনই একই দৃশ্যপট বহাল ছিল।
জাতীয় পার্টিতেও একই অবস্থা
রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনেও দলের মনোনয়ন ফরম বিতরণে সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা আচরণবিধি মানছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিন লেখা ফেস্টুন- পোস্টার বহন করছেন। অনেকে লাঙ্গল নিয়ে মিছিলসহ আসছেন। এসব সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ভিড়ে ওই এলাকাতেও যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।