× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাজনীতিতে গুঞ্জন

সংলাপের উদ্যোগ নিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি?

বাছির জামাল ও দীপক দেব

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪০ এএম

আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১১:০২ এএম

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ফাইল ছবি

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ফাইল ছবি

আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আওয়ামী লীগ ও দলটির মিত্ররা তফসিলকে স্বাগত জানালেও তা প্রত্যাখ্যান করে এর প্রতিবাদে দুই দিনের হরতাল দিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। দেশে একদিকে বইছে ভোটের হাওয়া, অন্যদিকে আন্দোলনের উত্তাপ। জনমনে দেখা দিয়েছে উৎকণ্ঠা। এই অবস্থায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতি একটি সংলাপের আয়োজন করতে যাচ্ছেন এমন গুঞ্জন ছড়িয়েছে।

কোনো সূত্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা না গেলেও এটাকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। কোনো কোনো রাজনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, জাতির অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতি অতীতের মতো সংলাপের উদ্যোগ নিলে সেটা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নয়, পুরো জাতির জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-এটা সব পক্ষের উপলব্ধি করা উচিত এমনটাও মনে করেন তারা। 

জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টিতে জোর দেয়। এক্ষেত্রে সরকার বা ক্ষমতাসীন দলকে এই উদ্যোগ নিতে হবে এমন কথাও বলা হয় দলটির পক্ষ থেকে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শর্তহীনভাবে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে তিন রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেওয়া হয়। জাতীয় পার্টি ও বিএনপি সংলাপের প্রস্তাবকে গ্রহণ করলেও সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে ‘এখন আর সংলাপের সুযোগ নেই’ বলে জানিয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। এ সময় বলা হয়, ২৮ অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচির আগে কেন এই আহ্বান জানানো হয়নি। বিএনপিও আগে এ নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখায়নি, তাদেরকে জ্বালাও-পোড়াও থেকে বের হয়ে আসার আহ্বানও জানানো হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। ফলে সংলাপের আহ্বান এখানে মূল্যহীন। 

তফসিল ঘোষণার সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকেও রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর করতে আলোচনার কথা বলা হয়, দেওয়া হয় সংলাপের তাগিদ। সিইসির এই বক্তব্য সরাসরি নাকচ না করলেও তফসিলের পর রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে কি না সেটা দলগুলোর নিজস্ব বিষয় বলেও গতকাল মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) তিনি বলেন, ‘তিনি (সিইসি) যে জায়গায় বসে আছেন, তার বক্তব্যে এ ধরনের আহ্বান থাকাটা খুব স্বাভাবিক। তিনি স্পেস রাখবেন কেন? স্পেস থাকলে সেখানে তাকে বলতে হবে। এমন কথা ওই পদে থাকলে আপনিও বলতেন। সেটার জন্য তো নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা স্থগিত থাকে না। সেটা হয়ে গেছে। এখন দলগুলো নিজেরা নিজেদের মধ্যে সংলাপ করবে কি করবে না, এটা তাদের ব্যাপার। উনি সিইসি হিসেবে একটা আহ্বান করার দরকার, সেটা করেছেন।’

বিবদমান পরিস্থিতিতে মুখোমুখি অবস্থানে থাকা দলগুলোর মধ্যম সারির নেতা এবং কর্মীরা মনে করেন সংলাপের সম্ভাবনা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। জাতীয় পার্টিও সরাসরি বলছে- সংলাপ নিয়ে তারা এখনও আশাবাদী। সোমবার ডোনাল্ড লুর চিঠি নিয়ে দলটির মহাসচিবের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠকের পরদিন মঙ্গলবার রাতে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। তার আগে তিনি দলীয় ফোরামে আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে সংলাপ না হলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ফলে সঙ্গত কারণেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জিএম কাদেরের ওই সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনীতিতে নানা ধরনের গুঞ্জন শুরু হয়। নির্বাচন ও সংলাপের বিষয় নিয়েও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জিএম কাদের কথা বলতে পারেন এমন বিষয়ও উড়িয়ে দেননি অনেকে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দলের চেয়ারম্যান সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন দাবি করে বৃহস্পতিবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সেখানে কী আলাপ হয়েছে আমি জানি না, তবে কোনো রাজনৈতিক আলাপ হয়েছে বলে মনে হয় না। আর সংলাপের বিষয় হচ্ছে- শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংলাপের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন, তারপরও আমরা সংলাপ নিয়ে আশাবাদী, কারণ রাজনীতিতে নাকচ করলেও অনেক সময় সিদ্ধান্ত রিভার্স করা হয়। আমরা এখনও আশাবাদী, কারণ প্রধান নির্বাচন কমিশনারও যেভাবে তফসিল ঘোষণা করেছেন তাতে একটু স্পেস রেখেছেন। যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়, সেই সুযোগ এখনও আছে। এই সুযোগটা সবাই কাজে লাগাবে আমরা সেই অপেক্ষায় আছি, দেখি কী হয়। আমরা তো অনেক আগে থেকেই বলে আসছি একটা সংলাপ দরকার। আমাদের দলের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সবাই সেটা বলে আসছেন।  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সংলাপের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বৃহস্পতিবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘সংলাপ করবে। কিন্তু সংলাপের পরিবেশ কই? সংলাপ করতে হলে তো আগে এর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যার নামে (বিএনপি মহাসচিব) চিঠি দেওয়া হয়েছে তিনিই তো জেলে।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যে চিঠি দিয়েছে, তার জবাব আমরা দিয়েছি। সেখানে এসব বিষয় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ 

প্রস্তাবিত সংলাপ নিয়ে প্রশ্ন করলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘গণতন্ত্রের ধারণার অন্তরালে সংলাপের যে মূল তত্ত্বটি কার্যকর, সেটি হচ্ছে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন। এই মানসিকতার অনুপস্থিতিতে সংলাপের কোনো প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ অর্থহীন। কাজেই বাংলাদেশের বর্তমান সংঘাতময় অসহিষ্ণু রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে সংলাপের প্রক্রিয়াটি বাস্তবে কতদূর কার্যকর করা সম্ভব, সেটা নিয়েও চিন্তাবিদরা প্রশ্ন তুলতে পারেন। এ অবস্থায় সংলাপের মহতী প্রচেষ্টাকে সামনে এগিয়ে নিতে গেলে যা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে আজ যারা সরকার পরিচালনা করছেন, তাদের মন-মানসিকতার আমূল পরিবর্তন, যাতে করে তারা যেন একটি একদলীয় শাসন ব্যবস্থার ধ্যানধারণা থেকে একটি খোলা মন নিয়ে মুক্ত বাতাসে বেরিয়ে আসতে পারেন। তাহলে হয়তো প্রস্তাবিত সংলাপের প্রচেষ্টা কিছুটা অর্থবহ হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় দ্বন্দ্ব নিরসনে সংলাপ সকলেরই কাম্য। কিন্তু এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, এই মুহূর্তে সরকার তড়িঘড়ি করে একদলীয় নির্বাচনের মানসে একতরফা নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণা করে যে শুধু সংলাপের সম্ভাবনাকে দূরীভূত করেছে তাই নয়, বরং দেশের সার্বিক রাজনীতির পরিবেশকেও আরও অনেক বেশি উত্তপ্ত ও সংঘাতময় করে তুলেছে।’

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বর্তমানে সংলাপে যাওয়ার কোনো পরিবেশ ক্ষমতাসীনরা রাখেনি। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপির মহাসচিব, সিনিয়র নেতারাসহ অন্তত ১৪ হাজার বন্দি রয়েছেন কারাগারে। ফলে সংলাপের আগে অফিস অবমুক্ত করা, নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এটা করতে হবে সরকারকেই।’

সংলাপের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির কোনো উদ্যোগ থাকতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতি এমন উদ্যোগ নিতে পারেন। তবে উদ্যোগটা হতে হবে বিশ্বাসযোগ্য। দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে সংলাপের উদ্যোগ নিলে তখন রাজনৈতিক দলগুলো বিবেচনা করবে সংলাপে যাওয়া যায় কি না।’ 

চলমান অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে বিএনপিকে উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক হারুন অর রশিদ। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, যেহেতু বিএনপি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান কোনো বিকল্প না রেখে বা স্পেস না রেখে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের মতো হটকারী অবস্থান নিয়ে নিজেদের জালে আটকে গেছে সেখান থেকে তাদের নিজেদের বের হতে হবে। এক্ষেত্রে জনগণের সামনে আগে তাদের নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে হবে। তারা যে নির্বাচন করার বিষয়ে আন্তরিক এবং আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায়, এটা বক্তব্য আকারে হলেও জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে সরকার বা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় তাদের আপত্তি থাকলে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অভিভাবক রাষ্ট্রপতির কাছে নিজেদের সেই লিখিত বক্তব্য বা সময় চেয়ে সরাসরি বক্তব্য তুলে ধরতে পারে। নির্বাচন বর্জনের পথে হাঁটলে বিএনপির জন্য আত্মঘাতী হবে। এই নির্বাচন শুধু আওয়ামী লীগ-বিএনপি নয়, পুরো জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সরকার বা নির্বাচন কমিশনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে দেশে-বিদেশে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য। এজন্য বিএনপির উচিত হবে আন্দোলনের অংশ হিসেবে হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদে অংশগ্রহণ করা। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা