× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নেতৃত্বের সংকট কাটাতে কী ভাবছে বিএনপি

বাছির জামাল

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:২২ এএম

আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:২৭ পিএম

নেতৃত্বের সংকট কাটাতে কী ভাবছে বিএনপি

আন্তর্জাতিক মহলের ‘আহ্বান ও সমালোচনা’র পরও ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের সময় থেকে সরকার যে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, তা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বিএনপিকে। মহাসমাবেশ পণ্ড করার প্রতিবাদে বিএনপি আন্দোলনের সর্বোচ্চ কর্মসূচি ‘হরতাল-অবরোধে’ চলে যাওয়ার পর সরকারের ‘আচরণ’ আরও কঠোর হয়েছে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে একেবারে মাঠপর্যায়ের সংগঠক নেতাকর্মীদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সাধারণ অনেক নেতাকর্মীকে তুলে নেওয়া হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে। এমন প্রেক্ষাপটে কেউ স্বীকার না করলেও বিএনপিতে নেতৃত্বের সংকট দেখা দিয়েছে।

এ অবস্থায় অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়া যাবে কি না, দলের মধ্যে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে আলাপকালে দলের বেশ কয়েকজন নেতা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে দলটি তাদের কৌশলে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে। কারণ অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচি দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে এটির কার্যকারিতা হারাতে পারে। এ ছাড়া এ কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে গেলে বিএনপি গত কয়েক বছর ধরে যে ‘গণসহানুভূতি’ অর্জন করেছে, তা হারানোর ঝুঁকিও রয়েছে।’ তারা মন্তব্য করেন যে, ‘ধারাবাহিকভাবে অবরোধ চলতে থাকলে মানুষ তা পছন্দ করবে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপির আন্দোলনের সময়ও তা-ই হয়েছিল।’

আপাতত বিকল্প কর্মসূচি নয়

অবরোধের বিকল্প খুঁজলেও এই মুহূর্তে কোনো বিকল্প কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি। কারণ নির্বাচন কমিশন চলতি মাসেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হতে পারে। এ কারণে তফসিল ঘোষণার বিষয়টিকে চাপের মুখে রাখতে অবরোধের বিকল্প আর কোনো কর্মসূচিও ভাবতে পারছে না বিএনপি। এ প্রসঙ্গে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।’ 

২৮ অক্টোবর সমাবেশের পর বিএনপি দেশব্যাপী সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হরতাল এবং এর পরদিন থেকে তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। বিএনপি ও এর সমমনা দল এবং জামায়াতে ইসলামীর ডাকে আজ রবিবার থেকে দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধও শুরু হবে।

দলটির কয়েকজন নীতিনির্ধারক জানাচ্ছেন, তারা এখন নতুন কিছু কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা করছেন। কর্মসূচির মধ্যে ভিন্নতা থাকবে। তবে সবকিছু এখনও আলোচনার পর্যায়ে। 

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘সরকার জনগণের ইচ্ছার কাছে মাথা নত না করা পর্যন্ত আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ 

৭ নভেম্বর পালন না-ও হতে পারে

গত বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ আন্দোলনের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সদস্যরা মনে করছেন, বিএনপি ও তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে বাদ দিয়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে সরকার ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ বানচাল করেছে। তারা আশঙ্কা করছেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখবে এবং নির্বাচনের আগে কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। এমন প্রেক্ষাপটে এবার বিএনপি ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করা থেকে বিরত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির একজন গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারক।

নেতৃত্বের সংকট

বিএনপির দুই কান্ডারির মধ্যে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং তার ছেলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু মহাসমাবেশের পরদিন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ২৪ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত ১২ দিনে মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপির দুই স্থায়ী কমিটির সদস্য, তিন যুগ্ম মহাসচিবসহ অন্তত ৫ হাজার ৮৪৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে দলটি।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা স্থায়ী কমিটির মোট সদস্য ১৯ জন। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। বর্তমানে তাদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হাসপাতালে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দেশের বাইরে রয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান পদত্যাগ করেছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ব্রেইনে অস্ত্রোপচারের পর সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে এখনও রয়েছেন বিশ্রামে। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া অসুস্থতার কারণে অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিয়মিত নন বয়সের কারণে। এছাড়া গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রয়েছেন আত্মগোপনে। নজরুল ইসলাম খান, ড. আব্দুল মঈন খান ও বেগম সেলিমা রহমান বর্তমানে বাইরে থাকলেও সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। বর্তমানে গ্রেপ্তার এড়াতে দলের অনেক নেতাই বাড়ি ছেড়ে দূরে অবস্থান করছেন। 

প্রথম সারির নেতারা জেলে থাকলে দ্বিতীয় সারির নেতারা নেতৃত্ব দেবেনÑ এমন সিদ্ধান্ত থাকলেও বিএনপিতে এখন নেতৃত্বের সংকট প্রকট। দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিয়মিত জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং আন্দোলন সমন্বয় করছেন।

এ প্রসঙ্গে ড. মঈন খান বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দলÑ শীর্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি তৃণমূল কর্মীরাও এ দলের শক্তির উৎস। এ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও মধ্যম ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে নিহিত রয়েছে নেতৃত্বের যোগ্যতা।’

সংকটের মুখে বিএনপির কৌশল 

প্রথম সারির নেতাদের অনুপস্থিতিতে দলে যাতে নেতৃত্বের সংকট না হয়, সেজন্য এরই মধ্যে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কারাগারের বাইরে থাকা স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এখন এ দলের নেতাকর্মীদের সমন্বয় করছেন। তিনি লন্ডন থেকে দলের হাইকমান্ডের পাঠানো বার্তা দলের নেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। তিনি যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে থাকা দলগুলোর সঙ্গে কর্মসূচি নিয়ে সমন্বয় করছেন। অন্যদিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গ্রেপ্তার হওয়ায় দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক বিষয়টাও এখন দেখছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। এরই মধ্যে তিনি ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে মত বিনিময় করেছেন। 

যেসব নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন, পরবর্তী ব্যক্তিকে ওই পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক এজিএম শামসুল হককে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, নরসিংদী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সালেহ চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব, কুষ্টিয়া জেলার সহসভাপতি কুতুব উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলায়ও এ রকম দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন মাঠে পালা করে নামছেন নেতারা। এখনই সব শক্তি ক্ষয় করার পক্ষে নন তারা। তফসিল ঘোষণার আগে-আগে ব্যাপক সমাগম করে বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, সেসবকে আন্দোলনের পথে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছে বিএনপি। তারা মনে করছেন, সরকার আবারও একটি একতরফা নির্বাচনের চিন্তা করছে। তবে আবার এমন নির্বাচন হলে সেটিকে আন্তর্জাতিক বিশ্ব অনুমোদন দেবে না বলে দাবি করেছেন দলটির নেতারা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা