× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আবার অবরোধের চিন্তা, সফলতা নিয়েও সংশয়

বাছির জামাল

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:২৫ এএম

আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:২৫ এএম

আবার অবরোধের চিন্তা, সফলতা নিয়েও সংশয়

আজ বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা ও বিএনপি মহাসচিবসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে পৃথকভাবে এই কর্মসূচির ডাক দেয় বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ তার মিত্র দলগুলো। জামায়াতে ইসলামীও আলাদাভাবে এই কর্মসূচি আহ্বান করে। তিন দিনের টানা কর্মসূচি ব্যাপক সহিংস রূপ নেয় এবং প্রাণহানির কারণ হয়। রাজপথে আবার ফিরে আসে আগুনসন্ত্রাস। এখন সবার নজরÑ আজ অবরোধ শেষে নতুন কী কর্মসূচি আসছে সেদিকে। এ নিয়ে ইতোমধ্যেই আন্দোলনরত দলগুলোর মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। একাধিক সূত্র বলছে, শুক্র-শনি দুই দিন বিরতি দিয়ে আবার টানা অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার কথাই ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। আন্দোলনরত প্রধান দল বিএনপির নীতিনির্ধারকরা টানা অবরোধেরই পক্ষে। তবে একই সঙ্গে এই অবরোধের সফলতা নিয়ে নানা প্রশ্নও তৈরি হয়েছে। ২০১৪ সালের সহিংস অবরোধের ব্যর্থতাও কেউ কেউ সামনে এনেছেন। ফলে অবরোধ বা টানা হরতাল দেওয়ার পক্ষেও কারো কারো মত রয়েছে। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার অবরোধ কর্মসূচি শেষ হবে। দলের নীতিনির্ধারকরা সবার সঙ্গে কথা বলে নতুন কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের পরদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকেও গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির অন্যান্য সদস্য এবং নির্বাহী কমিটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের নামে নতুন করে মামলা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে তাদের সবাই ‘আত্মগোপনে’ রয়েছেন। এই অবস্থায় যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর মতামত জানার পর বিএনপির নেতৃত্বের পরবর্তী ধাপে যারা আছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই নতুন কর্মসূচি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, কাল (বৃহস্পতিবার) গণতন্ত্র মঞ্চ বৈঠক করবে। ওই বৈঠকে কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে। 

তিনি বলেন, ‘আগামী শুক্রবার ও শনিবার দুই দিনের বিরতি থাকতে পারে। তারপর থেকে আমরা কর্মসূচিতে যাব। সেই দিন থেকে কী কর্মসূচি নেওয়া হবেÑ তা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। আবার অবরোধ দেওয়া হবে, না হরতাল আসবে, নাকি ঢাকা কেন্দ্রিক অন্য কোনো কর্মসূচিতে আমরা যাবÑ তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি আমরা।’

অবরোধ শেষ হওয়ার পর নতুন কর্মসূচি কি আসছে? এ ব্যাপারে বিএনপির কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি এখন কঠোর অবস্থানেই থাকবে। কঠোর কর্মসূচি থেকে পিছু হটার কোনো কারণ নেই। তাদের মতে ক্ষমতাসীনরাই তাদেরকে কঠোর হতে বাধ্য করেছে। 

তারা বলেন, অবরোধই হচ্ছে সর্বোচ্চ কর্মসূচি। রবিবার থেকে আবার টানা সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। আগামী সপ্তাহের পুরোটাজুড়েই অবরোধ থাকতে পারে। মাঝখানে কয়েকদিন বিরতি দিয়ে পরবর্তী সপ্তাহেও ফের অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। 

কর্মসূচির গতি নির্ভর করবে সরকারের আচরণের ওপর বলেও মন্তব্য করেন তারা।

বিএনপির আগের অবরোধ সফল হয়নি 

বিএনপির জন্য অবরোধ কর্মসূচি নতুন নয়। দলটি আট বছরেরও বেশি আগে একটানা অবরোধ কর্মসূচিতে ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর ২০১৫ সালে ওই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে টানা তিন মাস হরতাল-অবরোধ পালন করে দলটি। সে সময় মূলত অবরোধের ঘোষণা দেওয়ার পর এক পর্যায়ে এর সঙ্গে হরতালকেও যুক্ত করে দলটি।

ওই হরতাল-অবরোধ এক পর্যায়ে সহিংস রূপ নেয়। একের পর এক বাসে আগুন ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের মতো ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তখন একটানা হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে এক পর্যায়ে এটি তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। রাজপথেও অবরোধের সমর্থনে বিএনপি কিংবা বিশ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের আর দেখা যায়নি। এরপর দলটি আর অবরোধের কর্মসূচিতে যায়নি।

রবিবার বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যে হরতাল পালন করেছে, সেটি ছিল তিন বছর আট মাস পর হরতালের মতো কোনো কর্মসূচি।এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে হরতাল ডেকেছিল বিএনপি।

রাজপথে টিকে থাকাই চ্যালেঞ্জ বিএনপির

অতীতের এই অভিজ্ঞতা নিয়ে আবার টানা অবরোধ কর্মসূচিতে থাকলে তা সফল হবে কি নাÑ এ নিয়ে দলের মধ্যে এক ধরনের আলোচনা রয়েছে। অতীতে দেখা গেছে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে একটু কঠোর কর্মসূচি দিলেই বিএনপি নেতাকর্মীদের আর রাজপথে পাওয়া যায় না। গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের পরদিন (২৯ জুলাই) রাজধানীর চার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ছিল বিএনপির। কিন্তু ওই কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেদিন পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের বাধা ও হামলার মুখে শনিরআখড়া ছাড়া আর কোথাও বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তায় সেভাবে দাঁড়াতেই পারেননি। ফলে কর্মসূচি সফলতা পায়নি। 

এমন প্রেক্ষাপটে সরকারি দলের শক্তি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা মোকাবিলা করে পরিকল্পনা অনুযায়ী কর্মসূচি সফল করা এবং রাজপথে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করে টিকে থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা। 

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, সারা দেশের সমস্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ইতোমধ্যে এটা বুঝিয়ে দিয়েছে যে, এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে। হুমকি দিয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়ে, বন্দুকের নল থেকে বুলেট বের করে, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে অথবা জলকামান দিয়ে মানুষের গণতন্ত্রের স্পৃহাকে স্তব্ধ করা যাবে না। সরকার হয়তো শেষ চেষ্টা করবে। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস বলে, জনবিচ্ছিন্ন কোনো সরকার কখনও চিরদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না।’

সরকারের পদত্যাগের এক দফার দাবিতে বিএনপি যুগপৎভাবে বিভিন্ন দল ও জোটকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করে গত ১২ জুলাইয়ের পর থেকে। এরপর থেকে টানা তিন মাসে তারা ঢাকাসহ সারা দেশে রোডমার্চ, পদযাত্রা, গণমিছিল, কালো পতাকা মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, সমাবেশ-বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। এরপর গত ২৮ জুলাই তারা ঢাকায় মহাসমাবেশ করে পরদিন ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি করেছে। সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনসহ ৯টি স্থানে মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপিসহ সমমনারা। কিন্তু বিএনপির সমাবেশ শুরুর দেড় ঘণ্টার মধ্যে সংঘর্ষ ও হামলায় সেটা পণ্ড হয়ে যায়। এরপর থেকেই অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি ও তার মিত্ররা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা