প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৩৮ পিএম
রাজধানীতে দুর্গাপূজার সপ্তমীতে ঢাকেশ্বরী কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রবা ফটো
বিএনপি বিভক্তির রাজনীতি চায় না বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আজকে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেই সংকট কোনো দলের নয়, ব্যক্তির নয়। এই সংকট সমগ্র জাতির সংকট। আজকে দেশকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। এই বিভক্তির রাজনীতি আমরা চাই না। আমরা ঐক্যের রাজনীতি চাই। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মুক্তি হলে সেখানে মানুষের মুক্তি সম্ভব হবে।’
শনিবার (২১ অক্টোবর) রাতে রাজধানীতে দুর্গাপূজার সপ্তমীতে ঢাকেশ্বরী কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন এই আনন্দময় দিনে আমরা এই প্রার্থনা করি, আমাদের দেশে যেন শান্তি আসে। মানুষ যেন তাদের অধিকার ফিরে পায়। আমাদের গণতন্ত্র ফিরে আসে। মানুষ মুক্তি লাভ করে। একটি শান্তিময় প্রেমময় দেশ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তুলতে পারি।’
বিএনপি মহাসচিব ঢাকেশ্বরী পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানান।
ঠাকুরগাঁওয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিজের বড় হওয়া ও তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্গা পূজা বলেন, ঈদের কথা বলেন অথবা রমজানের কথা বলেন, আমাদের যারা বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করেন তাদের উৎসবের কথা বলেন…. আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার, কিন্তু উৎসব সবার, রাষ্ট্র সবার।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া, নেতা তারেক রহমান সাহেব তারাও এই বিশ্বাস করেন, উনারা যখনই সুযোগ পেয়েছেন এই বিষয়গুলোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তাদের অধিকার রক্ষার চেষ্টা করেছেন।’
হাজার বছর ধরে এই উৎসব উদযাপনের কথা উল্লেখ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সময়ে আমাদের লক্ষ্য ছিলো কোনো ধর্ম নয়, বর্ণ নয়, কোনো সম্প্রদায় নয়, সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের জন্য সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে নির্মাণ করা। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করেছি, কাজ করে চলেছি। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনের মধ্যেও একথা খুব পরিষ্কার বলা আছে, যে এই দেশটি কোনো নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীর জন্য নয়, নিদিষ্ট গোত্রের জন্য নয়, নির্দিষ্ট বর্ণের জন্য নয়। এটা এদেশে বসবাসকারী সব মানুষের জন্য।’
ঢাকেশ্বরী পূজা মণ্ডপে পৌঁছালে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মনিন্দ্র কুমার রায়, পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্র নাথ পোদ্দারসহ নেতৃবৃন্দ বিএনপি মহাসচিবকে স্বাগত জানান।
অসাম্প্রদায়িকতার বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বিএনপি সবসময়ই শুধু অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি না… অন্যান্য ধর্মের যে অধিকার সেই অধিকার রক্ষা করার জন্য আমরা চেষ্টা করি। তার প্রমাণ এই মণ্ডপ, এই উপাসনালয়। আপনাদের নিশ্চয় মনে থাকার কথা সাদেক হোসেন খোকা সাহেব যখন এই ঢাকার মেয়র ছিলেন তিনি প্রথম এই জমি উদ্ধারের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন এবং উদ্ধার করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘রমনা কালীমন্দির ধবংস করে দেয়া হয়েছিল, সেই কালি মন্দির আমাদেরই সরকার জমি উদ্ধার করে মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল।শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে যতগুলো অনাকাংখিত ঘটনা ঘটেছে সেই ঘটনাগুলোর সঙ্গে সবসময় দেখা গেছে যারা জড়িত আছেন তারা শাসকগোষ্ঠির সঙ্গে জড়িত।’
বিএনপি মহাসচিব পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানে সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মনিন্দ্র কুমার রায়, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ধর্ম বিষয়কসহ সম্পাদক অমলেন্দু অপু বক্তব্য রাখেন।
মহাসচিবের সঙ্গে মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় নেতা রমেশ দত্ত, মোশাররফ হোসেন খোকন, যুব দলের কামাল আনোয়ার আহমেদ, মিডিয়া সেলের শায়রুল কবির খান, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের তরুণ দেব, দেবাশীষ পাল, মিল্টন বৌদ্ধ, জয়দেব জয়, সুরঞ্জন ঘোষ প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন। পরে বিএনপি মহাসচিব বনানী মাঠে পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।