প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:১৮ পিএম
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৩৩ পিএম
বাকস্বাধীনতাকে বাধা দেওয়া হলে গণতন্ত্র থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের।
তিনি বলেন, ’বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রের অভাব। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্র চর্চা করার পরিবেশ নেই। দেশ এখন একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে মানুষের বাকস্বাধীনতা, ভাব প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে সরকার যেকোনো কাজকেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে পারবে।’
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পেশাজীবী সমাজের এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, ’গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে জনগণই দেশের মালিক। জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার গঠন করে। মালিক হিসেবেই জনগণ যদি সরকারের সমালোচনা করতে না পারেন, তাহলে সরকার রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ করলে তা ঠেকানোর উপায় কী? জনগণ যদি সরকারের সমালোচনা না করতে পারে, সেখানে আর গণতন্ত্র থাকতে পারে না। সরকারের সমালোচনাকে এখন রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থা কখনোই এক নয়। আইন করে যদি কথা বলার অধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়, সরকারবিরোধী আন্দোলনে বাধা দেওয়া হয়, তখন আর গণতন্ত্র থাকে না।’
তিনি বলেন, ’নির্বাচন নিয়ে আমরাও শঙ্কিত। দুটি পক্ষ যেভাবে শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের মাঝে সহিংসতার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। একটি দলের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, তারা জিততে না পারলে যেন তাদের মৃত্যু হবে। তাই তারা মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। আবার ক্ষমতায় না থাকতে পারলে ভবিষ্যতে বর্তমান সরকারের দুর্গতি হবে, এই ভেবে সরকারি দল ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দুটি দল মুখোমুখি হলেই বড় ধরনের সহিংসতা হতে পারে। দেশ ও জাতি ধ্বংসের পথে চলে যেতে পারে। দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। জেদ ও স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশকে ধ্বংস করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।’
পেশাজীবীদের উদ্দেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ’পেশাজীবীরা দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। রাজনীতিতে এলে দক্ষ কারিগর হিসেবে দেশের কল্যাণে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয়করণের মাধ্যমে পেশাজীবীদের রাজনীতিতে এনে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা পেশার দিকে খেয়াল না করে দলীয় কাজ-কর্মে বেশি মনোনিবেশ করছে। ফলে সাধারণ মানুষ পেশাজীবীদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ’পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে সৃষ্টি করে প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। জাতীয় পেশাজীবী সমাজ দলীয়করণের বিরুদ্ধে কাজ করবে। পদ নেই তারপরও সরকারের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢালাওভাবে পদোন্নতি দেওয়া মানে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া। গাইডলাইনের বাইরে পদোন্নতি দেওয়া হলে শৃঙ্খলার অভাব দেখা দেবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ’আওয়ামী লীগ ও বিএনপির টানাটানিতেই প্রমাণ হচ্ছে জাতীয় পার্টি ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জাতীয় পার্টিকে পাশে পেতে চাচ্ছে। দল দুটি ক্ষমতার জন্য অন্ধ হয়ে গেছে। একটি দল ক্ষমতায় যেতে চায় আর অপরটি ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। তাদের চিন্তা শুধু ক্ষমতা নিয়েই। দেশের জনগণের কথা তারা ভাবে না। জাতীয় পার্টিই জনগণের জন্য রাজনীতি করছে।’
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ’দেশের মানুষ ভালো নেই। মানুষের পেটে খাবার নেই, তারা উন্নয়ন দেখে ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের মাঝে হাহাকার উঠেছে। সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্য নাগালের মধ্যে দেখতে চায়।’ অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় পেশাজীবী সমাজের সভাপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ডা. মোস্তাফিকুর রহমান আকাশের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের প্রমুখ।