× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

টানা কর্মসূচি বিএনপির, আওয়ামী লীগ রাখবে পাহারা

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:০২ এএম

আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৫৮ পিএম

প্রবা

প্রবা

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এসব কর্মসূচি পালিত হবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ১৫ দিনব্যাপী এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল। গতকাল সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন। 

দলটির সিনিয়র নেতারা জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার আগে এসব কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে মূলত তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা রাখা এবং প্রস্তুতি সম্পন্ন করাই বিএনপির লক্ষ্য। বিএনপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই সময়কালে অভিন্ন কিংবা পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র দল ও জোটগুলোও। 

এদিকে কয়েক মাস ধরে বিএনপির যেকোনো কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। যদিও আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের কর্মসূচিগুলোকে বিএনপির পাল্টা হিসেবে মানতে নারাজ। গতকাল বিএনপির নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পর তাৎক্ষণিকভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। তবে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, বিএনপির এসব কর্মসূচি তাদের ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ। সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা রাজপথে সতর্ক পাহারায় থাকবে, যাতে আন্দোলনের নামে বিএনপি কোনো নাশকতা ঘটাতে না পারে। 

সমাবেশ ও রোডমার্চ করবে বিএনপি

গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করেছি। আমরাসহ আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।’ 

অসুস্থতার কারণে সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেননি মির্জা ফখরুল। তার অনুরোধে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নতুন কর্মসূচি পড়ে শোনান। ১৫ দিনব্যাপী কর্মসূচির আওতায় ৩ দিন বিরতি দিয়ে বাকি ১২ দিন মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। 

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ড. আব্দুল মঈন খান, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, তাইফুল ইসলাম টিপু ছাড়াও কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। 

গতকাল ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি সমাবেশ করবে বিএনপি। এর মধ্যে ২৬ সেপ্টেম্বর পেশাজীবীদের নিয়ে, ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলাদের নিয়ে, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের নিয়ে এবং ২ অক্টোবর কৃষকদের নিয়ে ঢাকায় সমাবেশ হবে। এসব সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বিএনপি মহাসচিব। এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুরের টঙ্গীতে, ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায়, ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নয়াবাজার ও আমিনবাজারে এবং ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সমাবেশ করবে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এসব সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। 

সমাবেশের পাশাপাশি পাঁচটি রোডমার্চও করবে বিএনপি। ২১ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে শুরু হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার ঘুরে সিলেটে গিয়ে শেষ হবে প্রথম রোডমার্চ। দ্বিতীয়টি ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে শুরু হয়ে ঝালকাঠি, পিরোজপুর হয়ে যাবে পটুয়াখালী পর্যন্ত। ২৬ সেপ্টেম্বর রোডমার্চ হবে খুলনা অঞ্চলে। ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে শুরু হওয়া রোডমার্চ নেত্রকোণা হয়ে কিশোরগঞ্জ যাবে। ৩ অক্টোবর কুমিল্লার রোডমার্চটি ফেনী হয়ে চট্টগ্রামে যাবে। 

এ ছাড়া ২২ সেপ্টেম্বর বাদ জুমা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দেশের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দোয়া মাহফিল হবে। 

কর্মসূচি ঘোষণার পর বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের জোট ও দলগুলো নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। যতগুলো তারা তাদের মতো করতে পারবে সেটা তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’

ইতোমধ্যে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে তারুণের‌্য রোডমার্চ করেছে। এই কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে গত ১২ জুলাই মাঠে নামে বিএনপি। শুরু থেকে তাদের সঙ্গে আছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, গণফোরাম, পিপলস পার্টি, এনডিএম ও লেবার পার্টির মতো দলগুলো। এখন পর্যন্ত তারা যুগপৎভাবে রাজধানীতে মহাসমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি, গণমিছিল, কালো পতাকা মিছিল ও পদযাত্রার মতো কর্মসূচি পালন করেছে। সর্বশেষ ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করেছে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো। 

সতর্ক থাকবে আওয়ামী লীগ

বিএনপির সদ্যঘোষিত কর্মসূচিকে দেশবিরোধী ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলেই মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তারা বলছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে নতুন ষড়যন্ত্র নিয়ে মাঠে নামতে চাইছে বিএনপি। তবে তাতে লাভ হবে না। আগের মতো এবারও ব্যর্থ হবে তারা। তবে আন্দোলনের নামে কাউকে শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্টের সুযোগ দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। 

গতকাল তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা কোনো কর্মসূচি না দিলেও বিএনপির কর্মসূচির দিনে মাঠে সরব ও সতর্ক অবস্থায় থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনের নামে যেন কেউ জানমালের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচিতে সতর্ক পাহারায় থাকার ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, প্রয়োজনে শান্তি সমাবেশ বা শোভাযাত্রার মতো কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো রাজপথে থাকবে। 

অবশ্য আগামী নির্বাচনের আগপর্যন্ত বিএনপিকে খালি মাঠে নামার সুযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে আওয়ামী লীগের। দলটির দায়িত্বশীল নেতাদের দাবি, নির্বাচন ঘিরে বিএনপি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চায়। অতীতের মতো আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ খুঁজছে তারা। আওয়ামী লীগের নেতারা সতর্ক থাকায় বিএনপি সেই সুযোগ পাচ্ছে না। নির্বাচন বানচাল করে তৃতীয় পক্ষকে দৃশ্যপটে আনার অপচেষ্টা চলছে দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতারা আরও বলেন, সেই চেষ্টা সফল হবে না। নেতাবিহীন দল আন্দোলন বা নির্বাচন কোনো কিছুতেই সফল হতে পারে না।  ১২-১৩ দিনের কর্মসূচি দিয়েও বিএনপি কোনো কিছু অর্জন করতে পারবে না। দেশে যথাসময়ে নির্বাচন হবে। অধিকাংশ দলও তাতে অংশ নেবে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে দল হিসেবে তাদের টিকে থাকা কঠিন। 

নতুন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ কেরানীগঞ্জ ও টঙ্গীতে পৃথক দুটি সমাবেশ করবে বিএনপি। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ গতকাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আজ পাল্টা কর্মসূচি হবে না। তবে কেউ যেন জানমালের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য ওই দুই এলাকায় নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থায় থাকবেন।

এ ছাড়া আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে ওই এলাকায় শান্তি সমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানা গেছে। 

২২ ও ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর বিএনপির কর্মসূচির আগে প্রয়োজনে ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, বিএনপির ১২-১৩ দিনের কর্মসূচি নতুন করে ষড়যন্ত্র ছাড়া ‍কিছু না। এসব ঠেকাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন। 

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘যেহেতু তারা (বিএনপি) সন্ত্রাসী পথে হাঁটে; তাই কর্মসূচি পালনের নামে যেন কোনো ধরনের জ্বালাও-পোড়াও করতে না পারে, সেজন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে। আওয়ামী লীগ কাউকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার সুযোগ দেবে না। যেখানে যখন যে ধরনের কর্মসূচি পালনের দরকার হবে সেখানে তখন সেভাবে কর্মসূচি পালন করা হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা