প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:২৭ পিএম
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৪২ পিএম
বর্তমান বিচারব্যবস্থা পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেক শোতে এক সেমিনারে তিনি এ দাবি করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা শুধু এটুকু বলতে চাই, বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র নেই। বিচারব্যবস্থা যেটা আছে তা পুরোপুরি তাদের (সরকার) হাতে চলে গেছে। কারণ হচ্ছে, তারা (আওয়ামী লীগ) গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলছি, আমরা যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা বলছি, সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না, শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না। ১৯৭৫ সালে তারাই একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।’
দেশে বর্তমানে একদলীয় শাসন চলছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কেউ কথা বলতে পারে না। আজকে যখন পুলিশ কর্মকর্তারা রাজনীতিবিদদের মতো কথা বলেন, যখন জজ সাহেবরা শপথবদ্ধ রাজনীতির কথা বলেন তখন আমরা সাধারণ মানুষেরা কোথায় যাব? কার কাছে যাব? আজকে বিচারব্যবস্থা যদি দলীয়করণ হয়ে যায় পুরোপুরিভাবে, মানুষ কোথায় যাবে?’
তিনি বলেন, ‘সেজন্যই আজকে এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই দাঁড়াতে হবে। শুধু বিচারব্যবস্থা নয়, আজকে যে রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, তা ভেঙে দিতে হবে। ভেঙে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামো নির্মাণ করতে হবে।’
এজন্য বিচারব্যবস্থার সমস্যার সমাধানে জুডিসিয়াল কমিশন গঠনসহ ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনার কথাও উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।
আইনজীবীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে সকলে জোটবদ্ধ হতে হবে। প্রত্যেককে আজ সোচ্চার হয়ে বলতে হবে, এ সরকার দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। তাই সরকারকে বলব, ইটস এনাফ, যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট ক্ষতি করেছ। এখন তোমরা দয়া করে পত্রপাঠ বিদায় হও, জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের একটা সরকার তৈরি করো।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যতই চেষ্টা করুক, বহু চেষ্টা করছে সব দিক দিয়ে, কিন্তু কোনো লাভ হবে না। মানুষ একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা এই সরকারকে আর দেখতে চায় না। আইনজীবীদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনাদের উদ্যোগকে (জোটবদ্ধ) সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়ে সমস্ত আইনজীবীদের নিয়ে এসে এই সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, জনগণ আপনাদের সঙ্গে আছে। ইনশাল্লাহ আমরা জয়ী হবই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল সংসদে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট পাস হয়েছে। যেটা এর আগে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে ছিল। যেটার ওপরে আমাদের সিভিল সোসাইটির মানুষেরা, সাংবাদিকরা, রাজনীতিবিদরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা, এমনকি ইউনাইটেড নেশনসের মানবাধিকার কমিশনও বিভিন্ন ধারা পরিবর্তন বলেছে।
মূলবস্তু পরিবর্তন ছাড়া শুধু নাম বদল করে সংসদে পাস হওয়া সাইবার নিরাপত্তা বিলের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
গত দুদিন আগে ঢাকা বারে আইনজীবীদের ওপর পুলিশি হামলা ও উল্টো আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনার নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।
সেমিনারে হাইকোর্ট ডিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী উচ্চ আদালতের বর্তমান অবস্থায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নিজেদের কষ্টের কথাও বলেন।
ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের উদ্যোগে ‘কারেন্ট স্ট্যাইট অব জুডিসিয়ারি : এ টুল টু অপরেস দি ওপজিশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের কো-কনভেনর অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের কনভেনর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দীন খান, সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, নূর মোহাম্মদ খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, ইসমাইল জবিউল্লাহ, এসএকে কামরুজ্জামান, জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া, আবদুর রশিদ, বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বদুরুজ্জামান বাদল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মীর হেলাল উদ্দিন, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।