× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস

‘আর্তি শুনতে না পেলে ভেসে যাবে স্বৈরাচারী সরকার’

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩ ২০:৩২ পিএম

আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৩ ২১:২৪ পিএম

নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে মানববন্ধন কর্মসূচি। প্রবা ফটো

নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে মানববন্ধন কর্মসূচি। প্রবা ফটো

‘গুম’ হওয়া পরিবারের আর্তি সরকার শুনতে না পেলে এর পরিণতি শুভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। বুধবার (৩০ আগস্ট) বিকালে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ মন্তব্য করেন তিনি।

ড. মঈন খান বলেন, ‘আজকে এখানে একটি বিষাদময় মুহূর্ত। এই অত্যাচারী জুলুমবাজ সরকারকে প্রশ্ন করতে চাই, কালের ক্রন্দন ধ্বনি শুনিতে কি পাও। কিছুক্ষণ আগে আপনারা দেখেছেন কোমলমতি শিশুরা মাইকের সামনে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে তাদের বাবার স্মৃতি নিয়ে। একজন বলেছে, এই গুম দিবস চাই না, আমি বাবাকে ফিরে পেতে চাই, বাবা দিবস পালন করতে চাই। কল্পনা করেছেন, একটি শিশু কি মর্ম যাতনায় কথাটি বলতে পারে। সরকারকে এর জবাব দিতে হবে। এই কালের ক্রন্দন ধ্বনি শুনতে না পেলে এই ক্রন্দনের বন্যায় আজকের স্বৈরাচারী সরকার ভেসে যাবে।’

বেলা ৩টা থেকে এক ঘণ্টার এই মানববন্ধনে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কের এক পাশে নেতাকর্মীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ মানবপ্রাচীর তৈরি করেন। ‘গুম’ হওয়া নেতাকর্মীদের সন্ধানের দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে নীরব মানববন্ধন করেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। ছিলেন গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও।

ড. মঈন খান বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার দিকনির্দেশনায় এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া কর্মসূচি অনুসরণ করে আমরা এখানে এই সরকারকে বিদায় দেব শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে। আমরা বাংলাদেশের মানুষের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করব ইনশাল্লাহ।’

তিনি বলেন, ‘দেশে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, এখানে একটি ‍সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, এখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, এখানে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, এ দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, এ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।’

এ ছাড়া বক্তব্য দেন গুম হওয়া পারভেজ হোসেনের ছোট মেয়ে হৃদি, মাহফুজুর রহমান সোহেলের ছোট্ট মেয়ে সাফা, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজীদা ইসলাম তুলি, হুমায়ুন কবির পারভেজের ছেলে শাহরিয়া, মাজহারুল ইসলাম রাসেলের বড় ভাই লোটাস, মিরাজ খানের স্ত্রী আমেনা আখতার বৃষ্টি প্রমুখ। তাদের দুঃখ ও কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বারবার অশ্রুসজল হয়ে পড়তে দেখা যায়। 

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে গুম হওয়া নেতাকর্মীদের সন্ধানের দাবিতে এই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান।

উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরাফত আলী সপু, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, যুবদলের সুলতান সালা্উদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ মানববন্ধনে বক্তব্য দেন।

আন্তর্জাতিক এই দিবস উপলক্ষে রাজধানী ছাড়াও সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে দলের নেতাকর্মীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেন।

চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিল শুরু হওয়ার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রমুখ। সভা শেষে বিকাল সাড়ে চারটার দিকে নাসিমন ভবনের সামনে থেকে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিলটি শুরু হয়। এ সময় লাভলেইন মোড় ও কাজীর দেউড়ি মোড়ে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নেয় পুলিশ। দুই পাশে পুলিশ ব্যারিকেডের মধ্যে নূর আহমদ সড়কের দুই পাশ ঘুরে মিছিলটি শেষ হয়। এতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। গুম ও খুনের শিকার নেতাকর্মীদের ছবি নিয়েও অনেকে মিছিলে যোগ দেন।

এ ছাড়া সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, রাজশাহীসহ অন্য মহানগর ও জেলায় মুখে কালো পতাকা বেঁধে মিছিল হয়েছে। 

মায়ের ডাকের স্মরণ অনুষ্ঠান

সকালে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মায়ের ডাক নামে একটি সংগঠন।

এতে মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম আঁখির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী প্রমুখ। 

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডার হাইকমিশনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। 

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই সরকার যত দিন আছে তত দিন পর্যন্ত গুম হয়ে যাওয়া মানুষের কোনো খবর পাওয়া যাবে না। আপনারা কষ্ট পেতে পারেন, তবে পাঁচ বছর আগেও এই কথা বলেছিলাম এবং আজও একই কথাই বলছি।’

সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা কোনো প্রতিশোধের রাজনীতি করি না। কিন্তু যারা খুনি, ডাকাত এবং প্রতিটি গুমের সঙ্গে দায়ী তাদের বিচার করা হবে। দেশকে আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক ধারায় নিয়ে যাব।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ’শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষকে গুম করা হয়েছে। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য তাদের হত্যা করা হয়েছে। ভিন্নমতের মানুষদের মনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার জন্য এসব করা হয়েছে। যদি আমরা গুমের বিচার চাই, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই, তাহলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশে বাংলাদেশের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে দেউলিয়া হতে যাচ্ছে এটা ঠেকানোর উপায় এই সরকারের নেই। তারা যতই বলুক তারা অভিজ্ঞ, বর্তমান বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে না। এই সরকার ক্ষমতায় থাকা মানে আরও গভীর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে যাওয়া।’

নুরুল হক নুর বলেন, ’সব সমস্যার সমাধান একজন। আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। তাই বিরোধী দলের যেসব ভাই রাজপথে আন্দোলন করছেন তাদের এক থাকতে হবে। হয় লড়ো, না হয় মরো।’

আরও বক্তব্য দেন বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) স্থায়ী কমিটির সদস্য তানিয়া রব, গুমের শিকার হুম্মাম কাদের চৌধুরী, আব্দুল বাসেদ মারজান, মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি প্রমুখ। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা