প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩ ২০:১৭ পিএম
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৩ ২১:০৮ পিএম
সফরপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। প্রবা ফটো
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের প্রধান হয়ে ভারত সফর নিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এ অঞ্চলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাস দমনের স্বার্থে অতীতের মতো আগামীতেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ’ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক উঁচুতে। দ্বিপক্ষীয় সফরের মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় পার হচ্ছে। এটি দলীয় সফর। জেপি নাড্ডা (কেন্দ্রীয় বিজেপি সভাপতি) জানিয়েছেন, তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে অতীতের মতো সামনেও একসঙ্গে কাজ করবে। আমরাও তাদের বলেছি, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা ভারতকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য বলেন, ’ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ, মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা অর্থ দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে। আর বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনেক উঁচুতে।’
আব্দুর রাজ্জাক জানান, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখতে চায় বিজেপি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে বলেও আশাবাদী তারা। তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সফরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জঙ্গি দমন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে চায় বিজেপি। আওয়ামী লীগকে তারা গুরুত্ব দেয়। দুই রাজনৈতিক দল একসঙ্গে কাজ করলে ভবিষ্যতে দুই দেশের আরও ভালো হবে বলে তারা মনে করে।’
তিনি আরও বলেন, ’চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অংশীদারত্বমূলক, কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আত্মিক। তবে জামায়াত এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।’
বাংলাদেশে কী হচ্ছে, ভারত তা জানে উল্লেখ করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ’নির্বাচনে ভারতের কিছু করার নেই। তবে তারা মনে করে, সংবিধান অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।’
ভারত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে জানিয়ে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ’রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জঙ্গিবাদ দমনে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ভারত।’
সংবাদ সম্মেলনে ভারত সফরের বর্ণনা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জানান, ৭ আগস্ট সকালে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রেসিডেন্ট জগৎ প্রকাশ নাড্ডার সঙ্গে তার বাসভবনে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিষয়ের মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জঙ্গিবাদ দমন ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এ ছাড়া দুপুরে বিজেপির প্রধান কার্যালয়ে বিজেপির জেনারেল সেক্রেটারি বিনোদ তড়ের সঙ্গে বৈঠক হয়। বিকালে ভারতের পার্লামেন্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয় শঙ্করের সঙ্গে তার দপ্তরে বৈঠক হয়। ৮ আগস্ট ভারতের পার্লামেন্টের লিডার অব দি আপার হাউস (রাজ্যসভা) ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং ভারতে জি-২০ সম্মেলনের কো-অর্ডিনেটর ও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গেও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর জি-২০ ফোরামে ভারতের কো-অর্ডিনেটর হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে অনুষ্ঠিত পৃথক বৈঠকে তিনি আগামী ৯ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ভারতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধিদলের সদস্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ’রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখতে একযোগে কাজ করবে ভারত ও বাংলাদেশ। এ অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকায় সন্তুষ্ট তারা।’
তিনি আরও বলেন, ’রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেন স্থিতিশীল থাকে, সেটি চায় ভারত। ১০ ট্রাক অস্ত্র আনা হয়েছে বিএনপির আমলে। ওই আমলে তারা উদ্বিগ্ন ছিল বলে জানিয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে সংখ্যালঘুরা ভালো আছে। উগ্রবাদীদের পাশের দেশকে ক্ষতি করতে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেবে না বর্তমান সরকার, এই ঘোষণাতে সন্তুষ্ট ভারত।’
বিজেপির আমন্ত্রণে ৬ থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ভারত সফর করে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলটি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে সফরকারী প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কার্যনির্বাহী সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান ও দলীয় সংসদ সদস্য আরমা দত্ত।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, দলীয় সংসদ সদস্য আরমা দত্ত প্রমুখ।