× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রহস্যাবৃত জামায়াত

বাছির জামাল

প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৩ ০৮:৩৬ এএম

আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৩ ০৮:৩৮ এএম

রহস্যাবৃত জামায়াত

বিএনপি নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে নেই, আবার ক্ষমতাসীনদের সঙ্গেও নেই- তাহলে কোথায় আছে জামায়াতে ইসলামী? একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এই দলটি এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণাও দিচ্ছে না। সামনে যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তখন নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনহীন এই দলটির আচরণ কিছুটা রহস্যাবৃত। সরকারের সঙ্গে তাদের গোপন কোনো সমঝোতা হয়ে গেছে এমন আলোচনাও গত কয়েক মাস ধরে রাজনীতির মাঠে চাউর আছে। যদিও জামায়াত ও সরকারি দলের নেতাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হচ্ছে- এটা সঠিক নয়। তারপরও পুরোপুরি রহস্যের মোড়ক যেন খুলছে না।

রহস্যাবৃত জামায়াতকে নিয়ে দেশের রাজনীতিতে তাই আলোচনারও অন্ত নেই। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আপাতত বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে নেই তারা। সরকারের সঙ্গে তাদের ‘সমঝোতা’ আছে- সুধী মহলে এমন আলোচনাও থেমে নেই। সরকারের সঙ্গে জামায়াতের এই সংযোগের সূত্র হিসেবে দীর্ঘ প্রায় এক দশক পর গত ১০ জুন ঢাকায় জামায়াতের সমাবেশের উদাহরণ তুলে ধরা হচ্ছে। বাস্তবে দেখা যায়, ওই সমাবেশের পরই সারা দেশে জামায়াতের যেসব কার্যালয় বন্ধ রয়েছে, সেগুলো খোলার প্রক্রিয়া চলছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজও জামায়াত এগিয়ে রাখছে বলে জানা যায়।

তবে দলটির সিনিয়র নেতারা এসব মানতে নারাজ। তাদের মতে, ঢাকার সমাবেশের অনুমতি ‘ন্যাচারালি’ হয়ে গেছে। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয়ে থাকলে পরে সিলেট ও চট্টগ্রামের সমাবেশের অনুমতি কেন পাওয়া গেল না- এমন প্রশ্ন তাদের‌। তা ছাড়া গত ৭ জুলাইয়ের পর সারা দেশে এ পর্যন্ত একশ জনের মতো জামায়াত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটিকে সমঝোতার লক্ষণ বলা যায় না বলে দাবি দলটির ওই নেতাদের।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার পর থেকে প্রকাশ্যে জামায়াতের তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি। বিশেষ করে ২০১৩ সালে ৪ মার্চ সমাবেশের পর জামায়াতকে আর মাঠে দেখা যায়নি। প্রশাসনিক নানা চাপ ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে গোপনে। এ ছাড়া বর্তমানে জামায়াতের নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনও নেই। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দলটির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের বিচার, দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। একই কারণে দলটিকে নিষিদ্ধ করারও দাবি আছে। রাজধানীর মগবাজারে দলটির কেন্দ্রীয় ও পুরানা পল্টনে মহানগর কার্যালয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলো অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে। প্রকাশ্য রাজনীতিতে এই দীর্ঘ অনুপস্থিতি জামায়াতকে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলেছে। বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে যে উত্তাপ তৈরি হয়েছে, তাতে জামায়াত অনেকটাই আলোচনার বাইরে চলে যায়। এমন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতেই দলের নীতিনির্ধারকরা স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও তৎপরতা দেখাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এরপরই বিভিন্ন সময় পুলিশের অনুমতি ছাড়াই জামায়াতকে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা গেছে। পরে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি পায় তারা। এতে দীর্ঘদিনের মিত্র এই দলটিকে নিয়ে বিএনপিতে সন্দেহ দেখা দেয়। এ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন মন্তব্যও করেছেন যে, সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের কারণেই ওই সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে তারা। মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য নিয়ে জামায়াত কড়া প্রতিবাদ দিলে বিএনপির সঙ্গে তাদের টানাপড়েন শুরু হয়। এরপর জামায়াত প্রসঙ্গটি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও উত্থাপিত হয়, যদিও এ নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানা গেছে।

ঢাকায় সমাবেশ করতে পারার ‘সফলতা’ থেকে চলতি মাসে পাঁচ বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় জামায়াত। এরপর আগস্ট মাসে কয়েকটি জেলা ও বিভাগ হয়ে ঢাকায় আরও বড় সমাবেশ করার পরিকল্পনা করে দলটি। কিন্তু সিলেটের মতো শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামেও সমাবেশের অনুমতি পাওয়া যায়নি। তাদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচিগুলো এখন অনিশ্চয়তায় ডুবে আছে।

এ প্রসঙ্গে জামায়াতের প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ গতকাল বলেন, ‘একটিমাত্র সমাবেশের সাফল্য দেখে বলা যায় না যে, সরকারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। আসলে ১০ জুনের সমাবেশের অনুমতি যোগাযোগের ভিত্তিতে হয়নি, এটা ন্যাচারালি হয়ে গেছে। ওই সমাবেশের পর যারা বলছেন, সরকারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে- সেটা তাদের রাজনৈতিক মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। সিলেট ও চট্টগ্রামে তো সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না। সরকারের সঙ্গে আমাদের আঁতাত হয়ে থাকলে তারা এসে প্রমাণ দিয়ে যাক।

জামায়াত নেতাদের মতে, নির্বাচনের আগে তাদের দলের কর্মসূচির ওপর অনেকের দৃষ্টি থাকবে। এর মধ্য দিয়ে দলটি পৃথক কর্মসূচি দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হবে।

এদিকে বিএনপি তার মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে গত ১২ জুলাই ঢাকায় সরকার হটাতে এক দফা আন্দোলনের যে ঘোষণা দিয়েছে, তার সঙ্গেও জামায়াত নেই। গত ১৫ জুলাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এমন কথাই বলেছেন। তিনি জানান, তাদের আমিরের গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিএনপির নিশ্চুপ থাকার বিষয়টিতে দলের কর্মীরা আহত হয়েছেন। এ কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকলেও তারা বিএনপির সঙ্গে একই পথে নেই। 

তবে এ ব্যাপারে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন মতিউর রহমান আকন্দ। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কর্মসূচি দেওয়ার কারণে তারা বিএনপির সঙ্গে মাঠে নামছেন না। যদিও বিএনপির নেতৃত্বে গত বছর ডিসেম্বরে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হলে দুটি কর্মসূচিতে জামায়াতও অংশ নেয়।

এদিকে সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলো বন্ধ থাকার বিষয়ে মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আসলে অফিসে গেলেই আমাদের নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এজন্য আমরা অফিসে যাই না। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ আরও কয়েকটি অফিসেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিসে কিছু স্টাফ রয়েছে, যারা অফিস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, জামায়াতের মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে, দেয়ালে রঙ করা হয়েছে। এটি ঢাকা মহানগর উত্তরের আওতায় পড়েছে। এ প্রসঙ্গে উত্তরের প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার বলেন, পাশের একটি মসজিদকে জায়গা দিতে গিয়ে অফিসের কাঠামোতে পরিবর্তন করতে হয়। এজন্য অফিসটিকে রঙ করতে হয়েছে। আসলে অফিসে আমাদের নেতাকর্মীরা যেতে পারেন না। সারা দেশেই একই অব্স্থা।

জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, নিবন্ধন না থাকলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি। তারা নিজস্ব জরিপ চালিয়ে নিশ্চিত হয়েছে, দেশের মোট ভোটারের প্রায় ২৭ শতাংশ ভোট তাদের রয়েছে। গত ১৫ বছরের মধ্যে এবং দলের প্রথম সারির নেতাদের ফাঁসির পর তাদের ১০ শতাংশের বেশি ভোট বেড়েছে। তবে এই হিসাবের পুরোটাই তাদের নিজের জরিপের ভিত্তিতে দেওয়া।

সম্প্রতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের একটি বক্তব্যের পর সরকারের সঙ্গে সংসদীয় আসন নিয়ে জামায়াতের বোঝাপড়ার বিষয়টি সামনে আসে। জিএম কাদের বলেছেন, ‘রাজনীতির মাঠে কথা আছে, আওয়ামী লীগ জামায়াতকে বিভিন্ন নামে কিছু সিট দেবে। আমাদেরও কিছু সিট দেবে। আমাদের বলা হয়, আপনারা আরও সংগঠিত হন, আরও বেশি সিট দেওয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের কার্যক্রম থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। তবে আমরা মনে করি, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না- এটা আমাদের সিদ্ধান্ত। প্রস্তুতি থাকলেও যাব না, না থাকলেও যাব না। নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলেই তো প্রস্তুতির প্রশ্ন আসে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার গতকাল শুক্রবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে ধর্মীয় ভোটের বাজারে পরিবর্তন এসেছে। যারা ধর্মীয় লাইনে ভোট দেয়, তাদের রুচিতে পরিবর্তন আসা শুরু হয়েছে। চরমোনাইর পীরের দল কিন্তু বিভিন্ন নির্বাচনে ভালোই ভোট পাচ্ছে। এটা জামায়াতকে ভোগাবে। তা ছাড়া জামায়াতের হঠাৎ রাজপথে আসাটা বিএনপিকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। এর পেছনে সরকারের হাত কতটুকু- এ ব্যাপারে কিছু বলব না। কারণ আমার কাছে এ নিয়ে পরিষ্কার কোনো তথ্য নেই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা