প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৩ ১৭:২৪ পিএম
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৩ ১৮:০৭ পিএম
রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে করণীয় নিয়ে মতবিনিময় সভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্য বেশ কয়েকটি দলের নেতারা। প্রবা ফটো
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে জাতীয় সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
শনিবার (২৪ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে করণীয়’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাই দলীয় সরকার, সামরিক সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাসমর্থিত সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয় নাই। তাই আমরা বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, আলেম-ওলামাগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই। বর্তমানে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং বিগত পদ্ধতির নির্বাচনগুলোর ত্রুটির কারণে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নিবন্ধিত সকল দলের পরামর্শক্রমে এবং অংশগ্রহণে জাতীয় সরকার গঠন করে তার অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন চাই। এমন হলে নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং সকল দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’
মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ ছাড়া নিবন্ধিত অধিকাংশ দলকে আমন্ত্রণ জানায় ইসলামী আন্দোলন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে সেখানে যাননি।
বিএনপির পক্ষে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সভায় যোগ দেন। জাতীয় পার্টি থেকেই কেউ সভায় যোগ দেননি। তবে, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামীকে দলীয়ভাবে আমন্ত্রণ জানানো না হলেও দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান মাদানীকে দাওয়াত দেওয়া হয়। তিনি যোগ দেন মতবিনিময় সভায়।
মতবিনিময় সভায় বিএনপি নেতারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে ধরেন। তবে, রেজাউল করীম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে বিএনপিও কারচুপির অভিযোগ তোলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় না, নিরপেক্ষও হয় না।’
জাতীয় সরকারের রূপরেখা তুলে ধরে রেজাউল করীম বলেন, ‘আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ ও গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠিত হবে। যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’
তার দাবি, সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। বর্তমান মন্ত্রিসভার কেউ নির্বাচনকালীন সরকারে থাকতে পারবেন না। তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচনের আয়োজন এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে।
চরমোনাই পীর আরও বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজনের পাঁয়তারা চলছে। মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা চলছে। আগেও বলেছি, এখনও বলছি– দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনেই ইসলামী আন্দোলন অংশ নেবে না।’
মতবিনিময় সভায় আরও যোগ দেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মনজু, মুসলিম লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, খেলাফতে রব্বানী পার্টির চেয়ারম্যান মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আবদুল লতিফ মাসুম ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ।